Budget

শেয়ার বাজার: প্রশ্ন, প্রত্যাশা, কিছু পরামর্শ

বাজেটের পরেও শেয়ার বাজার এগিয়ে চলবে কি? এটাই মোক্ষম প্রশ্ন।

Advertisement

অদিতি দে নন্দী

লেখক শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞ শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৮ ১৮:০৭
Share:

শেয়ার বাজার চূড়ায় বসে আছে– এই কথাটা লিখতে লিখতে শেয়ার বাজার লিখিয়েরা রীতিমতো ‘বোরড’। আসলে বসে নেই, চূড়ার মাথায় একটু একটু করে এগিয়েও চলেছে। চলেছে ত চলেছেই– ব্যাপারটা কী?

Advertisement

১ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় বাজেট। এর আগেও চলেছে, বাজেটের পরেও চলবে কি? এটাই মোক্ষম প্রশ্ন। অনেকেই ‘প্রফিট বুক’ করে ফেলেছেন। এই ভেবে যে— একটু নামুক, আবার কেনা যাবে। কিন্তু তার পরে? অনেকে কিনতে চাইছেন, ভাবতে হচ্ছে– চূড়ায় বসে কীসে হাত লাগালে হাত জ্বলার সম্ভাবনা কম।

এ যাত্রা নিফটি-র ১০,০০০ কিংবা সেনসেক্স-এর ৩২,০০০ যাত্রা সম্ভব হয়েছিল জনসাধারণের সার্থক প্রচেষ্টায়। আশ্চর্য! ভাবতে অভ্যস্ত আমরা, শেয়ার বাজারে যা হয় তা সম্পন্ন বিনিয়োগকারীদের হাতের গুণে। কিন্তু ঘটনা, এ বারের এই চূড়োর ওপর টিকে থাকা বাজার আসলে সাধারণ মানুষের মিলিত অবদান। মিউচুয়াল ফান্ড-এ যাঁরা সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান বা এসআইপি করছেন, তাঁরা গড়ে প্রত্যেক মাসে বাজারে বাজারে ঢেলেছেন গড়ে ৫,০০০ কোটি টাকারও বেশি, চলতি আর্থিক বছরে। এই বিনিয়োগ নিয়মিত এবং একমুখী। রাতারাতি ঢোকা আর বেরনোর সম্ভাবনা নেই। সুতরাং বিদেশি নির্ভর বাজারে যদি কথায় কথায় সংশোধন দেখতে আমরা অভ্যস্ত থাকি, এ বারে অভ্যাস পাল্টাতে হচ্ছে।

Advertisement

৩২,০০০ থেকে ৩৬,০০০ ধীরে, ধীরে থামতে থামতে এগোচ্ছে বাজার। এমন ভাবে যে কাগজে হেডলাইন হওয়াও তার গুরুত্ব হারিয়েছে। আর প্রত্যেক মাসে প্রায় সওয়া ৯ লক্ষ বিনিয়োগকারী নতুন করে এসআইপি করতে আসছেন– তথ্যটি দিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অফ মিউচুয়াল ফান্ডস ইন ইন্ডিয়া (এএমএফআই)।

এটাই কারণ বাজারের হুট করে পড়ে না যাওয়ার। মধ্যে মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা ঢুকছেন, সুযোগ করে দিচ্ছেন দেশিদের মাঝে মাঝে লাভ ঘরে তোলার। শেয়ারবাজারে (বা ইক্যুইটি নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ড-এ) এক বছরের বেশি টাকা লাগিয়ে রাখলে দীর্ঘমেয়াদী ক্যাপিটাল গেইন কর লাগে না। এ বারে বাজেট-এ আরও কিছু সুবিধা প্রত্যাশিত? দেখা যাক।

এ বার ব্যক্তিগত করের ঊর্দ্ধসীমা বাড়ার সম্ভাবনা। যদি হয়, বিনিয়োগকারীদের হাতে আসবে অতিরিক্ত অর্থ। ব্যাঙ্কে সুদের হার মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার যোগ্য নয়। এ ক্ষেত্রে ইক্যুইটি আর মিউচুয়াল ফান্ড অবিকল্প।

জিএসটি-র বিভিন্ন হার নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছে। পদ্ধতিতে সংশোধনের প্রক্রিয়াও চলছে। বাজেট প্রস্তাবে থাকবে চোখ– কোন কোন শিল্পক্ষেত্র জিএসটি-র পদ্ধতি সংক্রান্ত ক্ষতি এড়াতে পারছে। মাথায় রাখতে হবে ওষুধ শিল্পে বিভিন্ন কারণে শেয়ারের দাম পড়তে দেখা গেছে চলতি আর্থিক বছরে।

আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রী চকোলেট খেতে চাইতেই পারেন, কিন্তু...

শোনা যাচ্ছে নজরদারি জোরদার হবে গৃহনির্মাণ শিল্পে। এই ক্ষেত্রে কোন সংস্থার লাভ আর কার ক্ষতি, তা বুঝে নিতে হবে। গৃহনির্মাণে টাকা লাগিয়ে খুব একটা কেউ লাভ করেন নি। কিন্তু জমি-বাড়ি-ফ্ল্যাট যাঁরা কেনেন, তাঁরা জানেন দাম বেড়েছে। এই ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রস্তাবিত হলে দীর্ঘমেয়াদে পুরোপুরি বদলে যেতে পারে রিয়েল এস্টেট-এ বিনিয়োগের ছবি।

অটোমোবাইল বা গাড়ি শিল্প চলে নানা রকম সংস্থা নিয়ে। দু’চাকার বাজার এ দেশে ক্রমশ বেড়ে চলেছে। সাধারণ মানুষের ব্যবহারযোগ্য গাড়ির ব্যবহার বহুল। এই দু’ধরনের গাড়ি প্রস্তুতকারকরা সবচেয়ে বেশি লাভ করেন। এর পরেই টায়ার প্রস্তুতকারক এবং যন্ত্রাংশ প্রস্তুতকারকরা আছেন। বড় মালবাহী গাড়ি সংস্থা খুব একটা ভাল অবস্থানে নেই। দেখা যেতে পারে বাজেট প্রস্তাবে তাঁদের গতিবিধি এদিকওদিক হয় কি না।

ধরে নিতে হবে, এখন বাজার যেখানে, তাতে মাঝে মাঝে একটু আধটু সংশোধন হতেই পারে। কিন্তু এমন ভাবে নতুন বিনিয়োগ তো করা যেতেই পারে, যাতে তা সহজে গায়ে লাগে! সেই ভাবে বিনিয়োগের কয়েকটি ‘কোড অফ কন্ডাক্ট’ আছে, যার একটি হল, কিনতে হবে মিউচুয়াল ফান্ডের ফান্ড ম্যানেজারদের মতো। মানে একটি শেয়ারে নয়, যা টাকা লাগাবেন তা লাগাবেন কয়েকটি শিল্পক্ষেত্র বেছে নিয়ে আলাদা আলাদা সংস্থায়, যারা প্রত্যেকে আলাদা আলাদা ভাবে লাভজনক। কোনও একটি বা কয়েকটি মাঝে ভাল না করলেও বাকিরা যাতে পুষিয়ে দেয়। উদ্বৃত্ত টাকাই বিনিয়োগ করবেন। যাতে তা দীর্ঘমেয়াদে ফেলে রাখা যায়। বাজেট যদি দীর্ঘমেয়াদি নীতির প্রতিফলন হয়, তবে দেখতে হবে, শেয়ার বিনিয়োগও ধীরে ধীরে দীর্ঘমেয়াদি চরিত্রেই বদলে যাচ্ছে কি না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন