CBI vs Kolkata Police

সিবিআইয়ের দাবি সঠিক পথেই এগোচ্ছে তারা

শনি এবং রবিবার মিলিয়ে প্রায় ৭ ঘণ্টারও বেশি সময় কুণাল ঘোষের মুখোমুখি হতে হয়েছে পুলিশ কমিশনারকে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২১:৩৮
Share:

নথিপত্র নিয়ে সোমবার সকালে সিবিআই দফতরে ঢুকছেন কুণাল ঘোষ। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।

শিলংয়ের হাঁড় কাপানো ঠান্ডায় রাত পৌনে ১০টা পর্যন্ত প্রশ্নোত্তর-পর্ব দীর্ঘায়িত হয়নি শনিবারের মতো। বিকেল ৫টা নাগাদই সিবিআইয়ের তরফে ইঙ্গিত মিলল যে, তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ এবং কলকাতা পুলিশের নগরপাল রাজীব কুমারের একসঙ্গে প্রশ্নোত্তর-পর্ব শেষ। আপাতত সিবিআই অফিস থেকে ছুটি কুণালের। কিন্তু, এ দিনের মতো পুলিশ কমিশনারের ছুটি হলেও ফের তাঁকে আসতে হবে মঙ্গলবারেও।

Advertisement

এর মধ্যেই সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ নিজের দুই আইপিএস সহকর্মী জাভেদ শামিম এবং মুরলীধর শর্মাকে সঙ্গে নিয়ে সিবিআই দফতর ছাড়লেন রাজীব কুমার। নগরপাল সিবিআই দফতর ছাড়ারও প্রায় আধ ঘণ্টা পর বাইরে আসেন কুণাল ঘোষ। মুখে এক গাল হাসি। শিলংয়ে পৌঁছনো ইস্তক সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখে প্রায় কুলুপ এঁটেছিলেন এই সাংসদ। সোমবার সন্ধ্যায় বেশ খোস মেজাজে থাকা কুণাল বলেন,“ এত দিন পর রাজীব কুমারকে সিবিআইয়ের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছে। এত দিন পর আমার সমস্ত অভিযোগ রাজীবকে বসে শুনতে হয়েছে। মনে করি এটাই আমার নৈতিক জয়।” পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, “জিজ্ঞাসাবাদের সময় কী নিয়ে কথা হয়েছে মন্তব্য করব না। তবে আমার যাযা বলার বলেছি। শুনেছি রাজীব কুমরাকে আগামী কাল ১১টায় আবার ডাকা হয়েছে।”

তবে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয় নিয়ে মুখ না খুললেও এ দিন জিজ্ঞাসাবাদের শেষ পর্বে কী বলেছেন তা নিয়ে মুখ খুলেছেন কুণাল। বলেন, “রাজীব কুমারের সামনে বসেই সিবিআইকে আমি বলেছি যে, আমি যে বয়ান দিয়ে গেলাম, তার জেরে এ বার কলকাতায় আমার বিপন্নতা বাড়বে বলে আশঙ্কা করছি। কলকাতা পুলিশকে দিয়ে আমার উপর প্রতিহিংসা চরিতার্থ করানোর চেষ্টা হবে বলে আমার আশঙ্কা। বয়ানে আমি যে সব সাক্ষীর নাম বলেছি, আশঙ্কা করছি এ বার তাঁদেরও প্রভাবিত করা হবে এবং মুখ না খোলার জন্য চাপ দেওয়া হবে।” রাজীব কুমার বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার থাকাকালীন কুণাল ঘোষকে সারদা মামলায় গ্রেফতার করেছিল রাজ্য সরকার গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)।

Advertisement

শনি এবং রবিবার মিলিয়ে প্রায় ৭ ঘণ্টারও বেশি সময় কুণাল ঘোষের মুখোমুখি হতে হয়েছে পুলিশ কমিশনারকে। শিলং যাওয়ার আগেই ওই প্রাক্তন সাংসদ ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তিনি তদন্তে সিবিআইকে সাহায্য করতে প্রস্তুত। সিবিআই সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দরারা কুণালকে তাঁর অভিযোগের সপক্ষে সমস্ত তথ্য এবং প্রমাণ নিয়ে যেতে বলেছিলেন। আর কুণালের কথা থেকে স্পষ্ট যে, রাজীব কুমারের মুখোমুখি বয়ান রেকর্ডের সময় তিনি তাঁর ঝুলিতে থাকা অনেক কিছুই উপুড় করেছেন সিবিআইয়ের টেবিলে। সিবিআই সূত্রে ইঙ্গিত, আর সেখান থেকেই আরও একটু দীর্ঘায়িত হল রাজীব কুমারের শিলংবাসের মেয়াদ।

আরও পড়ুন: রাজীব-কুণাল যৌথ প্রশ্নোত্তর শেষ, নগরপালকে ডাকা হতে পারে কালও​

সিবিআই সূত্রে এর আগেই জানা গিয়েছিল, শনিবার রাজীব কুমারের মুখোমুখি হয়ে তাঁদের তিন এসপি এবং তদন্তকারী আধিকারিক পাখির চোখ করেছিলেন চিটফান্ড তদন্তের জন্য রাজ্য সরকার গঠিত সিটকেই। ওই দল কীভাবে গঠন করা হল, কার নির্দেশে গঠন করা হয়েছিল বা কোন কোন মামলা তাঁরা তদন্ত শুরু করেছিলেন সবই উঠে আসে সিট প্রসঙ্গে।

সিবিআই সূত্রে স্বীকার করা হয়েছে, দুঁদে আইপিএস রাজীব কুমার বোধহয় প্রস্তুতই ছিলেন সেই সব প্রশ্নের জন্য। স্নায়ুর লড়াইয়ে একেক সময় তিনিই পাল্টা চাপে ফেলে দিয়েছিলেন পদমর্যাদা এবং অভিজ্ঞতায় অনেক জুনিয়র অফিসারদের। সিবিআই সূত্রে খবর, কিন্তু তাতেও সিট থেকে ফোকাস সরাননি তাঁদের আধিকারিকরা। কারণ, কুণালের করা অভিযোগও সিটকে কেন্দ্র করে।

তদন্তকারীদের ইঙ্গিত, কুণালের বয়ান এবং তাঁর দেওয়া তথ্যপ্রমাণই তদন্তকারীদের রাস্তা করে দেয় সিটের করা তদন্ত প্রসঙ্গে নিজেদের প্রশ্ন বিস্তার করতে। বারে বারেই উঠে আসে, সিটের অন্যতম এক গুরুত্বপূর্ণ আধিকারিক হিসাবে সেই সময়ে তদন্তে তিনি কী পেয়েছিলেন? সূত্রের খবর, নগরপাল সেই তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে বলতে গিয়ে এমন বেশ কিছু প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন যা, সিবিআই আধিকারিকদের কাছে পরবর্তী তদন্তের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রায় ২৫ ঘণ্টা পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে প্রশ্নোত্তর পর্ব চলার পরে এক বারও সিবিআই আধিকারিকদের মুখে কোনও অভিযোগ শোনা যায়নি যে, নগরপাল তদন্তে অসহযোগিতা করছেন।

আরও পড়ুন: কিসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব? অন্য একটা গোষ্ঠীর নাম বলুন তো! কৃষ্ণগঞ্জে দাঁড়িয়ে চ্যালেঞ্জ অভিষেকের​

সিবিআই সূত্রে ইঙ্গিত সারদাপর্ব গুটিয়ে এবার তাঁদের নজর রোজভ্যালি পর্বে। মঙ্গলবার তাঁদের ফোকাস অনেকাংশেই রোজভ্যালি। কারণ সিবিআইয়ের অভিযোগ, দুর্গাপুরে রোজভ্যালির বিরুদ্ধে হওয়া মামলা সিবিআইয়ের কাছে গোপন করেছিল সিট। সেই প্রসঙ্গ যেমন আসতে পারে মঙ্গলবার, তার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে রোজ ভ্যালির আগের তদন্তকারী আধিকারিক ব্রতীন ঘোষালকে নিয়ে কলকাতা পুলিশের টানাটানি প্রসঙ্গও। তালিকায় থাকার যথেষ্ট সম্ভাবনা সেই বিতর্কিত ম্যাডাম রোজভ্যালি পর্বও। কারণ সিবিআইয়ের অভিযোগ, তাঁরা রোজভ্যালি তদন্ত শুরু করার পরও, কলকাতা পুলিশ ঘুর পথে অন্য মামলার সূত্র ধরে রোজভ্যালি তদন্তে ঢুকেছে। তাই সিবিআইয়ের গোয়েন্দাদের ইঙ্গিত মঙ্গলবারও দীর্ঘায়িত হতে পারে বয়ান রেকর্ড পর্ব।

তবে নগরপালের ঘনিষ্ঠদের সূত্রে জানা যাচ্ছে, এই স্নায়ু যুদ্ধের জন্য অনেকটাই প্রস্তুত ছিলেন রাজীব কুমার নিজেও। তাই তিনি আদৌ অধৈর্য হচ্ছেন না। কারণ এটাই শীর্ষ আদালতের কাছে সিবিআইয়ের করা অভিযোগের জবাবে তাঁর সবচেয়ে বড় হাতিয়ার যে, তিনি তদন্তে সহযোগিতা করতে কতটা আন্তরিক।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন