সাংবাদিক সম্মেলনে চন্দা কোছর। —ফাইল চিত্র
অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে গেলেন ভিডিয়োকন গোষ্ঠীকে ৩২৫০ কোটির ঋণ কাণ্ডে অভিযুক্ত আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) চন্দা কোছর। তাঁর জায়গায় চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সন্দীপ বক্সিকে। চন্দার বিরুদ্ধে এক ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করেছে। সেই তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি ছুটিতে থাকবেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে ব্যাঙ্কের যাবতীয় কাজকর্ম সামলাবেন সন্দীপ বক্সি। যদিও চন্দাকে তাঁর পদ থেকে সরানো হয়নি।
সোমবার ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের তরফে একটি বিবৃতি জারি করে জানানো হয়, আইসিআইসিআই প্রুডেন্সিয়াল লাইফ ইনস্যুরেন্স-এর সিইও সন্দীপ বক্সিকে পাঁচ বছরের জন্য সংস্থার সিওও পদে নিযুক্ত করা হচ্ছে। একই সঙ্গে চন্দার ছুটিতে যাওয়ার বিষয়টি জানানো হয় ওই বিবৃতিতে। তবে নতুন সিওও সন্দীপ বক্সিও সমস্ত বিষয়ে চন্দাকেই রিপোর্ট করবেন। কারণ চন্দাকে তাঁর পদ থেকে সরানো হয়নি।
অভিযোগের তির
• ২০১২ সালে ভিডিয়োকনকে ৩,২৫০ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক।
• ঋণ পাওয়ার পরেই চন্দার স্বামী দীপক কোছরের নিউ পাওয়ার রিনিউয়েবল্সে অন্য এক সংস্থা মারফত ৬৪ কোটি টাকা ঢালেন ভিডিয়োকন কর্তা বেণুগোপাল ধুত।
• যে প্রতিষ্ঠান মারফত নিউ পাওয়ারে ৬৪ কোটি ঢালা হয়, সেটির মালিকানাও হস্তান্তর হয় দীপকের গড়া ট্রাস্টের হাতে।
• ভিডিয়োকনের ধারের ৮৬% অনুৎপাদক সম্পদ।
• অভিযোগ ওঠে, দীপক ও তাঁর আত্মীয়দের সুবিধা দেওয়ার বদলেই ভিডিয়োকনকে ঋণ মঞ্জুরের সুবিধা দিয়েছেন চন্দা। একই ধরনের অভিযোগ উঠেছে এসারের বেলাতেও।
এখনও যা...
২৯ মার্চ
• চন্দার পাশেই ব্যাঙ্ক। জানাল, ঋণ মঞ্জুরির সিদ্ধান্ত তাঁর একার নয়। তা প্রভাবিত করার ক্ষমতাও তাঁর একার নেই। রাখল পূর্ণ আস্থা।
৩০ মে
• একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে চন্দার বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ ব্যাঙ্কের।
১৮ জুন
• তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত চন্দা ছুটিতে, জানাল ব্যাঙ্ক।
• চন্দার অনুপস্থিতিতে ব্যাঙ্কের কাজ সামলাবেন সন্দীপ বক্সী। বর্তমানে আইসিআইসিআই প্রুডেন্সিয়াল লাইফের এমডি-সিইও।
• তাঁকে দেওয়া হচ্ছে সিওও এবং পূর্ণ সময়ের ডিরেক্টরের দায়িত্ব। রিপোর্ট আপাতত পর্ষদকেই।
২০১২ সালে ভিডিয়োকন গোষ্ঠীকে ৩২৫০ কোটির ঋণ মঞ্জুর করেন চন্দা। ভিডিয়োকন গোষ্ঠী সেই টাকা চন্দার স্বামী দীপক কোছরের প্রতিষ্ঠিত সংস্থা ‘ন্যুপাওয়ার রিনিউঅ্যাবলস’-এ বিনিয়োগ করার পরই অভিযোগ ওঠে, এই ঋণ থেকে চন্দা কোছারের পরিবার সুবিধা পেয়েছে। পাশাপাশি ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ম ভেঙেছেন বলেও চন্দাকে কাঠগড়ায় তোলা হয়। যদিও সেই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে চন্দার উপরেই আস্থা রাখে সংস্থা।
আরও পড়ুন: কোন কৌশলে অর্থ পাচার করেছিলেন নীরব মোদী
কিন্তু গত মাসের ৩০ তারিখ সংস্থা জানায়, চন্দা কোছরের স্বার্থের সংঘাত এবং বেনিয়ম—দু’টি বিষয়েই অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি আর এন শ্রীকৃষ্ণর নেতৃত্বে একটি অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তার আগে এবছরের এ প্রিলেই তদন্তে নামে ব্যাঙ্কগুলির নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি এবং কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। তার পরেই সোমবার সংস্থার পরিচালনার ক্ষেত্রে শীর্ষ স্তরের এই ঘোষণা তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
সম্প্রতি ইঙ্গিত মেলে সংস্থার শীর্ষ স্তরে বড়সড় রদবদল আসতে চলেছে। তারপর থেকেই চাঙ্গা হতে শুরু করে আইসিআইসিআই-এর শেয়ার। সোমবারও ৩.৬১ শতাংশ বেড়ে শেয়ারের দাম উঠেছে ২৯২.৫ টাকা।
আরও পড়ুন: ভারত দ্রুততম উন্নয়নশীল দেশ, দাবি জেটলির
১৯৮৪ সালে আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কে কর্মজীবন শুরু করেন। ২০০১ সালে তাঁকে বোর্ড অব ডিরেক্টর্সে নিয়োগ করা হয়। এরপর ২০০৭ থেকে সংস্থার জয়েন্ট এমডি-র দায়িত্ব সামলানোর পর ২০০৯ সালে সিইও পদে নিযুক্ত হন।