এক নালিশ বাম-তৃণমূলের, ওড়ালেন জেটলি

কেন্দ্রীয় বাজেটে রাজ্যের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে! নরেন্দ্র মোদীর সরকারের ক্ষেত্রেও যার অন্যথা হল না। পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূলের বক্তব্য, রাজ্য বঞ্চিত। অথচ, বিজেপি এমন প্রত্যাশা তৈরি করেছিল যে, মনে হচ্ছিল, নব্বই দশকের গোড়ায় মনমোহন সিংহের বাজেটের মতো চমকপ্রদ কিছু হতে চলেছে দেশজুড়ে। তৃণমূলের দাবি, এই বাজেট দেশকে বিপর্যয়ের দিকেই ঠেলে দেবে।

Advertisement

অগ্নি রায় ও অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৪ ০৩:৩২
Share:

কেন্দ্রীয় বাজেটে রাজ্যের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে! নরেন্দ্র মোদীর সরকারের ক্ষেত্রেও যার অন্যথা হল না।

Advertisement

পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূলের বক্তব্য, রাজ্য বঞ্চিত। অথচ, বিজেপি এমন প্রত্যাশা তৈরি করেছিল যে, মনে হচ্ছিল, নব্বই দশকের গোড়ায় মনমোহন সিংহের বাজেটের মতো চমকপ্রদ কিছু হতে চলেছে দেশজুড়ে। তৃণমূলের দাবি, এই বাজেট দেশকে বিপর্যয়ের দিকেই ঠেলে দেবে। আজ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বাজেট পেশ করার এক ঘণ্টার মধ্যেই তার সমালোচনায় মুখর হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গকে রেল বাজেটের মতো এ ক্ষেত্রেও বঞ্চিতই রাখা রয়েছে।

সিপিএমের পলিটব্যুরোও বাজেটের তীব্র সমালোচনা করেছে। তাদের পেশ করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নতুন সরকার এই বাজেটের মাধ্যমে দেশকে আরও বেশি করে বিদেশি পুঁজির সামনে খুলে দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

Advertisement

বাজেট নিয়ে কেন্দ্রের মোদী সরকারকে কড়া আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ফেসবুক পেজ-এ লিখেছেন, “এটি এফডিআইয়ের জন্য, এফডিআই দ্বারা পরিচালিত এফডিআইয়ের সরকার!” বৃহস্পতিবার বীরভূম জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে যোগ দিতে বোলপুরে যান মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেও রাজ্যের প্রতি বঞ্চনা নিয়ে সরব হয়েছেন তিনি। এই প্রসঙ্গে রেল বাজেটের উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “পর পর দুটি বাজেটেই বাংলা-সহ আরও কিছু রাজ্য কিছুই পায়নি। কেন্দ্রের নতুন সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নিয়ে কাজ করছে।”

তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রক। তাদের বক্তব্য, বিভিন্ন ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের জন্য বরাদ্দ গত বারের তুলনায় অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে। যে সব ক্ষেত্রে এখন বাড়ানো সম্ভব হয়নি, সেগুলি আগামী এক বছরের মধ্যে করে দেওয়া হবে বলেও দাবি অর্থ মন্ত্রকের। আর কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর কথায়, “শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, প্রত্যেকটি রাজ্যকেই কিছু না কিছু দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী যদি বলেন যে বরাদ্দ কম হয়েছে, তা হলে আমি বলব, উন্নয়নের জন্য আগে জমিটা তো দিন!”

অর্থ মন্ত্রকের বক্তব্য, গত সরকারের আমলে শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে পূর্ণাঙ্গ স্টেট ইউনিভার্সিটি-র মর্যাদা দেওয়া হলেও গত সরকার মাত্র ১০ লক্ষ টাকা ধার্য করেছিল। এ বারে সেই বরাদ্দ বাড়িয়ে ১০৭ কোটি ৯৫ লক্ষ টাকা করা হয়েছে। একই ভাবে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিকাল ইনস্টিটিউট তথা আইএসআই-এর জন্য গত বারের ১৬৩ কোটি ৯৯ লক্ষ টাকা বরাদ্দ বাড়িয়ে এ বারে করা হয়েছে ২৩৯ কোটি ৯৯ লক্ষ টাকা। ফরাক্কা ব্যারাজ প্রকল্পে বরাদ্দ ১১৫ কোটি থেকে বাড়িয়ে ১৫০ কোটি করা হয়েছে। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল-এর উন্নতিকল্পে গত বার মাত্র ১১ কোটি ২১ লক্ষ টাকা দেওয়া হলেও এ বারে ৩৫ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছে। বেড়েছে এশিয়াটিক সোসাইটির বরাদ্দ-ও।

সামগ্রিক ভাবে কেন্দ্রীয় বাজেট নিয়ে অসন্তুষ্ট তৃণমূল। তাদের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “একটি দাবি আমরা গত কয়েক বছর ধরে করে আসছি। সেটি হল পশ্চিমবঙ্গের বিপুল ঋণের উপর সুদ মকুব করতে হবে। কিন্তু ইউপিএ-র মতোই এনডিএ-র বাজেটেও বিষয়টির উল্লেখ তো দূরস্থান, বাংলার জন্য সে ভাবে কোনও বরাদ্দই রাখা হয়নি।” তাঁর কথায়, “বলা হয়েছিল, সরকার ক্ষমতায় আসার পর একশো দিনের মধ্যে কালো টাকা উদ্ধার করা হবে। কিন্তু কালো টাকা নিয়ে একটি শব্দও উচ্চারিত হয়নি বাজেটে!”

বহু ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার যে কেন্দ্রের চেয়ে ভাল প্রকল্প হাতে নিয়েছে, এ দিন তারও ব্যাখ্যা দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছেন, “কন্যাশ্রী প্রকল্পে একটি রাজ্যের জন্যই ১০০০ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু সারা দেশের জন্য ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ প্রকল্পে মাত্র ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র! এটা কি হাস্যকর নয়?”

তৃণমূল নেতৃত্বের ক্ষোভ, পশ্চিমবঙ্গের আর্থিক বোঝা লঘু করার কোনও চেষ্টা এই বাজেটে নেই। পাশাপাশি তাঁদের অভিযোগ, পাট, চা শিল্পের জন্য কোনও পদক্ষেপই করেনি কেন্দ্র। গভীর সমুদ্র বন্দর নিয়েও কোনও কথা নেই বাজেট ঘোষণায়। একই ভাবে কয়লার রয়্যালটি বাড়ানোর জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে গত কয়েক বছর ধরে দাবি করা হলেও মনমোহন সরকারের মতোই এই সরকারও বিষয়টিকেও কার্যত এড়িয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের। জেটলি অবশ্য বক্তৃতায় বলেছেন, “বেশ কিছু রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে খনিজ পদার্থের রয়্যালটি বাড়ানোর অনুরোধ এসেছে। প্রতি তিন বছর অন্তর এটি বাড়ানোর কথা। ২০০৯ সালের অগস্টে শেষ বার এটি বাড়ানো হয়েছে। ফলে বিষয়টি বকেয়া রয়েছে। রাজ্য সরকারগুলি যাতে এ বাবদে বেশি অর্থ পায়, সেই লক্ষ্যে এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” শিলিগুড়িতে যে ‘স্টেট রিকভারি ট্রাইবুনাল’ গড়ার সিদ্ধান্ত আজ বাজেটে ঘোষণা হয়েছে, তাকে ‘নগণ্য’ বলেই মন্তব্য করেছেন সৌগতবাবু।

দেশের মধ্যে বস্ত্র শিল্পে উল্লেখযোগ্য অবস্থান থাকলেও কেন বাজেটে ঘোষিত নতুন ছ’টি বস্ত্র শিল্পের ক্লাস্টারের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গকে রাখা হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ফল-সবজির অন্যতম উৎপাদক রাজ্য হয়েও প্রস্তাবিত হর্টিকালচার বিশ্ববিদ্যালয় কেন এ রাজ্যে হচ্ছে না, সে নিয়েও উষ্মা প্রকাশ করেছেন তিনি।

বাজেটের সমালোচনা করে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, “নির্বাচনী প্রচারে আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ দেখিয়ে ক্ষমতায় এসে এরা প্রথম বাজেটেই প্রদীপ সরিয়ে অন্ধকার করে দিল!” কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়া বলেন, “প্রতিরক্ষায় বিদেশি বিনিয়োগের ফলে দেশের সার্বভৌমত্ব কতটা রক্ষিত হবে, তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন