National

সরকারি চাপে জমা ৬৫ হাজার কোটি কালো টাকা

সরকারি ‘ওষুধে’ কাজ হয়েছে, বোঝা গেল! মোদী সরকার ‘সৎ’ হওয়ার একটা শেষ সুযোগ দিয়েছিলেন। তাতে এত দিন যাঁরা লুকিয়ে-চুরিয়ে কালো টাকা জমিয়েছিলেন, তাঁদের একটা অংশ জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের চোরাগোপ্তা কী পরিমাণ কালো টাকা জমানো ছিল। আর তার পরিমাণটাও খুব সামান্য নয়। ৬৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০১৬ ১৭:৫৭
Share:

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।

সরকারি ‘ওষুধে’ কাজ হয়েছে, বোঝা গেল!

Advertisement

মোদী সরকার ‘সৎ’ হওয়ার একটা শেষ সুযোগ দিয়েছিলেন। তাতে এত দিন যাঁরা লুকিয়ে-চুরিয়ে কালো টাকা জমিয়েছিলেন, তাঁদের একটা অংশ জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁদের চোরাগোপ্তা কী পরিমাণ কালো টাকা জমানো ছিল। আর তার পরিমাণটাও খুব সামান্য নয়। ৬৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। একেবারে খাতায়-কলমে লিখিত ভাবে ৬৪ হাজার ২৭৫ জানিয়েছেন, তাঁরা সকলে মিলে মোট ওই পরিমাণ টাকা লুকিয়ে-চুরিয়ে এ-ধার, ও-ধারে জমিয়ে রেখেছিলেন। সেটাই তাঁদের কালো টাকা। কারণ, ওই পরিমাণ টাকার ওপর তাঁরা কোনও আয়কর দেননি। আরও সঠিক ভাবে বলতে হলে, তাঁরা ৬৫ হাজার ২৫০ কোটি টাকার ওপর আয়কর এত দিন ফাঁকি দিয়েছিলেন। মোদী সরকারের দেওয়া শেষ সুযোগ- ‘আয়কর ঘোষণা প্রকল্প’-এ সাড়া দিয়েই ওই কালো টাকা জমানোর কথা কবুল করেছেন আয়করদাতারা।

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি শনিবার ওই বিপুল পরিমাণ কালো টাকা ‘উদ্ধারে’র খবর দিয়ে বলেছেন, লুকিয়ে-চুরিয়ে, করফাঁকি দিয়ে জমানো টাকার হদিশ দেওয়ার জন্য আয়করদাতাদের সরকার চার মাস সময় দিয়েছিল। সেই সময়সীমা ফুরিয়ে যাওয়ার পরেও যাঁরা কালো টাকার পরিমাণ এখনও জানাননি, তাঁদের বিরুদ্ধে যথা সময়ে যতটা সম্ভব কড়া আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে যেহেতু আয়কর দফতরের হিসেবনিকেশ পুরোপুরি শেষ হয়নি, তাই ইচ্ছুক আয়করদাতাদের সংখ্যাটা আরও বাড়বে বলে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর বিশ্বাস।

Advertisement

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘আয়করদাতাদের ঘোষণা মোতাবেক এটুকু বলা যায়, প্রত্যেকেই গড়ে এক কোটি টাকার মতো আয়ের ওপর সরকারকে এত দিন কর-ফাঁকি দিয়েছিলেন। কারও ক্ষেত্রে সেটা একটু বেশি হতে পারে, কারও-বা হতে পারে একটু কম। তবে কারও নামধামই প্রকাশ করা হবে না। কারণ, চার মাস সময়ের মধ্যে লুকিয়ে-চুরিয়ে টাকার কথা জানালে কারও নামধাম সাতকাহন করে জানানো হবে না বলে সরকারি তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল।’’

বিশেষজ্ঞদের কথায়, ‘‘ক্ষমতাসীন হওয়ার পরেই নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন, কালো টাকা উদ্ধারের জন্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। সেই টাকাটা বিদেশ থেকে উদ্ধারের আগে কর-ফাঁকির ফলে দেশের মধ্যেই যে কালো টাকাটা জমানো রয়েছে, সেটা উদ্ধার করাটাই আশু কর্তব্য বলে অর্থ মন্ত্রক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে গত পয়লা জুন থেকে একটি প্রকল্প চালু করা হয়েছিল। যার নাম- ‘আয়কর ঘোষণা প্রকল্প’। যাঁরা কর-ফাঁকি দিয়ে এত দিন কালো টাকা জমিয়েছেন, তাঁদের ‘কালো হাত’ ধুয়ে সাফ করে ফেলার জন্য চার মাস সময় দেওয়া হয়েছিল। এটাই ছিল সরকারের তরফে দেওয়া শেষ সুযোগ। বলা হয়েছিল, তার পরেও যাঁরা কালো টাকা জমানোর কথা কবুল করবেন না, তাঁদের নামধাম তো সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করা হবেই, আদায় করা হবে বকেয়া কর, জরিমানা, সেস। আর সবশেষে ছিল জেল ও আদালতের বিপুল অঙ্কের জরিমানা। সেই ‘ওযুধে’ কাজ হয়েছে। তবে যাঁরা জানিয়েছেন, তাঁদেরও জরিমানা, সেস দিতে হয়েছে। যা ঘোষণাকারীদের আগামী বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সুদে-আসলে মিটিয়ে দিতে হবে। তাঁদের প্রথম কিস্তির (২৫ শতাংশ) টাকাটা মেটাতে হবে চলতি বছরের নভেম্বরের মধ্যে, দ্বিতীয় কিস্তির (২৫ শতাংশ) টাকা মেটাতে হবে আগামী বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে। বাকি ৫০ শতাংশ টাকা তাঁদের সুদে-আসলে আগামী বছরের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই মিটিয়ে দিতে হবে। গত বছর এই প্রকল্পটি লাগু হয়েছিল বিদেশে, অনাবাসী ভারতীয়দের জন্য। সেই প্রকল্পে কর-ফাঁকি দেওয়া ৪ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল। তবে এটাও সিন্ধুতে বিন্দু-সম। দেশের কালো টাকার পরিমাণ কম করে ৩০ লক্ষ কোটি টাকা। তবে এর আগে ’৯৭ সালেও প্রথম ইউপিএ সরকার এমন একটি প্রকল্পের মাধ্যমে ৩৩ হাজার কোটি টাকার মতো কালো টাকা উদ্ধার করেছিল।’’

আরও পড়ুন- অগস্টে পরিকাঠামোয় বৃদ্ধি ৩.২%

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement