রাজনাথের দিকে আঙুল ইবোবির

নাগাদের অবরোধ ও মণিপুরে নতুন সাত জেলা গঠনকে ঘিরে তৈরি জটিলতার জন্য কেন্দ্রকেই কাঠগড়ায় তুললেন মণিপুরের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী ওক্রাম ইবোবি সিংহ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬ ০১:৪৮
Share:

নাগাদের অবরোধ ও মণিপুরে নতুন সাত জেলা গঠনকে ঘিরে তৈরি জটিলতার জন্য কেন্দ্রকেই কাঠগড়ায় তুললেন মণিপুরের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী ওক্রাম ইবোবি সিংহ। অশান্তির পিছনে থাকা নাগা সংগঠনগুলোর সঙ্গে কেন্দ্রের গোপন বোঝাপড়ার অভিযোগ তুলেছেন ইবোবি। যদিও এই যোগসাজশের অভিযোগ আজ উড়িয়ে দিয়ে নাগাদের ভূমিকার সমালোচনা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষে বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, এ ধরনের অবরোধ মানবতা-বিরোধী। কেন্দ্র এই অবরোধকে কোনও ভাবেই সমর্থন করে না।

Advertisement

প্রায় চল্লিশ দিন ধরে নাগাদের অবরোধের শিকার মণিপুরের মানুষ। টানা অবরোধে প্রতিদিনই দাম বাড়ছে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের। মন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে, ‘‘গত কয়েক দিন ধরে ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়কে অবরোধের ফলে মণিপুরে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সঙ্কট তৈরি হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে তাই ইউএনসিকে অবিলম্বে অবরোধ প্রত্যাহার করার অনুরোধ করা হচ্ছে।’’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘‘যে কোনও বিক্ষোভ মানবতা-বিরোধী। সরকার চায় প্রতিটি দাবিই শান্তিপূর্ণ ভাবে ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধান হোক।’’

কেন্দ্র শান্তির বার্তা দিলেও, মণিপুর প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্বের দাবি, সামনে বিধানসভা নির্বাচন। তাই খোদ দিল্লিই চাইছে মণিপুরে অশান্তি ছড়াক। এই কাজে মদত দিচ্ছেন কেন্দ্রের মন্ত্রীরা। অভিযোগ, সম্প্রতি মণিপুরে বরাক ও মাকরু সেতুর শিলান্যাসে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় পরিবহণমন্ত্রী নিতিন গডকড়ী ও মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর। নিতিনের ঘোষণা ছিল, মণিপুরে ১ হাজার ৮৭৭ কিলোমিটার সড়ক তৈরি ও প্রয়োজনীয় সেতু-কালভার্ট গড়ার জন্য ২২ হাজার কোটি টাকা খরচ করবে কেন্দ্র। সে জন্য রাজ্য সরকারকে দ্রুত জমি অধিগ্রহণ করে, রাজ্যে অবরোধ-বন্‌ধ থামিয়ে বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ গড়তে হবে। অন্য দিকে রাজনৈতিক ভাবে রাজ্য সরকারকে আক্রমণ শানিয়ে প্রকাশ জাভড়েকর অভিযোগ করেছিলেন, রাজনৈতিক স্বার্থে নাগাদের দুর্বল করতেই মণিপুরে সাতটি নতুন জেলা গড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ওক্রাম ইবোবি সিংহ। যার জেরেই এই অশান্তি বেড়ে চলেছে।

Advertisement

এরপরেই মুখ খোলেন ইবোবি। মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ‘‘রাজ্য সরকার কখন, কেন জেলা গড়বে তা নিয়ে তৃতীয় পক্ষের অনুমতি নেওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই।’’ তাঁর দাবি, এনএসসিএন (আইএম)-এর মদতে রাজ্যে অশান্তি চলছে। জঙ্গিরা এক দিকে, কেন্দ্রের সঙ্গে শান্তি আলোচনা করছে। অন্য দিকে, সংঘর্ষবিরতি চুক্তিকে ঢাল করে নাশকতা চালাচ্ছে। নাগাদের উস্কে দেওয়া হচ্ছে। জঙ্গিদের হয়ে সামনে থেকে অবরোধ চালাচ্ছে ইউএনসি। মুখ্যমন্ত্রীর বলেন, ‘‘অবরোধের দায় কোনও ভাবেই কেন্দ্র তথা প্রধানমন্ত্রী এড়াতে পারেন না।” কংগ্রেসের দাবি, বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যবাসীকে খাদ্য-জ্বালানি-টাকার সমস্যায় ফেলে রাজ্য সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষকে বিরূপ করে তুলতে চাইছে বিজেপি। ইবোবি সরাসরি আঙুল তুলেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দিকে। তিনি বলেন, “রাজনাথ সিংহের কাছে জাতীয় সড়কে অবরোধ তুলতে হস্তক্ষেপ করার আর্জি জানিয়েছিলাম। উল্টে রাজনাথ জানান, নাগা অধ্যুষিত সদর হিল যাতে পৃথক জেলা না-হয়, তার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। এর থেকেই ষড়যন্ত্রের ছবি স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে।” যদিও এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কেন্দ্র জানিয়েছে, মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। হাইকোর্টও অবরোধ হঠিয়ে পণ্য ও জ্বালানিবাহী ট্রাক-ট্যাঙ্কার রাজ্যে আনার নির্দেশ দিয়েছে। ধাপে ধাপে আটকে থাকা ট্রাক ও ট্যাঙ্কার ইম্ফলে আনা শুরু হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement