Kiru hydropower case

পুলওয়ামাকাণ্ডে প্রশ্ন তুলেছিলেন, জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন রাজ্যপাল সেই সত্যপালের বিরুদ্ধে চার্জশিট

২০২৩ সালে ঘুষের মামলায় সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়ার পরে সত্যপাল অভিযোগ করেছিলেন, পুলওয়ামায় জঙ্গি-হামলা নিয়ে মুখ খোলায় তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু হয়েছে।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ২২ মে ২০২৫ ১৮:৪৪
Share:

সত্যপাল মালিক। —ফাইল চিত্র।

তিন বছর আগে ঘুষের মামলায় সিবিআইয়ের জিজ্ঞাসাবাদের মুখোমুখি হওয়ার পরে তিনি অভিযোগ করেছিলেন, পুলওয়ামা জঙ্গি-হামলা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে মুখ খোলায় তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু হয়েছে। জম্মু ও কাশ্মীরের সেই প্রাক্তন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার সিবিআই সেই মামলাতেই চার্জশিট জমা দিল!

Advertisement

জম্মু ও কাশ্মীরের ২২০০ কোটি টাকার কিরু জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে নির্মাণের কাজের বরাত দেওয়ার ক্ষেত্রে ঘুষের মামলায় প্রাক্তন রাজ্যপাল সত্যপাল-সহ মোট ৫ জনের বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার চার্জশিট দিয়েছে সিবিআই। ২০১৯ সালে একটি বেসরকারি সংস্থাকে কিরু হাইড্রো ইলেকট্রিক পাওয়ার (এইচইপি) প্রকল্পের নির্মাণ কাজের জন্য প্রায় ২,২০০ কোটি টাকার বরাত দেওয়া হয়েছিল। ওই দুর্নীতি মামলার তদন্তে নেমে ২০২২ সালে এফআইআর দায়ের করেছিল সিপিআই। ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে সত্যপালের বাড়ি-সহ মোট ২৯টি ঠিকানায় তল্লাশিও চালিয়েছিল কেন্দ্রীয় সংস্থাটি।

কিরু জলবিদ্যুৎ প্রকল্প সংক্রান্ত ৩০০ কোটি টাকা ঘুষের প্রস্তাব সংক্রান্ত ওই মামলায় সিবিআই চার্জশিট পেশ করার পরেই এক্স পোস্টে সত্যপাল লিখেছেন, ‘‘আমি গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় দিল্লির রামমনোহর লোহিয়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।’’ সেই সঙ্গে তাঁর এক্স-বার্তা— ‘‘আমি অনেক শুভাকাঙ্ক্ষীর কাছ থেকে ফোন পাচ্ছি, কিন্তু আমি তাদের উত্তর দিতে পারছি না। কারও সাথে কথা বলার মতো অবস্থায় নেই।’’

Advertisement

সত্যপালের বিরুদ্ধে সিবিআই যে ঘুষের মামলার চার্জশিট জমা দিয়েছে, ঘটনাচক্রে প্রথমে সে কথা প্রকাশ্যে এনেছিলেন সত্যপালই। ২০২১ সালের অক্টোবরে রাজস্থানে এক সভায় সত্যপাল দাবি করেছিলেন, তিনি জম্মু-কাশ্মীরের দায়িত্বভার নেওয়ার পরে দেশের দু’টি ফাইল পাশ করানোর জন্য তাঁর কাছে পেশ করা হয়েছিল। প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, ওই দু’টি ফাইল পাশ করালে তাঁকে ৩০০ কোটি টাকা ‘ঘুষ’ দেওয়া হবে। কিন্তু তিনি দু’টি ফাইলই ফেরত পাঠিয়েছিলেন এবং বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী মোদীকে জানিয়েছিলেন।

২০১৮ সালের অগস্ট থেকে ২০১৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল পদে থাকা সত্যপাল বলেন, ‘‘মধ্যস্থতাকারীদের আমি বলেছিলাম, আমি পাঁচটা কুর্তা নিয়ে এসেছি। পাঁচটা কুর্তা নিয়েই ফিরে যাব।’’ এর মধ্যে একটি ফাইল ছিল, দেশের বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে উপত্যকার সরকারি কর্মচারি, পেনশনভোগী এবং সরকার স্বীকৃত সাংবাদিকদের গোষ্ঠী স্বাস্থ্যবিমা সংক্রান্ত চুক্তি। সেটি বাতিল করা হয়েছিল। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য দুর্নীতি দমন শাখাকেও জানানো হয়েছিল। অন্যটি ছিল, বিদ্যুৎ প্রকল্প সংক্রান্ত চুক্তি।

ঘটনাচক্রে, রাজ্যপালপদ থেকে সত্যপালের অপসারণের পরে সিবিআই দু’টি এফআইআর রুজু করেছিল। একটি কিরু জলবিদ্যুৎ প্রকল্প এবং অন্যটি রিলায়্যান্স জেনারেল ইনশিওরেন্স সংক্রান্ত। প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে ফেব্রুয়ারি মাসে কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সিআরপিএফের কনভয়ে জঙ্গি হামলা হয়েছিল। সত্যপাল অভিযোগ করেন, ওই ঘটনার নেপথ্যে সরকারি ব্যর্থতার কথা তৎকালীন রাজ্যপাল হিসাবে জানানোর পরে প্রধানমন্ত্রীকে মোদী তাঁকে মুখ বন্ধ রাখতে ‘পরামর্শ দিয়েছিলেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে একটি বেসরকারি সংস্থাকে ‘কিরু হাইড্রো ইলেকট্রিক পাওয়ার প্রজেক্ট’-এর (এইচইপি) নির্মাণ সংক্রান্ত ২,২০০ কোটি টাকার বরাত দেওয়া হয়েছিল। সেই প্রক্রিয়ায় কোনও দুর্নীতি হয়েছিল কি না, তার তদন্ত করছে সিবিআই। ‘চেনাব ভ্যালি পাওয়ার প্রজেক্টস (পি) লিমিটেড’-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান নবীন কুমার চৌধুরী এবং এমএস বাবু, এমকে মিত্তল, অরুণকুমার মিশ্রের মতো প্রাক্তন কর্তা এবং বরাত পাওয়া সংস্থা পটেল ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেডের বিরুদ্ধেও চার্জশিট দিয়েছে সিবিআই।

সত্যপালের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে বিমা সংক্রান্ত মামলা নিয়েও। জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্যপাল থাকাকালীন তিনি ২০১৮ সালে শিল্পপতি অনিল অম্বানীর বিমা সংস্থার একটি চুক্তি বাতিল করে দিয়েছিলেন। সত্যপালের অভিযোগ ছিল, বিমা প্রকল্পে দুর্নীতি হয়েছে। তার পর মামলার তদন্তভার যায় সিবিআইয়ের হাতে। এই বিমা প্রকল্পের আওতায় ছিলেন জম্মু-কাশ্মীরের সাড়ে তিন লক্ষ রাজ্য সরকারি কর্মী। ২০১৮-এর সেপ্টেম্বরে বিমা প্রকল্পটি চালু হয়। কিন্তু এক মাসের মধ্যেই তা বাতিল করেন তৎকালীন রাজ্যপাল সত্যপাল। তিনি জানিয়েছিলেন, রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা এই বিমা প্রকল্প নিয়ে খুশি নন। তাঁর কথায়, ‘‘কর্মীদের অসন্তোষ প্রকাশ্যে আসার পর আমি গোটা প্রকল্পটির নথি খুঁটিয়ে পড়ি। পুরোটা পড়ে দেখার পর আমার মনে হয়েছিল ভুল ভাবে বরাত দেওয়া হয়েছিল। তাই বাতিল করে দিয়েছিলাম।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement