রাজ্যপালদেরও জিজ্ঞাসাবাদ থেকে রেহাই দেয়নি সিবিআই। এ বার কি তবে সিবিআই তাদেরই অন্যতম শীর্ষকর্তাকে জেরা করবে? অগুস্তা-ওয়েস্টল্যান্ড কপ্টার দুর্নীতির তদন্তে এ বার সেই প্রশ্নেরই মুখোমুখি তারা।
রাজ্যপালের পদে থাকাকালীন এম কে নারায়ণন ও ভারতবীর ওয়াংচুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল সিবিআই। তার পর দু’জনেই পশ্চিমবঙ্গ ও গোয়ার রাজ্যপালের পদ থেকে সরে দাঁড়ান। এই দু’জনকেই জিজ্ঞাসাবাদের কারণ ছিল, তাঁরা ২০০৫ সালের ১ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের এক বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। নারায়ণন ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, ওয়াংচু ছিলেন এসপিজি-র প্রধান। যে বৈঠকে ঠিক হয়, রাষ্ট্রপতি, উপরাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যবহারের জন্য হেলিকপ্টার কেনার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মাপকাঠি শিথিল করা হবে। ভিভিআইপিদের নিয়ে হেলিকপ্টার কত উচ্চতায় উড়বে, তার মাপকাঠি ছয় হাজার মিটার থেকে সাড়ে চার হাজার মিটারে কমিয়ে আনা হয়। যার ফলে ব্রিটিশ-ইতালীয় সংস্থা অগুস্তা-ওয়েস্টল্যান্ড বরাত পাওয়ার দৌড়ে চলে আসে। শেষ পর্যন্ত বরাত জিতেও নেয়। যে বরাত পাওয়ার ক্ষেত্রে পরে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
জিজ্ঞাসাবাদের সময় ওয়াংচু জানিয়েছেন, দিল্লির বাইরে থাকার জন্য ২০০৫ সালের ওই বৈঠকে তিনি যোগ দিতে পারেননি। তাঁর বদলে তিনি এসপিজি-র ইনস্পেক্টর জেনারেল অনিলকুমার সিংহকে বৈঠকে পাঠান। এখানেই সমস্যা সিবিআইয়ের। সেই অনিলকুমার সিংহ এখন সিবিআইয়ের স্পেশ্যাল ডিরেক্টর। অর্থাৎ, সংস্থার ‘নাম্বার টু’, পদমর্যাদায় যিনি ডিরেক্টর রঞ্জিৎ সিংহের পরেই। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, যে কারণে ওয়াংচুকে জেরা করা হতে পারে, এক যুক্তিতে সিবিআই অনিলকুমারকে কেন জেরা করবে না? সিবিআই সূত্রে অবশ্য যুক্তি দেওয়া হচ্ছে, অনিলকে একটি মাত্র বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্যই পাঠানো হয়েছিল। কাজেই বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেখানে তাঁর তেমন কোনও ভূমিকা ছিল না। ওয়াংচু আরও জানিয়েছেন, কপ্টার কত উচ্চতায় উড়তে পারবে, এটা নিয়ে এসপিজি-র কোনও দিনই মাথা ব্যথা ছিল না। তাঁরা শুধু কপ্টারের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে মাথা ঘামিয়েছিলেন।
নারায়ণন ও ওয়াংচু দু’জনেই জানিয়েছেন, কপ্টারের উচ্চতা কমানোর সিদ্ধান্ত এনডিএ-জমানাতেই হয়ে গিয়েছিল। অটলবিহারী বাজপেয়ীর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ব্রজেশ মিশ্রই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কারণ ৬ হাজার মিটার উচ্চতায় মাপকাঠি বেঁধে রাখলে একমাত্র ইউরোকপ্টার সংস্থাই কপ্টার সরবরাহ করতে পারত। একটিমাত্র সংস্থাকে সুযোগ দিলে দুর্নীতির অভিযোগ উঠতে পারে ভেবে ব্রজেশই উচ্চতা কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেন। সে ক্ষেত্রেও বায়ুসেনার প্রাক্তন প্রধান এস পি ত্যাগীই মূল ভূমিকা নিয়েছিলেন। কারণ বায়ুসেনাই প্রথম থেকে ৬ হাজার মিটার উচ্চতায় ওড়ার ক্ষমতাসম্পন্ন কপ্টারের দাবি তুলেছিল। যাতে ভিভিআইপি-দের নিয়ে কপ্টার সিয়াচেনেও পৌঁছতে পারে। কিন্তু ত্যাগী বায়ুসেনা প্রধানের গদিতে বসার পরেই অবস্থান বদলে যায়। এই দুর্নীতিতে অভিযোগের তির মূলত ত্যাগী ও তাঁর আত্মীয়স্বজনের দিকেই। তদন্তে উঠে এসেছে, ত্যাগীর পরিবারকে ওই বরাত পাওয়ার জন্য দু’দফায় মোট ৩ লক্ষ ২৬ হাজার ইউরো ঘুষ দেওয়া হয়েছিল।