গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।
মহাত্মা গান্ধীর নাম বাদ দিয়ে মোদী সরকার গ্রামীণ রোজগার গ্যারান্টি আইনে যে বদল করছে, তাতে রাজ্যগুলির উপরে প্রতি বছর ৫৫ হাজার কোটি টাকার বেশি আর্থিক বোঝা চাপবে।
বিরোধীদের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও আজ মোদী সরকার লোকসভায় ‘ভিবি-জি রাম জি’ বা বিকশিত ভারত-গ্রামীণ রোজগার ও অজীবিকা মিশন গ্যারান্টি বিল পেশ করেছে। কেন মনরেগা বা মহাত্মা গান্ধী গ্রামীণ রোজগার গ্যারান্টি আইনে সংশোধন করে মহাত্মা গান্ধীর নাম মোদী সরকার বাদ দিচ্ছে, প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরা থেকে সৌগত রায়রা সকলেই প্রশ্ন তুলেছেন। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান তার সদুত্তর দিতে পারেননি। বিল পেশের সময় ‘জি রাম জি’-তে বাড়তি জোর দিয়ে শিবরাজ দাবি করেছেন, মোদী সরকার মহাত্মা গান্ধীর আদর্শেই চলছে। বিলে ‘রাম’ রয়েছে বলে বিরোধীরা আপত্তি করছেন বলেও যুক্তি দিয়েছেন। পুরনো হিন্দি ছবির গানের এক কলি উল্লেখ করে কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুরের কটাক্ষ, ‘‘রাম কা নাম বদনাম না করো।’’
মোদী সরকার এই বিলে ১০০ দিনের বদলে ন্যূনতম কাজের গ্যারান্টি ১২৫ দিন করার প্রস্তাব এনেছে। চলতি অর্থ বছরে রোজগার গ্যারান্টি প্রকল্পে ৮৬ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। নতুন বিলে বলা হয়েছে, নতুন ব্যবস্থায় রোজগার গ্যারান্টি প্রকল্পে প্রতি বছর প্রায় ১ লক্ষ ৫১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। কিন্তু তার মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার খরচ করবে প্রায় ৯৫ হাজার কোটি টাকা। যার অর্থ, প্রায় সাড়ে ৫৫ হাজার কোটি টাকা রাজ্য সরকারগুলোকে বহন করতে হবে। এত দিন একশো দিনের কাজের কর্মীদের মজুরির পুরো খরচই কেন্দ্রীয় সরকার দিত। আইনে সংশোধন করে মোদী সরকার সেই খরচের ৪০ শতাংশ বোঝা রাজ্যের উপরে ছেড়ে দিচ্ছে। বিরোধীরা এই বিল সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে আলোচনার জন্য পাঠানোর দাবি তুলেছেন। এ দিকে, বুধবারই বিলটি পাশের জন্য লোকসভায় তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিদেশ সফরে থাকাকালীন বিতর্কিত বিল পাশ করানো হবে কি না, প্রশ্ন।
লোকসভায় বিল পেশের সময়ই বিরোধিতা করে প্রিয়ঙ্কা অভিযোগ তুলেছেন, কাজের আইনি অধিকার নিশ্চিত করে রোজগার গ্যারান্টি আইন চালু হয়েছিল। যাতে গ্রামের মানুষ কাজ চাইলেই, তা তাদের পাওয়ার অধিকার থাকে। কিন্তু মোদী সরকার সেই অধিকার লঘু করতে চাইছে। এত দিন গ্রামসভাগুলো কাজের চাহিদা অনুমান করে রাজ্যকে খরচের হিসেব পাঠাত। রাজ্যের শ্রমিক বাজেট অনুযায়ী কেন্দ্র অর্থ বরাদ্দ করত। এখন কেন্দ্র নিজের ইচ্ছে মতো অর্থ বরাদ্দ করবে। ফলে কাজ চাইলেই মিলবে না। এক দিকে, মোদী সরকার নিজের হাতে ক্ষমতা কুক্ষিগত করছে। অন্য দিকে, আর্থিক দায় ঝেড়ে ফেলছে। কাজের দিন বাড়ালেও মজুরি বাড়াচ্ছে না।
মোদী সরকার গান্ধীজির নাম বাদ দিয়ে তাঁকে অপমান করছে বলে প্রিয়ঙ্কা অভিযোগ তোলেন। তৃণমূলের সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘‘আমরা সবাই রামকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু মহাত্মা গান্ধী আমার কাছে অনেক বেশি প্রাসঙ্গিক।’’ বিরোধীদের আপত্তি সত্ত্বেও শিবরাজ বিল পেশ করায় কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা গান্ধীর ছবি নিয়ে লোকসভায় ওয়েলে নেমে প্রতিবাদ করেন। তাঁরা গান্ধীর ছবি তুলে ধরতেই সংসদ টিভি-র ক্যামেরা সরিয়ে নেওয়া হয়। পরে বিরোধীরা সংসদ চত্বরে গান্ধী মূর্তির সামনে বিক্ষোভ দেখান। কংগ্রেসের একদল সাংসদ পুরনো সংসদ ভবনের গাড়িবারান্দার ছাদে উঠে স্লোগান তোলেন।
লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী বিবৃতি দিয়ে বলেন, মহাত্মা গান্ধীর আদর্শ ও গরিবের অধিকার— নরেন্দ্র মোদীর দু’টি বিষয়েই আপত্তি।
প্রতিদিন ২০০’রও বেশি এমন প্রিমিয়াম খবর
সঙ্গে আনন্দবাজার পত্রিকার ই -পেপার পড়ার সুযোগ
সময়মতো পড়ুন, ‘সেভ আর্টিকল-এ ক্লিক করে