হাইকোর্ট অবমাননার দায়ে ত্রিপুরার আইন সচিব দাতামোহন জামাতিয়ার বিরুদ্ধে ‘চার্জ’ গঠন করল ত্রিপুরা হাইকোর্ট।
ত্রিপুরা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক গুপ্ত এবং বিচারপতি এস সি দাসের ডিভিশন বেঞ্চ আজ জানিয়েছে, ‘‘আইন সচিবের আদালত অবমাননার দায় এড়ানোর জন্য যে সব তথ্য-প্রমাণ আদালতে হাজির করা হয়েছে, তা দেখে প্রাথমিক ভাবে এটা প্রমাণিত, যে সরকারি স্তরের কেউ না কেউ ‘সত্য’টা গোপন করছে। আদালতের কাজ এই সত্যটাই খুঁজে বের করা।’’ ডিভিশন বেঞ্চ আজ রাজ্যের আইন সচিবকে ডেকে তাঁর বিরুদ্ধে যে ‘চার্জ’ গঠন করা হল, তা শুনিয়ে দেন। তিনি নিজেকে ‘অপরাধী’ মনে করছেন কি না আদালত তাও জানতে চায়। দাতামোহন জামাতিয়া বলেন, ‘‘না।’’
উল্লেখ্য, চাকরির পদোন্নতিতে সংরক্ষণ নীতিকে কেন্দ্র করে ২০০৬ সালে শীর্ষ আদালতের একটি নির্দেশ ছিল। শীর্ষ আদালতের সেই নির্দেশের ভুল ব্যাখ্যা করে রাজ্য সরকার চাকরিতে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ‘সংরক্ষণ নীতি’ কার্যকর করে বলে অভিযোগ করে কিছু সরকারি কর্মচারী। পরবর্তী কালে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের ‘সংরক্ষণ নীতি’ বিরুদ্ধে একটি মামলাও হাইকোর্টে দায়ের হয়। সেই মামলার জেরে হাইকোর্ট রাজ্য সরকারকে একটি নির্দেশ দেয়। তারই প্রেক্ষিতে কয়েক মাস আগে ত্রিপুরার আইন সচিব তাঁর সরকারি ‘নোটে’ রাজ্যের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে তথা আইন মন্ত্রীকে তাঁর বক্তব্য জানান। সেখানে আইন সচিব দাতামোহন জামাতিয়া হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে তাঁর ক্ষোভ উগড়ে দেন। নোটে তিনি লেখেন, ‘‘ত্রিপুরা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি আমাদের ‘ডিমরালাইজ’ করার চেষ্টা করছেন, যাতে হাইকোর্টের কোনও নির্দেশের বিরুদ্ধে কোনও মতামত না জানানো হয়।’’ নোটে তিনি লেখেন, আদালতের এটা করার উদ্দেশ্যই হল, আইন সচিব এবং দফতরের সহ-সচিবের সার্ভিস রেকর্ডের উপর কালিমা লেপন করা। সেই ‘নোট’ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছেও যায়। বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে ত্রিপুরা হাইকোর্ট আইন সচিবের বিরুদ্ধে ‘সুয়ো মটো’ মামলা করেন। সেই মামলার জেরেই আজ আইন সচিবের বিরুদ্ধে ‘চার্জ’ গঠন করল ত্রিপুরা হাইকোর্ট। ডিভিশন বেঞ্চের তরফে প্রধান বিচারপতি দীপক গুপ্ত জানিয়ে দেন, ‘‘অনেক আলোচনার প্রেক্ষিতেই আদালত এই সিদ্ধান্ত নিল।’’ আইন সচিবের বিরুদ্ধে ‘আদালত অবমাননার’ চার্জ গঠিত হলেও সাজার কথা আজ আদালত জানায়নি। ত্রিপুরা হাইকোর্টের পক্ষে বরিষ্ঠ আইনজীবী পীযূষকান্তি বিশ্বাস জানান, ‘‘শাস্তি হিসেবে ১ দিন থেকে দু’বছর পর্যন্ত কারাবাস হতে পারে। চাকরিও খোয়াতে পারেন।’’