বাজেটে করদাতাদের আরও ছাড়, কালো টাকায় থাকছে কড়া শাস্তির নিদান

এক দিকে নোট বাতিলের ক্ষতে মলম দিতে বাজেটে কর ছাড়। অন্য দিকে ব্যাঙ্কে টাকা জমা দেওয়ার সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও পুরনো নোট রেখে দিলে কড়া শাস্তি। এমন জোড়া ভাবনাই এখন ঘোরাফেরা করছে সরকারের অন্দরে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬ ০৩:৩১
Share:

এক দিকে নোট বাতিলের ক্ষতে মলম দিতে বাজেটে কর ছাড়। অন্য দিকে ব্যাঙ্কে টাকা জমা দেওয়ার সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পরেও পুরনো নোট রেখে দিলে কড়া শাস্তি। এমন জোড়া ভাবনাই এখন ঘোরাফেরা করছে সরকারের অন্দরে।

Advertisement

কালো টাকার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে নরেন্দ্র মোদী পুরনো ৫০০-১০০০ টাকার নোট বাতিল করেছিলেন। কিন্তু তার জন্য যে মানুষকে ভোগান্তি সইতে হয়েছে, তা সরকারের অজানা নয়। এ নিয়ে ক্ষোভ জমা হয়েছে বিজেপির অন্দরেও। দলের অনেকের আশঙ্কা, এর ফলে আসন্ন বিধানসভা ভোটগুলিতে ধাক্কা না খেতে হয়! এই অবস্থায় মানুষের মন জিততে ব্যক্তিগত করের ক্ষেত্রে খানিক সুরাহা দিতে চাইছে মোদী সরকার। ব্যবসায় মন্দা নিয়ে শিল্প মহলের ক্ষোভ কমাতে কর্পোরেট করের হারও কমানোর কথা ভাবা হচ্ছে। সরকারের ভাবনার ইঙ্গিত দিয়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিই আজ কর কমানোর পক্ষে সওয়াল করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘অর্থনীতির ভিত বড় করতে হবে। তার জন্য করের বোঝাও কমানো দরকার।’’

তবে ছাড় দিতে গিয়ে কালো টাকার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পিছু হটা হচ্ছে এমন ধারণার যাতে জন্ম না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক সরকার। সেই কারণে নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত আরও কড়া ভাবে প্রয়োগ করার কথা ভাবা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ৩০ ডিসেম্বর, ব্যাঙ্কে পুরনো নোট জমা করার শেষ দিনের পরেও কারও কাছে বাতিল ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট পাওয়া গেলে তাঁকে শাস্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হতে পারে।

Advertisement

কী ধরনের শাস্তির ভাবনা রয়েছে সরকারের অন্দরে? বলা হচ্ছে, ৩০ ডিসেম্বরের পরে কোনও ব্যক্তি সর্বোচ্চ কত মূল্যের পুরনো নোট রাখতে পারবেন, তা বেঁধে দেওয়া হতে পারে। কারও কাছে সেই সীমার অতিরিক্ত বাতিল নোট মিললে তাঁকে ওই নোটের মূল্যের পাঁচ গুণ অথবা ৫০ হাজার টাকার মধ্যে যেটা বেশি, তা জরিমানা দিতে হবে। জরিমানার পাশাপাশি ফৌজদারি মামলা হবে কি না, তা এক জন ম্যাজিস্ট্রেট ঠিক করবেন। সরকারি সূত্রের খবর, অর্ডিন্যান্স এনে বা নির্দেশিকা জারি করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কিন্তু সরকারের এই ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিস্তর। এমনিতেই খোদ প্রধানমন্ত্রী ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাঙ্কে বাতিল নোট জমা দেওয়া যাবে বলে আশ্বাস দেওয়ার পরে আচমকা নোট জমা দেওয়ার সময়ে জবাবদিহি করার নির্দেশিকা জারি করে বিতর্কে জড়িয়েছিল অর্থ মন্ত্রক। সমালোচনার মুখে সেই নির্দেশিকা থেকে সরে আসতে হয়েছে কেন্দ্রকে। ফের নরেন্দ্র মোদীই ৮ নভেম্বর নোট-নাকচের সিদ্ধান্ত ঘোষণার সময় বলেছিলেন, ৩১ মার্চ পর্যন্ত পুরনো নোট রিজার্ভ ব্যাঙ্কে জমা দেওয়া যাবে। তা হলে প্রশ্ন হল, ৩০ ডিসেম্বরের পরে কারও কাছে পুরনো নোট মিললে তাঁকে দোষী বলে গণ্য করা হবে কী ভাবে! এমন তো হতেই পারে যে তিনি প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস মোতাবেক রিজার্ভ ব্যাঙ্কে টাকা জমা দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন। কিংবা, কোনও মধ্যবিত্ত খারাপ সময়ের জন্য জমিয়ে রাখা টাকা হঠাৎ করে খুঁজে পেয়েছেন।

বিরোধীরা বলছেন, নোট নাকচের সময়ে যে লাভের কথা সরকার ভেবেছিল, দেখা যাচ্ছে তার প্রায় কিছুই ঘরে আসছে না। ৮ নভেম্বরের আগে পুরনো নোটে ১৫.৪৪ কোটি টাকা ছিল বাজারে। সরকারের ধারণা ছিল, এর মধ্যে ৩ থেকে ৪ লক্ষ কোটি টাকা আর ব্যাঙ্কে জমা পড়বে না। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে পরিমাণটা দেড় লক্ষ কোটি টাকারও কমে এসে দাঁড়িয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, ব্যাঙ্কে পুরনো নোট জমা পড়ার শেষ ক’দিনে এবং তার পর রিজার্ভ ব্যাঙ্কে যাতে আর বিশেষ কেউ না যান, তা নিশ্চিত করতে উঠেপড়ে লেগেছে সরকার। যাতে খানিকটা মুখরক্ষা হয়। তাই গোড়ায় জবাবদিহি এবং তার পর এমন শাস্তির ভাবনা।

সরকারি সূত্র বলছে, মেয়াদ শেষের পরেও বাতিল নোটের আদানপ্রদানের মাধ্যমে সাময়িক ভাবে একটা সমান্তরাল অর্থনীতি চলতে পারে বলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আশঙ্কা রয়েছে। তাই তারাই কড়া শাস্তির সুপারিশ করেছে। চলতি সপ্তাহেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিষয়টি উঠতে পারে। তবে নোট নিয়ে নাজেহাল আমজনতার একাংশের মনে যে অসন্তোষ জমা হয়েছে, তা বিলক্ষণ বুঝতে পারছেন সরকারের কর্তারা। সে জন্য কর ছাড় নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, আয়কর ও কর্পোরেট কর, দুই ক্ষেত্রেই বোঝা কমানোর কথা ভাবা হচ্ছে। এখন আয়কর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা আড়াই লক্ষ টাকা। তার পর থেকে আয়ের উপর ১০% হারে কর নেওয়া শুরু হয়। করের হার বদল না হলেও ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা কিছুটা বাড়তে পারে। এর মাধ্যমে মূলত মধ্যবিত্তদেরই সুরাহা দেওয়াই লক্ষ্য মোদী সরকারের।

কর্পোরেট করের হার গত বাজেটেই ধাপে ধাপে ৩০% থেকে কমিয়ে ২৫% করার কথা ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। নোট বাতিলের ফলে নগদ জোগান কমে যাওয়ায় শিল্প সংস্থাগুলির ব্যবসা মার খেয়েছে। সে কথা ভেবেই আসন্ন বাজেটে কর্পোরেট করের হার অনেকটা কমানোর পরিকল্পনা রয়েছে জেটলির।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন