তদন্তকারীই এবার তদন্তের মুখে!
দেশের সব থেকে আলোচিত দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়মের মামলার তদন্তের ভার সিবিআইয়ের কাঁধে। সেই সিবিআইয়ের অধিকর্তা রঞ্জিৎ সিন্হাই এ বার আলোচনায় বিষয়।
প্রথমে সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ উঠেছিল, টুজি স্পেকট্রাম দুর্নীতিতে অভিযুক্ত সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে রঞ্জিৎ সিন্হা তাঁর বাড়িতে দেখা করেছেন। এ বার সিবিআই অধিকর্তা তাঁর বাড়িতে কুখ্যাত রফতানিকারী মইন কুরেশির সঙ্গে ১৫ মাসে ৯০ বার দেখা করেছেন বলে অভিযোগও উঠেছে। হাওয়ালা কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগে কুরেশির বিরুদ্ধে তদন্ত করছে আয়কর দফতর। সিবিআই অধিকর্তার বাড়িতে কারা আসছেন, তা যে ডায়েরিতে নথিভুক্ত হয়, সেখান থেকেই এই সব তথ্য জানা গিয়েছে বলে অভিযোগ। সিবিআইয়ের তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, এমন কোনও ডায়েরির অস্তিত্বই নেই। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানো হয়েছে, রঞ্জিৎ সিন্হাকে সিবিআই অধিকর্তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হোক। বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন বলে এ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি হননি সিবিআই অধিকর্তাও।
সারদা কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে কয়লা খনি বণ্টনের মতো বড় মাপের দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়মের তদন্ত করছে সিবিআই। সিবিআই তদন্ত শেষ করার পর টুজি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারির শুনানি চলছে। কেন্দ্রীয় সরকারের অবশ্য বক্তব্য, রঞ্জিৎ সিন্হা সিবিআইয়ের শীর্ষ পদে না থাকলেও সারদা কেলেঙ্কারি বা অন্য সব তদন্তে তার কোনও প্রভাব পড়বে না। এমনিতেই নভেম্বর মাসে রঞ্জিৎ সিন্হার অবসর নেওয়ার কথা। সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিলে অন্য কাউকে অধিকর্তার পদে বসানো হবে। কিন্তু তদন্তে তার কোনও প্রভাব পড়বে না।
কেন বিতর্ক শুরু হল রঞ্জিৎ সিন্হাকে নিয়ে?
আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ সুপ্রিম কোর্টে অভিযোগ জানিয়েছেন, টুজি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারিতে অন্যতম অভিযুক্ত অনিল অম্বানী এডিএজি গোষ্ঠীর রিলায়েন্স টেলিকম সংস্থার প্রতিনিধিরা রঞ্জিৎ সিন্হার বাড়িতে এসে বেশ কয়েক বার দেখা করেছিলেন। প্রশান্ত ভূষণের বক্তব্য, “সিবিআই অধিকর্তার বাড়ির রেজিস্টারে হাতে লেখা কয়েক হাজার নাম, গাড়ির নম্বর, কোন সময় ওই ব্যক্তিরা এসেছেন, তা লেখা রয়েছে। যে কেউ দেখলেই বুঝবেন এটা আসল। এই রেজিস্ট্রার আসল না নকল, তা পাহারায় থাকা রক্ষীদের জিজ্ঞাসা করলেই বোঝা যাবে।”
সুপ্রিম কোর্টের তরফে প্রশান্ত ভূষণকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাঁর কাছে যে সব তথ্য রয়েছে, সে সব সিল বন্দি খামে আদালতে জমা দিতে। এর পরের শুনানিতে ওই সব তথ্য খতিয়ে দেখা হবে। কিন্তু সিবিআইয়ের বক্তব্য, এমন কোনও রেজিস্ট্রার বা ডায়েরির অস্তিত্বই ছিল না কোনও দিন। তা ছাড়া রঞ্জিৎ সিন্হা সিবিআইয়ের দায়িত্বে আসার আগেই টুজি স্পেকট্রাম কাণ্ডের তদন্ত শেষ হয়ে গিয়ে শুনানি শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রশান্ত ভূষণ অবশ্য অভিযোগ তুলেছেন, রিলায়েন্স টেলিকম সংস্থার বিরুদ্ধেও মামলাতে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছিলেন সিবিআই অধিকর্তা। এমনকি ‘সান টিভি’-র মালিক মারান ভ্রাতৃদ্বয়ের বিরুদ্ধে মামলাতেও তিনি হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করেছেন।