রাজেন্দ্র কুমার
দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন অরবিন্দ কেজরীবাল। সেই কেজরীবালের সব থেকে বিশ্বস্ত অফিসার, কার্যত তাঁর ডান হাতকে আজ দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। চরমে উঠেছে নরেন্দ্র মোদী বনাম কেজরীবালের সংঘাত।
আজ সিবিআই দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর প্রিন্সিপ্যাল সেক্রেটারি রাজেন্দ্র কুমার-সহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে। তালিকায় রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রীর অফিসের ডেপুটি সেক্রেটারি তরুণ শর্মাও। গত বছর ডিসেম্বরে দিল্লির সচিবালয়ে ঢুকে এই রাজেন্দ্র কুমারের অফিসেই সিবিআইয়ের তল্লাশির পরে কেজরী অভিযোগ তোলেন, মোদী সরকার সিবিআইকে তাঁর অফিসে নজরদারি করতে পাঠিয়েছে। মোদীকে ‘কাওয়ার্ড’, ‘সাইকোপ্যাথ’ও বলেন তিনি। কেজরীর যুক্তি ছিল, তিনি দিল্লি ক্রিকেট সংস্থার কর্তা হিসেবে অরুণ জেটলির দুর্নীতির তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। সিবিআই আসলে সেই সব নথির খোঁজেই এসেছিল। সিবিআই অবশ্য মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে তল্লাশির অভিযোগ অস্বীকার করেছিল।
ওই ঘটনার পরে গত সাত মাসে রাজেন্দ্র কুমারের উপরেই আস্থা রেখেছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী। আজ রাজেন্দ্র কুমারদের গ্রেফতারির পরে উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়ার অভিযোগ, মোদী দিল্লিতে হারের বদলা নিতে চাইছেন। কেজরীবালের রাজনৈতিক সাফল্যে ভয় পেয়ে মোদী সরকার আম আদমি পার্টির গায়ে কাদা ছেটাচ্ছেন। রবিবারই পঞ্জাবে কেজরীবালের জনসভায় বিপুল সাড়া মিলেছে। সমীক্ষা বলছে, আপ-ই সেখানে ক্ষমতায় আসবে। গোয়া, গুজরাতেও একই ছবি। তাতেই ভয় পেয়েছে মোদী সরকার। দিল্লি সরকারের অফিসারদের গ্রেফতার করে, বিনা নোটিসে তাঁদের বদলি করে দিয়ে প্রশাসনকে পঙ্গু করে ফেলা হচ্ছে। এর আগে কোনও কেন্দ্রীয় সরকার এত নোংরামি করেনি, এত অধঃপতন হয়নি। সিসৌদিয়ার দাবি, ‘‘প্রয়োজনে আমরা চাপরাশি দিয়েও সরকার চালাব। মরে গেলেও দিল্লির মানুষের জন্য কাজ করে যাব।’’
দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী এই সব অভিযোগ তুললেও সিবিআই-এর দাবি, রাজেন্দ্র কুমার ৫০ কোটি টাকার দুর্নীতির ‘কিংপিন’। তাঁর অফিস, বাড়ি-সহ বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে যে সব নথি পাওয়া গিয়েছিল, তাতে দুর্নীতির গন্ধ মিলেছে বলেই তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সিবিআইয়ের দাবি, শীলা দীক্ষিতের সময় থেকেই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন রাজেন্দ্র কুমার। ২০০৭ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত দিল্লি সরকারের বিভিন্ন পদে থাকাকালীন ‘এনডেভর সিস্টেমস’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থাকে সব মিলিয়ে ৯.৫ কোটি টাকার বরাত পাইয়ে দিয়েছিলেন রাজেন্দ্র। কোনও ক্ষেত্রেই টেন্ডার ডেকে বরাত দেওয়া হয়নি। প্রথম দফায় ৪৯ দিনের জন্য দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন কেজরীবাল। সে সময়ও রাজেন্দ্র ২.৪৬ কোটি টাকার বরাত পাইয়ে দেন। ওই বেসরকারি সংস্থাটি আদতে রাজেন্দ্র কুমারই বকলমে চালাতেন বলে সিবিআই অফিসারদের সন্দেহ। সিবিআই মুখপাত্র জানান, আগামিকাল পাঁচ জনকেই পাটিয়ালা কোর্টে পেশ করা হবে।
কেজরাবীলের সঙ্গে রাজেন্দ্র কুমারের সম্পর্ক অবশ্য বহু পুরনো। দু’জনেই একই সময়ে আইআইটি-খড়্গপুরে পড়াশোনা করেছেন। ১৯৮৯ সালে কেজরীবাল আইআইটি থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেন। একই বছরে রাজেন্দ্র কুমার ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ডিগ্রি পান। তাঁকে নিয়োগ করা নিয়ে দিল্লির উপ-রাজ্যপাল নজীব জঙ্গের সঙ্গেও সংঘাতে গিয়েছেন কেজরীবাল। কিন্তু নিজেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতীক হিসেবে দাবি করা কেজরীবাল কেন এক জন দুর্নীতিগ্রস্ত অফিসারকে মদত দিচ্ছেন, আজ তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। সিবিআইয়ের গ্রেফতারের পিছনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ খারিজ করে বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্রর যুক্তি, ‘‘ওই অফিসারের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। সেগুলি নিয়ে আপ কিছু বলছে না। প্রাক্তন আমলা আশিস জোশী, যিনি আপ-এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তিনিই সিবিআইতে চিঠি লিখে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন।’’