Sanchar Saathi Row

সব মোবাইলে সরকারি অ্যাপ: নজরদারির ‘পেগাসাস’-ভূত দেখছেন বিরোধীরা! চাইলেই ‘ডিলিট’ করা যাবে, বলল কেন্দ্র

কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কে সি বেণুগোপালও প্রশ্ন তুলেছেন কেন্দ্রের নয়া নির্দেশিকা ঘিরে। সমাজমাধ্যমে তিনি লেখেন, জীবন ও স্বাধীনতার মৌলিক অধিকারের একটি অন্তর্নিহিত অংশ হল গোপনীয়তার অধিকার। তবে এই বিতর্কের মাঝে ব্যাখ্যা দিয়েছে কেন্দ্রও।

Advertisement

আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৩:০৮
Share:

‘সঞ্চার সাথী’ অ্যাপ ঘিরে বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে কেন্দ্র। সমালোচনার মাঝে ব্যাখ্যা দিল সরকারও। —প্রতীকী চিত্র।

‘সঞ্চার সাথী’ বিতর্কে অবশেষে নীরবতা ভাঙল কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় যোগাযোগ মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য শিন্দে জানালেন, মোবাইলে এই সরকারি অ্যাপ রাখা বাধ্যতামূলক নয়। চাইলে ব্যবহারকারীরা অ্যাপটি মোবাইল থেকে ডিলিটও করতে পারবেন। মঙ্গলবার সকালে সংসদ চত্বরে দাঁড়িয়ে এমনটাই জানালেন নরেন্দ্র মোদীর মন্ত্রিসভার অন্যতম সদস্য। বস্তুত, মঙ্গলবার সকাল থেকেই এই সরকারি অ্যাপ ঘিরে কেন্দ্রকে সমালোচনায় বিঁধতে শুরু করেছে বিরোধী দলগুলি। এ অবস্থায় কেন্দ্রের এই ব্যাখ্যা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।

Advertisement

সাইবার নিরাপত্তা বৃদ্ধির কথা বলে কি কেন্দ্র আড়ালে সাধারণ জনতার গোপনীয়তার উপর হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে? কেন্দ্রীয় সরকারের নয়া নির্দেশিকা ঘিরে এই প্রশ্নই তুলতে শুরু করে দিয়েছে বিরোধীরা। কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেসের মতো দলগুলি স্মরণ করিয়ে দিতে থাকে অতীতের পেগাসাস বিতর্কের কথাও। ‘সঞ্চার সাথী’কে নিয়ে বিতর্কের সূত্রপাত কেন্দ্রের সাম্প্রতিক একটি নির্দেশিকা ঘিরে। সম্প্রতি বিভিন্ন মোবাইল প্রস্তুতকারক সংস্থাকে একটি নির্দেশিকা পাঠায় কেন্দ্র। তাতে বলা হয়, নতুন মোবাইল বাজারে আসার আগে থেকে সেগুলিতে ‘সঞ্চার সাথী’ অ্যাপ ইনস্টল করা থাকতে হবে।

অতীতে পেগাসাস সফ্‌টঅয়্যার ঘিরেও বিতর্ক দানা বেঁধেছিল দেশের রাজনীতির অন্দরে। তখনও কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস-সহ বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দল পেগাসাসের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। এ বার ‘সঞ্চার সাথী’ অ্যাপ মোবাইলে ইনস্টল করার নির্দেশ ঘিরে ফের পেগাসাস-ভূত দেখতে শুরু করেছেন বিরোধীরা। কংগ্রেস সাংসদ কার্তি চিদম্বরম সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘আমাদের ফোন এবং ব্যক্তিগত জীবনেরও অনেকটা দখল নিয়ে নেবেন বিগ ব্রাদার। এটা তো পেগাসাস প্লাস প্লাস।’

Advertisement

কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কে সি বেণুগোপালও প্রশ্ন তুলেছেন কেন্দ্রের নয়া নির্দেশিকা ঘিরে। সমাজমাধ্যমে তিনি লেখেন, জীবন ও স্বাধীনতার মৌলিক অধিকারের একটি অন্তর্নিহিত অংশ হল গোপনীয়তার অধিকার। তাঁর বক্তব্য, “বিগ ব্রাদার আমাদের উপরে নজরদারি করতে পারেন না। টেলিযোগাযোগ দফতরের এই নির্দেশিকা অসাংবিধানিক। গোপনীয়তার অধিকার সংবিধানের ২১ অনুচ্ছেদের অন্তর্ভুক্ত জীবন ও স্বাধীনতার মৌলিক অধিকারের একটি অন্তর্নিহিত অংশ।” সমাজমাধ্যমে কংগ্রেস নেতার দাবি, ‘আনইনস্টল করা যাবে না এমন একটি প্রি-লোডেড সরকারি অ্যাপ প্রত্যেক ভারতীয়ের উপর নজর রাখার জন্য একটি ভয়ঙ্কর হাতিয়ার।’

কেন্দ্রের এই নির্দেশিকা অবিলম্বে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। প্রতিবাদে সরব হয়েছে তৃণমূল শিবিরও। পশ্চিমবঙ্গের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “এই সরকারের কাজই হচ্ছে ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ করা। এটাও তেমনই একটি চাল। ওরা এর আগে পেগাসাস নিয়ে এসে ফোনে আড়ি পেতেছিল। এ বার সাধারণ নাগরিকদের গোপনীয়তার অধিকারও ওরা কেড়ে নিতে চাইছে। এটা অত্যন্ত ঘৃণ্য কাজ। এর পর হয়তো বলবে, প্রত্যেকের বাড়ির ভিতরে কী চলছে, তা-ও ওদের দেখতে দিতে হবে।” বস্তুত, অতীতে পেগাসাস বিতর্কে কেন্দ্রীয় সরকারকে ধারাবাহিক নিশানা করেছিল তৃণমূল। বার বার সরব হয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

মোবাইলে সরকারি অ্যাপ বিতর্ক মঙ্গলবার সকালে উঠে আসে সংসদেও। সংসদে এ নিয়ে আলোচনা চেয়েছে কংগ্রেস। মোবাইলে ‘সঞ্চার সাথী’ অ্যাপ সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা চেয়ে মঙ্গলবার রাজ্যসভায় মুলতুবি প্রস্তাব জমা দিয়েছেন কংগ্রেস সাংসদ রেণুকা চৌধরি। সংসদের চত্বরে মঙ্গলবার এই বিতর্ক নিয়ে মন্তব্য করেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধীও। তিনি বলেন, “এটি একটি স্নুপিং (নজরদারি) অ্যাপ। নাগরিকদের গোপনীয়তার অধিকার রয়েছে। সকলের গোপনীয়তার আধিকার থাকা উচিত। তাঁরা পরিবার বা বন্ধুদের কাছে কী মেসেজ পাঠাচ্ছেন, তা যেন সরকার না দেখে।” কেন্দ্রীয় সরকার একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ তুলেছেন প্রিয়ঙ্কা।

এই বিতর্কের মাঝে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দিয়েছেন শিন্দে। তিনি বলেন, “মোবাইলের অপব্যবহার করে অনেকে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছেন। তাঁদের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন। সেই কারণেই সঞ্চার সাথী অ্যাপের নিয়ম তৈরি করা হয়েছে। এর নেপথ্যে কোনও স্নুপিং (নজরদারি) বা কল মনিটরিং-এর ব্যাপার নেই। আপনি চাইলে এটি অ্যাক্টিভেট করুন। না চাইলে অ্যাক্টিভেট করবেন না। আপনারা রাখতে চাইলে রাখুন, ডিলিট করতে চাইলে ডিলিট করুন।”

তিনি আরও বলেন, “যদি আপনার সঞ্চার সাথী ব্যবহার না-করার হয়, তা হলে ডিলিট করে দেবেন। এটি অপশনাল। এটি ক্রেতা সুরক্ষার বিষয়। ডিলিট করতে চাইলে আপনারা ডিলিট করে দেবেন। বাধ্যতামূলক কিছু নয়। উদাহরণ হিসাবে, আপনার যদি অ্যাপটি ব্যবহার না-করার হয়, তা হলে রেজিস্টার করবেন না।” তা হলে কেন কেন্দ্র এই সিদ্ধান্ত নিল, সেই ব্যাখ্যাও দিয়েছেন শিন্দে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কথায়, “সাইবার প্রতারণা থেকে সুরক্ষার জন্য এমন একটি অ্যাপ রয়েছে তা সকল দেশবাসী জানেন না। তাঁদের এ বিষয়ে জানানো আমাদের দায়িত্ব।”

কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজুও মঙ্গলবার সংসদের অধিবেশন শুরুর আগে বলেছেন, “বিরোধীদের সব ক্ষেত্রেই কিছু না কিছু সমস্যা খুঁজে বার করার চেষ্টার কোনও দরকার নেই। হট্টগোল পাকানোর জন্য সব কিছুকে হাতিয়ার করবেন না।” বিজেপি সাংসদ শশাঙ্কমণি ত্রিপাঠীও বিরোধীদের জবাব দিয়েছেন। শশাঙ্কের বক্তব্য, এই পদক্ষেপটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, “আমি আইআইটি-তে পড়াশোনা করেছি। আমি বুঝতে পারি কী ধরনের সাইবার হামলা হচ্ছে। এই অ্যাপটি মানুষের নিরাপত্তা বৃদ্ধি করবে। আমাদের ডেটা কোথাও চলে যাবে না। নাগরিক সুরক্ষার প্রতিটি দিক নিশ্চিত থাকবে।”

মঙ্গলবার সংসদে এসআইআর নিয়েও হট্টগোল হয়। বিরোধীদের হট্টগোলের জেরে দুপুর ২টো পর্যন্ত মুলতুবি করে দেওয়া হয় রাজ্যসভা। একই পরিস্থিতি তৈরি হয় লোকসভাতেও। সেখানও দফায় দফায় মুলতুবি হয় অধিবেশন। প্রথমে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মুলতুবি করে দেওয়া হয় লোকসভা। পরে অধিবেশন শুরু হলে আবার হট্টগোল শুরু হয়। যার জেরে দুপুর ২টো পর্যন্ত মুলতুবি হয়ে যায় সংসদের নিম্নকক্ষও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement