দিশাহীন কেন্দ্র, কাশ্মীরে ফাটল বাহিনীতে

দ্বিধাবিভক্ত নরেন্দ্র মোদী সরকার। দ্বিধাবিভক্ত নিরাপত্তা বাহিনীও। কাশ্মীরে অশান্তি সামলাতে কী রণকৌশল নেওয়া হবে, তার দিশা খুঁজে পাচ্ছে না কেন্দ্র। সেনাবাহিনী, আধাসেনা ও রাজ্য পুলিশেও সমন্বয়ে ফাটল ধরেছে।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ এপ্রিল ২০১৭ ০৪:৩৩
Share:

বিক্ষোভকারীদের রুখতে কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছে পুলিশ। ছবি: রয়টার্স

দ্বিধাবিভক্ত নরেন্দ্র মোদী সরকার। দ্বিধাবিভক্ত নিরাপত্তা বাহিনীও। কাশ্মীরে অশান্তি সামলাতে কী রণকৌশল নেওয়া হবে, তার দিশা খুঁজে পাচ্ছে না কেন্দ্র। সেনাবাহিনী, আধাসেনা ও রাজ্য পুলিশেও সমন্বয়ে ফাটল ধরেছে।

Advertisement

আজ সেনার কম্যান্ডারদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী অরুণ জেটলি। সেখানেও কাশ্মীরের প্রসঙ্গ উঠে এসেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকেও কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনীকে কী ভাবে সংযত করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, কাশ্মীরে ছররা বন্দুকের বদলে প্লাস্টিক বুলেট ব্যবহার করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ছররা বন্দুক ব্যবহার হবে দ্বিতীয় বিকল্প হিসেবে। এই প্লাস্টিক বুলেট ইনস্যাস রাইফেল থেকে ছোড়া যায়। উপত্যকার কোনও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়া শুরু করা যায় কি না, তা নিয়েও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল-সহ শীর্ষ কর্তারা আলোচনা করেন।

কিন্তু নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, সেনা যদি কাশ্মীরি যুবককে জিপের সামনে বেঁধে ঘোরানোর পরেও দুঃখপ্রকাশ না করে, তা হলে পুলিশ বা সিআরপি সংযত হয়ে কোনও লাভ হবে না। কাশ্মীরি যুবককে জিপের সামনে বেঁধে ঘোরানোর ঘটনায় সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনী যে এক সুরে কথা বলছে না, তা-ও স্পষ্ট। জেনারেল বিপিন রাওয়তের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী এখনও এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানাচ্ছে। সেনাপ্রধান রাওয়ত আজ কম্যান্ডারদের বৈঠকে বলেন, ‘‘সেনাবাহিনীর যে দৃঢ় ভাবমূর্তি ও সুনাম রয়েছে, তা আরও জোরদার করতে হবে।’’ ওই ঘটনায় রাজ্য পুলিশ এফআইআর করলেও, সেনাবাহিনী কোনও ‘কোর্ট অফ এনকোয়ারি’-র নির্দেশ দেয়নি। শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ ভাবে ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

Advertisement

আরও পড়ুন:সংঘর্ষে ফের রণক্ষেত্র কাশ্মীর

সরকারি ভাবে এখনও মোদী সরকার সেনার পাশেই রয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগিও একে সমর্থন জানিয়েছেন। কিন্তু ঘরোয়া আলোচনায় মোদী সরকারের এক এক মন্ত্রী এক এক সুরে কথা বলছেন। এক মন্ত্রীর যুক্তি, ওই ঘটনায় তরুণ সেনা অফিসার ঠিক কাজই করেছেন। কারণ তিনি ১৫ জনের দল নিয়ে ৯ জন সরকারি ভোট কর্মী, ১২ জন ভারত-তিব্বত সীমান্ত পুলিশ ও রাজ্য পুলিশের ২ কর্মীকে উদ্ধার করতে গিয়েছিলেন। তাঁদের উদ্ধার করতে যারা পাথর ছুড়ছিল তাদের মধ্যেই এক জনকে জিপের সামনে বেঁধে নিয়ে আসেন। না হলে অনেক রক্ত ঝরত। পাথর ছোড়ার মুখে গুলি চালানো ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। আর এক মন্ত্রীর যুক্তি, আবেগের সঙ্গে আইনের কোনও সম্পর্ক নেই। কোনওভাবেই সেনা নিজের হাতে আইন তুলে নিতে পারে না। তাঁর যুক্তি, ফারুক দার নামে ওই যুবক জানিয়েছেন তিনি ভোট দিতে যাচ্ছিলেন। এই ঘটনার পরে কাশ্মীরের যুবকরা ভোটবিমুখ হয়ে পড়বেন।

আধাসেনা ও রাজ্য পুলিশের কর্তাদের মধ্যেও এ নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। তাঁদের যুক্তি, উপত্যকার গলিতে গলিতে পুলিশ-আধাসেনারই সদস্য মোতায়েন থাকেন। সেনা মাঠে নামে জঙ্গি দমন অভিযানে। তাই কাশ্মীরি যুবককে ‘মানব ঢাল’ হিসেবে ব্যবহার করার মতো ‘অমানবিক’ আচরণের মূল্য পুলিশ-আধাসেনাকেই চোকাতে হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন