হাজিরা: সিবিআই দফতরে ঢুকছেন রাজীব কুমার (চিহ্নিত)। শনিবার শিলংয়ে। ছবি: রাজীবাক্ষ রক্ষিত
একটানা আট ঘণ্টা। মাঝে মাত্র আধ ঘণ্টার বিশ্রাম।
শিলংয়ের সিবিআই দফতরে কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমার ও অন্তত ১২ জন সিবিআই অফিসারের টানা ‘কথোপকথন’ ধরা থাকল ভিডিয়ো ক্যামেরায়।
সূত্রের দাবি, বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার প্রতারণার তদন্তে পশ্চিমবঙ্গ সরকার যে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করেছিল, তা নিয়েই আজ প্রশ্ন করা হয়েছে সিপি-কে। রাজীব ছিলেন ‘সিট’-এর সদস্য। ওই তদন্তকারী দল কবে গঠন হয়, কী ভাবে, কাদের বিরুদ্ধে তারা অভিযান চালায়— সে সবই বিশদে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে তাঁকে। তবে যে অর্থলগ্নি সংস্থার বিষয়ে পুরো তথ্য না-দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রাজীবের বিরুদ্ধে, সেই সারদা বা রোজ ভ্যালি নিয়ে আজ একটি বাক্যও ব্যয় করেননি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।
যদিও শনিবারের এই জিজ্ঞাসাবাদ পর্বের শেষে না রাজীব কিছু বলেছেন, না সিবিআই অফিসারেরা। সারা দিন ধরে হাড় কাঁপানো ঠান্ডা বাতাসে ভেসে বেরিয়েছে হাজার রকম ‘কথা’। কখনও শোনা গিয়েছে, সোমবার মুকুল রায়ও নাকি আসছেন শিলংয়ে। কখনও শোনা গিয়েছে, সিবিআই অধিকর্তা ঋষিকুমার শুক্লও আসতে পারেন।
আরও পড়ুন: ও হাতি তো শুঁড় তোলা! বলছে মায়ার দল
খবর এসেছে, রাজীবকে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ যাতে সিবিআই ছাড়া আর কেউ রেকর্ড করতে না-পারে, তার জন্য বিশেষজ্ঞদেরও নিয়ে এসে তল্লাশি চালানো হয়েছে। কোথাও কোনও লুকোনো ক্যামেরা বা রেকর্ডার রয়েছে কি না, তা তাঁরা খুঁজে দেখেছেন। পাশের ঘরে বসে শক্তিশালী মাইক্রোফোন দিয়ে যাতে সেই কথোপকথন রেকর্ড করা না-যায়, তা-ও নিশ্চিত করা হয়েছে। সিবিআইয়ের একটি সূত্র থেকে শোনা গিয়েছে, রাজীব তদন্তে সহযোগিতা করলে আগামিকালের পরে এই দফায় তাঁকে আর না-ও ডাকা হতে পারে। তবে, কাল তাঁকে আসতে হবে। কারণ, রবিবার তাঁর মুখোমুখি বসে সিবিআইয়ের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য ইতিমধ্যেই শিলং পৌঁছে গিয়েছেন তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ।
আরও পড়ুন: তিন দিনে ২৩ ঘণ্টা, বঢরার জেরা চলবে
আর চর্মচক্ষুতে যা দেখা গিয়েছে তা হল, আজ সকালে ‘ত্রিপুরা কাস্ল’ থেকে কলকাতার সিপি-কে সিবিআই দফতরে নিয়ে গিয়েছে মেঘালয় পুলিশের কনভয়। এই ‘ত্রিপুরা কাস্লে’ই কলকাতা পুলিশের দুই কর্তা জাভেদ শামিম এবং মুরলীধর শর্মাকে নিয়ে উঠেছেন রাজীব। এই দু’জনও এ দিন সিপি-র সঙ্গে সিবিআই দফতরে পৌঁছন। তার আগেই ওকল্যান্ডের সিবিআই দফতরে পৌঁছে যান কলকাতা থেকে আসা সিপি-র আইনজীবী বিশ্বজিৎ দেব।
রবিবার সরস্বতী পুজো, আগামী মঙ্গলবার থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু। এই অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের নিজের শহরে থাকা দরকার— সিবিআইয়ের কাছে নাকি এমন আবেদন করা হয়েছিল। বলা হয়েছিল, অনির্দিষ্ট কালের জন্য পুলিশকর্তাকে শিলংয়ে রেখে জেরা করা যাবে না। কিন্তু সিবিআই তার জবাবে কী বলেছে, তা জানা যায়নি।
শুধু দেখা গিয়েছে, সকালে সবাই সিবিআই দফতরে পৌঁছনোর পরে রিসেপশনে বসেছিলেন। রাজীবকে নিয়ে সিবিআইয়ের দল আলাদা ঘরে ঢুকে যাওয়ার পরে বিশ্বজিৎবাবুকে নিয়ে জাভেদ ও মুরলীধর আবার ‘ত্রিপুরা কাসলে’ ফিরে যান। দুপুরে শোনা যাচ্ছিল, বাইরে কোথাও মধ্যাহ্নভোজে যাবেন সিপি।
সেই মতো জাভেদ ও মুরলী আবার পৌঁছে যান সিবিআই দফতরে। কনভয় তৈরি হয়। কিন্তু, সিপি বেরোননি। সকালে পেট ভরে ব্রেকফাস্ট করেছেন বলে রাজীব নাকি লাঞ্চ খেতে চাননি।
শোনা গিয়েছে, ২২ পাতার প্রশ্নমালা তৈরি করে কয়েক দফায় জেরার প্রস্তুতি নিয়েছে সিবিআই। দুই এসপি-র নেতৃত্বে কলকাতার ৭ জনের একটি দল এবং ১ এসপি-র নেতৃত্বে দিল্লি থেকে আসা পাঁচ জনের একটি দল জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সারা দিন। আর কাউকে সেখানে ঘেঁষতে দেওয়া হয়নি। এমনকি, শিলংয়ের সিবিআই দফতরের প্রধান এসপি-কেও সারা দিন রিসেপশন ও অন্যত্র ঘুরে বেড়াতে দেখা গিয়েছে। বিকেল ৫টার পরে দিল্লি থেকে পাঁচ জন নতুন অফিসারকে ঢুকতে দেখা গিয়েছে দফতরে। একটি সূত্রের দাবি, নতুন নতুন দল নতুন নতুন প্রশ্নমালা নিয়ে কথা বলবে সিপি-র সঙ্গে।
এ দিন এই অফিসের বাইরে দেখা গিয়েছে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ থেকে আসা বেশ কয়েক জন অফিসারকে। মুরলী এখন এসটিএফ প্রধান। তিনি ও জাভেদ এসেছেন রাজীবের সঙ্গে। কিন্তু, কলকাতা থেকে এসটিএফ অফিসারেরা কেন শিলং এলেন, তার উত্তর পাওয়া যায়নি। দফতরের বাইরে বড়সড় বাহিনী নিয়ে পাহারায় থাকতে দেখা গিয়েছে মেঘালয় পুলিশের দুই অতিরিক্ত সুপারকে। তাঁদের আশঙ্কা, ‘‘বলা তো যায় না। রাজীব কুমার বলে কথা। যদি বাইরে গন্ডগোল লাগে!’’