‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’ শুরু হবে ২ অক্টোবর। তার আগে ঝাড়ু হাতে প্রচারে নামলেন মানব সম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি। নয়াদিল্লির এক স্কুলে। ছবি: পিটিআই।
আজ রওনা হলেন। তবে আমেরিকা থেকে ফিরেই ঝাড়ু হাতে রাস্তায় নামবেন নরেন্দ্র মোদী!
হাতে আর মাত্র ছ’দিন। কিন্তু কোন ঝাড়ু হাতে নেবেন প্রধানমন্ত্রী? তা নিয়েই এখন বিতর্ক তুঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ে।
২ অক্টোবর গাঁধী জয়ন্তীতে ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’ শুরু করছেন প্রধানমন্ত্রী। মোদী ঘোষণা করেছেন, এটিকে গণ-আন্দোলনে পরিণত করবেন তিনি। শহর পরিষ্কার রাখার জন্য কোনও কাজই যাতে ছোট মনে না হয়, তার জন্য সে দিন তিনি নিজেই ঝাড়ু হাতে দিল্লির রাস্তায় নামবেন।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তো ঘোষণা করে দিয়েছেন। এমনটা হলে প্রতিপক্ষ অরবিন্দ কেজরীবাল ফোঁস করে উঠবেন না তো? তাঁরা বলতেই পারেন, আম আদমি পার্টির প্রতীক কেড়ে নিচ্ছেন মোদী। এ-ও বলতে পারেন, মোদীকেও ঝাড়ুর শক্তি মানতে হল। দিল্লিতে বিধানসভা ভোটের সময় বিষয়টিকে প্রচারের হাতিয়ারও করতে পারে কেজরীবালের দল।
অতএব? প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ের এক কর্তা জানান, আপাতত দুটি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে। এক সাধারণ ঝাড়ু যেমন হয়, সেটিই দেওয়া হবে মোদীকে। বা প্লাস্টিকের ‘ওয়াইপার’-এর মতো জিনিসও তাঁকে দেওয়া হতে পারে। অনেকে অবশ্য মনে করছেন, প্রধানমন্ত্রী ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন’ শুরু করছেন মহান উদ্দেশ্য নিয়ে। সেখানে কেজরীবালের দল কী ভাবল তার পরোয়া করা উচিত নয়। বরং তাদের নির্বাচনী প্রতীক কেড়ে নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যদি গোটা দেশে একটি গণ-আন্দোলন তৈরি করে ফেলেন, তা হলে তা ভবিষ্যতে বিজেপিরই সম্পদ হয়ে যেতে পারে। অন্য একটি অংশের মত, অতীতে কোনও বিষয়ে পান থেকে চুন খসলেই ফোঁস করতেন কেজরীবাল। সেই স্তরের রাজনীতি কি বিজেপির পক্ষে করা সম্ভব? বিশেষ করে দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচন যখন অবশ্যম্ভাবী। তখন সতর্ক হয়েই চলা ভাল।
আম আদমি পার্টি অবশ্য এখন পরিস্থিতির উপরে নজর রাখতে চাইছে। গত বছর দিল্লির বাল্মিকী নগর এলাকা থেকে কেজরীবাল রাস্তায় ঝাড়ু মেরে তাঁদের নির্বাচনী প্রতীক ঘোষণা করেন। তাঁর দলের নেতা দিলীপ পাণ্ডে বললেন, “মোদী যে কাজ করতে চাইছেন, সেটি ভালো উদ্যোগ। তাঁকে আমরা সমর্থন করি।” কিন্তু তিনি এটি জানাতেও ভুললেন না যে, মোদী আসলে কেজরীবালের পথই অনুসরণ করছেন। কেজরীবালের বাল্মিকী নগরকে বেছে নেওয়ার পিছনে কারণ ছিল। সেখানে দিল্লির ৯০ শতাংশ সাফাই কর্মচারী থাকেন। তাঁদের শক্তিতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন কেজরীবাল। মোদীর ২ অক্টোবরের কর্মসূচির জন্যও দিল্লির এমনই এলাকা খোঁজা হচ্ছে বলে সূত্রের খবর।
প্রধানমন্ত্রী সচিবালয়ের সূত্র জানাচ্ছে, ইতিমধ্যেই মোদীর যাবতীয় প্রকল্প ঘোষণার সময় বিরোধীরা কটাক্ষ করেছে, তাঁদের আমলে তৈরি প্রকল্পই নাম বদলে নতুন বোতলে পরিবেশন করা হচ্ছে। এ বারেও তার আশঙ্কা রয়েছে। তবে ঝাড়ুর বিষয়টি দু’-এক দিনের মধ্যেই চূড়ান্ত করা হবে। ক্যাবিনটে সচিব অজিত শেঠ সব মন্ত্রককে জানিয়ে দিয়েছেন, ২ অক্টোবর সব কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীর ছুটি বাতিল। স্বচ্ছ ভারত অভিযানের শরিক হতে সে দিন শ্রমদান করতে হবে তাঁদের। মন্ত্রীরাও সে দিন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঝাড়ু হাতে নামছেন। রেলমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া ঘোষণা করেছেন, তিনি ও তাঁর মন্ত্রকের কর্মীরা সে দিন শ্রমদান করবেন। রেল লাইন, ওয়ার্কশপ, কলোনিতেও সাফাই অভিযান করা হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ আজ মন্ত্রকের সব কর্মীদের ডেকে এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন। মোদী মন্ত্রিসভার সদস্য রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আগামী পাঁচ বছর ধরে এই অভিযান চালাবেন। ৪০৪১টি ছোট-বড় শহরে বাড়িতে-বাড়িতে শৌচালয় নির্মাণ, নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক করা, সাধারণ মানুষের চেতনা বাড়ানোর জন্য ৬৩ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে।”
এই বিশাল কর্মকাণ্ড যে একা সরকারের পক্ষে সামলানো সম্ভব নয়, প্রধানমন্ত্রী তা নিজেই জানিয়েছেন। সব নাগরিককে তিনি আহ্বান করেছেন, সপ্তাহে দুই ঘণ্টা সময় বার করে স্বচ্ছতার দিকে নজর দিতে। সম্প্রতি বেঙ্গালুরুতে মোদী বলেছেন, “লোকে বিস্ময় প্রকাশ করেন, প্রধানমন্ত্রী হয়ে আমি এত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে কেন কথা বলি। কারণ, আমিও এক জন ক্ষুদ্র লোক। এই ক্ষুদ্র লোকেরাই ক্ষুদ্র কাজের মধ্যে দেশকে মহান উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।”