লক্ষ্য লালু-নীতীশ, জয়প্রকাশ স্মরণে মোদী

পুরনো শত্রুর সঙ্গে বন্ধুত্ব হলে রাজনীতির ময়দানে প্রশ্ন উঠবেই। তবে অবলীলায় সে সবের মোকাবিলা করায় জুড়ি নেই লালুপ্রসাদের। বিহারে ভোটের হাওয়া গরম হতেই নীতীশ কুমারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে শুরু করেছেন লালু। এবং একেবারে নিজস্ব ভঙ্গিমায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৫ ০৩:৪৫
Share:

পুরনো শত্রুর সঙ্গে বন্ধুত্ব হলে রাজনীতির ময়দানে প্রশ্ন উঠবেই। তবে অবলীলায় সে সবের মোকাবিলা করায় জুড়ি নেই লালুপ্রসাদের। বিহারে ভোটের হাওয়া গরম হতেই নীতীশ কুমারের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে ব্যাখ্যা দিতে শুরু করেছেন লালু। এবং একেবারে নিজস্ব ভঙ্গিমায়।

Advertisement

গত কাল পটনায় একটি অনুষ্ঠানে নীতীশের পাশে বসেই লালু বলেন, ‘‘নীতীশ আর আমি জয়প্রকাশ নারায়ণের আন্দোলনে জড়িয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু তার পর নীতীশকে বিজেপি অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিল। আমি আবার তাঁকে ছাড়িয়ে এনেছি।’’ চার দশক আগে জয়প্রকাশের আন্দোলনে তিনি ও নীতীশ কী ভাবে জড়িয়ে গিয়েছিলেন, তার গল্প বিস্তারিত শুনিয়েছেন লালু।

বিহারের ভোটের আগে লালু-নীতীশের এই সখ্য চিন্তায় ফেলে দিয়েছে নরেন্দ্র মোদীকে। এমনিতেই বসুন্ধরা-সুষমা বিতর্কে নাজেহাল অবস্থা, তার উপরে নতুন সংযোজন স্মৃতি-পঙ্কজা। চাপের মুখে মোদী এখন বিরোধী শিবিরের বন্ধুত্বকে নিয়ে সংশয়ের বাতারবণ সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে তাঁর অস্ত্র হয়ে উঠেছেন জরুরি অবস্থায় বিরোধী রাজনীতির নায়ক জয়প্রকাশ নারায়ণ।

Advertisement

আগামী কাল ইন্দিরা সরকারের জরুরি অবস্থা জারির ৪০ বছর পূর্তি হচ্ছে। কাল ঘটা করে ‘কালা দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি। তার এক দিন আগে আজ প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, লোকনায়ক জয়প্রকাশ নারায়ণের জন্মভিটে বিহারের ছাপরা জেলার সিতাবদিয়ারায় তৈরি হবে একটি জাতীয় স্মারক। সেখানে সংগ্রহশালার পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠানও গড়া হবে। গণতন্ত্র, পঞ্চায়েতের ভূমিকা, গাঁধীর ভাবনার পাঠ পড়ানোর সঙ্গে সেখানে তৈরি হবে একটি খাদি কেন্দ্রও। মন্ত্রিসভার এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ বলেন, ‘‘এই প্রকল্পের জন্য যতই অর্থ খরচ হোক না কেন, তা দেবে কেন্দ্র।’’ অনেকেই মনে করছেন, ভোটের আগে লালু-নীতীশের সঙ্গে কংগ্রেসের জোটে বিভাজন করতেই জয়প্রকাশকে আরও কাছে টেনে নিলেন মোদী।

অটলবিহারী বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়েই জয়প্রকাশ নারায়ণকে ‘ভারতরত্ন’ দেওয়া হয়েছিল। ইউপিএ আমলে লালকৃষ্ণ আডবাণী যখন রথযাত্রা করেছিলেন, তার সূত্রপাতও হয়েছিল জয়প্রকাশের গ্রাম থেকে। আগামী কাল জরুরি অবস্থার ৪০ বছর পূর্তিতেও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রচার চালাবে বিজেপি। দিল্লিতে মূল অনুষ্ঠানটিতে থাকবেন দলের সভাপতি অমিত শাহ। বিজেপি সূত্রের মতে, যে ভাবে লালু-নীতীশ ও কংগ্রেস একজোট হয়েছেন, তাতে অশনি সঙ্কেত দেখছে দল। দিল্লির বিপর্যয়ের পর বিহারের নির্বাচন বিজেপির কাছে মরণ-বাঁচন লড়াই। এই অবস্থায় জয়প্রকাশের দুই ‘সিপাহি’ লালু ও নীতীশ যে ভাবে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন, তাতে জয়প্রকাশকে বড় করে তুলে ধরে বিজেপি সেই জোটে বিভাজন তৈরি করতে চাইছে। মোদী এটাও প্রচার করতে চান যে লালু-নীতীশ জয়প্রকাশকে ভুলেই গিয়েছেন। গণতন্ত্র বজায় রাখতে তাঁর আন্দোলনের কথা মনে রেখেছে এক মাত্র বিজেপিই।

কেন্দ্রীয় যোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের যুক্তি, এত দিন ধরে লালু ও নীতীশ কুমার একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে এসেছেন। বিজেপিকে রুখতে দুই নেতা এক হলেও তাঁদের সমর্থকরা এক হতে পারছেন না। ফলে নিচু স্তরে এই জোট ধোপে টিঁকবে না। তার উপর কংগ্রেস যে ভাবে সেই জোটে সামিল হয়েছে, তাতে সমর্থকরা আরও বিভ্রান্ত। এখনও বিহারে জয়প্রকাশের কথা মনে রেখেছে সাধারণ মানুষ। ফলে আজকের সিদ্ধান্ত বিজেপিকেই ফায়দা দেবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন