Plane Crash In Ahmedabad

ক্রেনে টেনে ডানা সরাতেই পোড়া মাথা

দু’দিক থেকে কেব্‌ল লাগিয়ে ধীরে ধীরে ওঠানো শুরু হল বিমানের ভাঙা অংশ। অ্যাম্বুল্যান্সের জোর সাইরেন। আশপাশে শোরগোল পড়ে গেল, “আবার মৃতদেহ বেরোচ্ছে!”

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১৫ জুন ২০২৫ ০৭:৪০
Share:

ক্রেনে করে সরানো হচ্ছে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের অংশ। শনিবার আমদাবাদে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

ভোর থেকেই বিশাল দু’টি ক্রেন আনিয়ে তোড়জোড়। কিন্তু কিছুতেই আর এগোনো যাচ্ছে না। ডাক্তারি পড়ুয়াদের হস্টেলের উপর আটকে থাকা বিমানের পিছনের দিকের অংশের ভার আর ধরে রাখতে পারছে না হস্টেল ভবন। যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে! এই অবস্থায় বিমানের ওই ভাঙা অংশের নীচে ঢুকলেন ন্যাশনাল সিকিয়োরিটি গার্ডের (এনএসজি) দু’জন। কয়েক মুহূর্তেই বেরিয়ে এলেন তাঁরা। আনানো হল গ্লাভস, মাস্ক। সে সব পরে ভিতরে গেলেন। বেরিয়ে এসে নির্দেশ দিলেন টেনে তোলার।

দু’দিক থেকে কেব্‌ল লাগিয়ে ধীরে ধীরে ওঠানো শুরু হল বিমানের ভাঙা অংশ। অ্যাম্বুল্যান্সের জোর সাইরেন। আশপাশে শোরগোল পড়ে গেল, “আবার মৃতদেহ বেরোচ্ছে!” ন্যাশনাল ডিজ়াস্টার রিলিফ ফোর্স-এর এক কর্মী বলছিলেন, দেহাংশ বলতে মিলেছে গলা থেকে বুকের অংশ। কিছু দূরে পড়েছিল একটি হাত। আরও খানিকটা দূরে পোড়া মাথার অংশ। নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না, এই দেহাংশ এক জনেরই কি না।

শনিবারের এই উদ্ধার পর্ব দেখে বৃহস্পতিবার দুপুরের বর্ণনা দিচ্ছিলেন নিতিন পরমার। সে দিন তাঁর মতোই উদ্ধারকাজে হাত লাগিয়েছিলেন আশপাশের এলাকার কয়েকশো মানুষ। কেউ দমকলের সঙ্গে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছেন, কেউ আশপাশে ছিটকে পড়া আহতদের নিজের চেষ্টায় হাসপাতালের দিকে নিয়ে ছুটেছেন, অনেকেই আবার ধরাধরি করে মৃতদেহ উদ্ধারের কাজ শুরু করেছিলেন। নিতিন বললেন, “অন্তত ১৭ জনকে আমি বার করেছি। কারও শুধু পা ধরে তুলেছি, কারও আবার শুধু মাথার খুলিটুকুই উদ্ধার করেছি। দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া, পুড়ে ছোট হয়ে আসা কত লোককে যে চাদরে মুড়িয়ে অ্যাম্বুল্যান্সে দিয়ে এসেছি বলে বোঝাতে পারব না। এত কিছু দেখতে হল। তবে আমার হাত শুধু আটকে গিয়েছিল একটা ছোট্ট বাচ্চাকে তোলার সময়। শুধু মুখ আর কাঁধটুকু বেঁচে ছিল তার।”

পাশের লক্ষ্মীনগরে থাকেন সুধীর সিংহ। অটো চালান। বললেন, “সে দিন প্রচুর মানুষকে আমরা নিজেরা বার করে নিয়ে গিয়েছি। তার পরে পুলিশ, দমকল এসেছে। কিন্তু চোখের সামনে যা দেখেছি, তার পরে রাতে ঘুমাতে পারছি না।” উদ্ধারকাজে হাত লাগানো মেডিক্যাল পড়ুয়া সোনম পাটনকরের যন্ত্রণা আলাদা। বলছিলেন, “অনেক রকমের রোগী দেখার অভ্যাস রয়েছে। কিন্তু সহপাঠীদের ওই অবস্থায় বার করে নিয়ে গিয়ে নিজেদেরই চিকিৎসা করতে হবে, কখনও ভাবিনি।”

আমদাবাদের মেঘানী নগরে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হওয়া উদ্ধারকাজ চলেছে শনিবার দিনভরও। দেহাংশ সরানোর পাশাপাশি শুরু হয়েছে বিমানের ভাঙা অংশ সরিয়ে ফেলার কাজ। এর পরে বুলডোজার চালিয়ে পোড়া ভবনের সমস্তটা গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে। তার আগে এ দিন ভোর থেকেই আরও কড়া নিরাপত্তায় ঘিরে ফেলা হয়েছিল ওই ঘটনাস্থল। শুক্রবার রাত পর্যন্ত আশপাশের বাড়ির বহুতলে উঠে দাঁড়িয়েছিলেন সাধারণ মানুষ। এ দিন পুলিশ এসে ভিড় সরিয়ে দিয়েছে। এনএসজি-র পাশপাশি কাজ করছে ন্যাশনাল ডিজ়াস্টার রিলিফ ফোর্স (এনডিআরএফ), এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এএআইবি), ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সি (এনআইএ), গুজরাতের অ্যান্টি টেররিজম স্কোয়াড (এটিএস) এবং গুজরাত পুলিশের একাধিক বিভাগ। এ দিনই গান্ধীনগর থেকে পৌঁছেছে ন’সদস্যের বিশেষ ফরেন্সিক দল। সেই দলের এক সদস্য কে রমন বললেন, “৩২ রকমের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু উদ্ধারকাজ শেষ না হওয়ায় সবটা দেখে ওঠা যাচ্ছে না।” ওই দলের আর এক আধিকারিক জানান, প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে, তড়িঘড়ি নামতে গিয়ে বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার প্রথমে একটি গাছে ধাক্কা মারে। এরপর সেই গাছের পাশে লাগানো লোহার স্তম্ভে ধাক্কা লেগে কাত হয়ে পড়ে। জ্বালানির অনেকটাই পড়েছে স্টুডেন্ট হস্টেলের উপর। মুহূর্তে আশপাশের সব ঝলসে গিয়েছে। পিছনের খানিকটা অংশ পড়েছে মেসের ক্যান্টিনের মাথায়। এনডিআরএফ উদ্ধারকাজ শেষ বলে ঘোষণা করলে জোর কদমে তদন্তের কাজ শুরু হবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন

এটি একটি প্রিমিয়াম খবর…

  • প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর

  • সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ

  • সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে

সাবস্ক্রাইব করুন