কবে খুলবে বিমানবন্দর, এখনও কাটছে না সংশয়

রবিবার বিকেল পর্যন্ত চেন্নাই বিমানবন্দর যে বন্ধ থাকছে, সে ঘোষণা হয়ে গিয়েছিল আগেই। কিন্তু পরিস্থিতি যা, তাতে রবিবার সন্ধ্যা বা সোমবারেও ওই বিমানবন্দর থেকে উড়ান চালু করা নিয়ে সংশয়ী কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:১০
Share:

হ্যাঁ, এটাই চেন্নাই বিমানবন্দর। ছবি: পিটিআই

রবিবার বিকেল পর্যন্ত চেন্নাই বিমানবন্দর যে বন্ধ থাকছে, সে ঘোষণা হয়ে গিয়েছিল আগেই। কিন্তু পরিস্থিতি যা, তাতে রবিবার সন্ধ্যা বা সোমবারেও ওই বিমানবন্দর থেকে উড়ান চালু করা নিয়ে সংশয়ী কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত চেন্নাইয়ের রানওয়ে প্রায় ৩ ফুট জলের তলায়। রানওয়ে থেকে জল নেমে গেলেও সঙ্গে সঙ্গে সেখানে বিমান ওঠানামা সম্ভব নয়। কারণ রানওয়েকে আগে বিমান ওঠানামার উপযোগী করে তুলতে হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রানওয়ে থেকে জল নামার পরে বিমানের চাকা পিছলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফলে, প্রথমে রানওয়েতে জমে থাকা কাদা সরাতে হবে। তার পরে রানওয়ের ঘর্ষণ-ক্ষমতা ঠিক রয়েছে কি না, তা যাচাই করতে পরীক্ষামূলক ভাবে বিমান ওঠানামা করবে। ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশনের সেই বিমান সবুজ সঙ্কেত দিলে তবেই যাত্রী-বিমান ওঠানামা শুরু করতে পারবে। সমীক্ষা করা হবে গোটা অ্যাপ্রন এলাকারও। ওঠানামার আগে-পরে সেখান দিয়েই চলাচল করে বিমান।

বিমানবন্দরের এক অফিসার বললেন, ‘‘যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে জল নামানোর কাজ হচ্ছে। আমাদের প্রথম কাজ হবে তাড়াতাড়ি রানওয়েটা চালু করে দেওয়া।’’ সূত্রের খবর, গোটা রানওয়ের বদলে প্রথমে তার কিছুটা অংশকে অন্তত বিমান ওঠানামার উপযুক্ত করে তোলা যায় কি না, সে বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা চলছে। সে ক্ষেত্রে ছোট বিমান দিয়ে যাত্রী পরিষেবা শুরু করে দেওয়া যাবে। গোটাটাই অবশ্য নির্ভর করছে পরিস্থিতির উপরে। আপাতত চেন্নাই বিমানবন্দরে বেশ কয়েকটি পাম্প বসেছে। তবে ভোগাচ্ছে ভৌগোলিক সমস্যা। বিমানবন্দরের চারপাশে এক সময়ে জলাজমি ছিল। এর আগে বিমানবন্দরের জমা জল সেই জলার ভিতর চলে যেত। গত কয়েক বছরে সেই সব জলা বুজিয়ে বাড়ি-ঘর হয়েছে। ফলে, নিকটবর্তী অ্যাডেয়ার নদীই ভরসা। কিন্তু এখন সেই নদীও উপচে পড়ছে। আসলে অ্যাডেয়ার উপচে গেলে যতটা জমি প্লাবিত হওয়ার কথা, চেন্নাই বিমানবন্দর পড়ছে সেই আওতার মধ্যে। ফলে ভবিষ্যতেও কোনও দিন একই ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বিমানবন্দর ফের বিপদে পড়বে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

Advertisement

এই সংক্রান্ত আরও খবর পড়ুন

• রবিবার পর্যন্ত উড়ান বন্ধ চেন্নাইয়ে • স্তব্ধ বিমানবন্দর, ভরসা নৌবাহিনীর বিমানঘাঁটি

চেন্নাই বিমানবন্দর আপাতত বন্ধ থাকলেও তার আকাশের অনেক উপর দিয়ে দূরপাল্লার বিমানগুলি উড়ে যাচ্ছে নিয়মিত। সেই বিমানগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার কথা চেন্নাই এটিসি (এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল)-এর। বুধবার সকাল থেকেই চেন্নাই এটিসি কাজ চালাচ্ছিল জেনারেটরের সাহায্যে। রাতে জেনারেটরেও জল ঢুকে যায়। তখন সাহায্যে এগিয়ে আসে কলকাতা, মুম্বই, বেঙ্গালুরু এটিসি। এ দিন দুপুরে বিদ্যুৎ ফেরে চেন্নাই এটিসি-তে।

যদিও বিমানবন্দরের একটা বড় অংশই এখনও অন্ধকার। বিদ্যুৎবাহী সমস্ত লাইন রয়েছে নতুন টার্মিনালের বেসমেন্টে। সে সবই জলের তলায়। এক অফিসারের কথায়, ‘‘কনভেয়ার বেল্ট, লিফ্‌ট, এক্স-রে মেশিন— এ সব না চললে তো বিমানবন্দর চালুই করা যাবে না। ইলেকট্রিক্যাল বিভাগ বলছে, বেসমেন্টের বিদ্যুতের কেব্‌লের ভেতরেও নাকি জল ঢুকে গিয়েছে!’’ আর এক অফিসার জানালেন, জলে ডুবে কোনও যন্ত্রপাতি খারাপ হলে সেগুলি একেবারে পাল্টে দেওয়ার কথাই ভাবা হচ্ছে। কারণ, এই সমস্ত যন্ত্রপাতি সারানো যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ। এখন অগ্রাধিকার হল, দ্রুত বিমানবন্দর চালু করা।

বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্তও চেন্নাই বিমানবন্দরের টার্মিনালে আটকে ছিলেন প্রায় আড়াইশো যাত্রী। অফিসারদের কথায়, ‘‘আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি তাঁদের সময় মতো খাবার, জল দিতে। এগিয়ে এসেছে বিমানসংস্থাগুলিও।’’ আটকে পড়া অধিকাংশ যাত্রীরই আন্তর্জাতিক উড়ান ধরার কথা ছিল। আটকে পড়েছেন প্রচুর বিদেশি।

বুধবার সন্ধ্যায় হায়দরাবাদ থেকে এসে চেন্নাই বিমানবন্দরের ৭০ কিলোমিটার পশ্চিমে আরাক্কোনামে ভারতীয় নৌসেনার বিমানঘাঁটি ‘আইএনএস রাজালি’তে নেমেছিল এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান। সেখান থেকে যাত্রীদের তুলে নামিয়ে দিয়েছিল হায়দরাবাদে। বৃহস্পতিবারও একই ভাবে হায়দরাবাদ থেকে রাজালিতে যাতায়াত করেছে এয়ার ইন্ডিয়া। চেন্নাই বিমানবন্দর থেকে বেশ কিছু যাত্রীকে এ দিন হেলিকপ্টারে আনা হয় রাজালিতে। সেখান থেকে বিমানে সেই যাত্রীরা পৌঁছন হায়দরাবাদে। চেন্নাইয়ের কাছে তাম্বারামে রয়েছে বায়ুসেনার একটি ঘাঁটি। সেখান থেকেও এ দিন বায়ুসেনার বিমানে সরাসরি দিল্লি নিয়ে আসা হয়েছে অনেক যাত্রীকে।

এয়ার ইন্ডিয়া জানিয়েছে, যে যাত্রীদের কাছে চেন্নাই যাতায়াতের বৈধ টিকিট রয়েছে, তাঁরা অতিরিক্ত কোনও খরচ ছাড়াই আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, মাদুরাই, কোচি-সহ দক্ষিণ ভারতের বেশ কয়েকটি বিমানবন্দর থেকে নিজেদের গন্তব্যে যেতে পারবেন। একই সুবিধে দিচ্ছে অন্য একটি বিমানসংস্থা ইন্ডিগোও। তারা জানিয়েছে, আটক বহু যাত্রী যেহেতু বেঙ্গালুরু পৌঁছনোর চেষ্টা করছেন, তাই শুক্রবার বেঙ্গালুরু থেকে দিল্লি, মুম্বই ও হায়দরাবাদে অতিরিক্ত উড়ান চালাবে তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন