বসুন্ধরা রাজে, শিবরাজ সিংহ চৌহানের পরে ছত্তীসগঢ়ের মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহই বা বাকি থাকেন কেন?
আজ তাঁর বিরুদ্ধে ৩৬ হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ এনে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দাবি করল কংগ্রেস। ছত্তীসগঢ়ে নাগরিক আপূর্তি প্রকল্পে ভুয়ো রেশন কার্ড দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ। তাতে সরকারের গণবণ্টন ব্যবস্থায় পাওয়া ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহ করা খাদ্যশস্য যেমন সরানোর অভিযোগ রয়েছে, তেমনই খাবারের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ নিয়ে মামলা হয়েছে। চার জন গ্রেফতারও হয়েছে। কংগ্রেসের অভিযোগ, দুর্নীতির মূলে রয়েছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংহ, তাঁর স্ত্রী, শ্যালিকা ও তাঁর বাড়ির রাঁধুনি! ধৃতদের কাছ থেকে যে নথি আটক করা হয়েছে তাতে ওঁদের নাম রয়েছে।
মজার ব্যাপার হল, অভিযোগ ও ইস্তফার দাবি নতুন নয়। কংগ্রেস এক মাস আগেও বিষয়টি নিেয় জাতীয় স্তরে হইচই ফেলতে চেয়েছিল। কিন্তু তখন তা গুরুত্ব পায়নি। সুষমা-বসুন্ধরা হইচইয়ের প্রেক্ষাপটে সেই কঙ্কাল ফের বার করেছে তারা। কেন?
কংগ্রেস শীর্ষ নেতারা বলছেন, সুষমা-বসুন্ধরার কেলেঙ্কারি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন মৌন, তখন এটাই সুযোগ কংগ্রেসের সামনে। বিজেপির মন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীদের বিরুদ্ধে রোজ একটা করে দুর্নীতির অভিযোগ ও সেই সংক্রান্ত প্রমাণ আনতে চায় তারা। বিজেপি যে ধোয়া তুলসীপাতা নয়, সেটাই বুঝিয়ে দিতে চায় কংগ্রেস। তাদের অভিযোগ, প্রশাসনে স্বচ্ছতা আনা বা দুর্নীতি দমনের ব্যাপারে মোদী যে কথাগুলি বলেছেন, সেগুলি ধাপ্পা।
বিজেপির গায়ে এই কালি লেপে দিতে সংসদের আসন্ন বাদল অধিবেশন অচল করার পরিকল্পনাও নিয়েছে কংগ্রেস। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ কয়েক বার হুঁশিয়ারও করেছেন সরকারকে। তবে কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, সংসদের বাদল অধিবেশনে সরকার-বিরোধী সেই আক্রমণেরও একটা জমি তৈরি করতে চাইছেন রাহুল গাঁধী। ঠিক যে ভাবে জমি আইনের বিরোধিতা করে তিনি রাজ্য সফরে বেরিয়েছিলেন, এ বার তেমনই দুর্নীতি প্রসঙ্গে বিজেপির ভাবমূর্তি মাটিতে মিশিয়ে দিতে রাজ্য সফরে বেরোবেন রাহুল। মূলত বিজেপি ও তাদের শরিক দল শাসিত রাজ্যগুলিতে সফর করবেন তিনি। হতে পারে ১০ তারিখ নাগাদ জয়পুরে যাবেন রাহুল। তার পর একে একে মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও ছত্তীসগঢ় সফরে যাওয়ার কথা তাঁর।
সন্দেহ নেই, সংসদের অধিবেশন নিয়ে উদ্বিগ্ন বিজেপি। তবে আপাতত সুষমা ও বসুন্ধরার বিরুদ্ধে অভিযোগ লঘু করে দেখিয়ে চুপ থাকার কৌশল নিয়েছেন মোদী-জেটলিরা। তাঁরা মনে করছেন, ব্যাপারটা নিয়ে চুপ থাকলে বিরোধীদের পক্ষে বিষয়টা টানা সম্ভব হবে না। কারণ এমনিতেই সুষমা-বসুন্ধরার বিরুদ্ধে নতুন তথ্য না পেয়ে ব্যাপারটায় ভাটা পড়তে শুরু করেছে।
কংগ্রেস সূত্র বলছে, শাসক দলের এই কৌশল আঁচ করেই ফের রাজ্য সফর স্থির করেছেন রাহুল। কারণ কংগ্রেস বুঝতে পারছে, রাহুল বা সনিয়া গাঁধী সুষমা-বসুন্ধরার ব্যাপারে সরাসরি মুখ না খুললে ব্যাপারটা সংসদের অধিবেশন পর্যন্ত জিইয়ে রাখা মুশকিল হবে। যেমনটা জমি আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে হয়েছে। রাহুল স্যুট ব্যুট নিয়ে মোদীকে কটাক্ষ না করে গেলে সরকারকে চাপে ফেলা যেত না। তা-ই করবেন রাহুল। তার পর এক বার অধিবেশন পর্যন্ত পৌঁছে গেলে পুরো ব্যাপারটা নিজেই নিজেই গড়িয়ে যাবে। তখন শুধু লোকসভা ও রাজ্যসভায় রোজ স্লোগান ও দাবি তুলে সভা অচল রাখলেই চলবে।
কংগ্রেস মুখপাত্র অজয় মাকেন আজ বলেন, বিদেশমন্ত্রীর পদ থেকে সুষমা স্বরাজ ও রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে বসুন্ধরা রাজেকে ইস্তফা দিতেই হবে। এ ব্যাপারে আপস করবে না কংগ্রেস। সেই সঙ্গে ছত্তীসগঢ়ের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ভূপেশ সিংহ বাঘেলকে নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করে বুঝিয়েছেন, রাজ্য স্তরে রমন সিংহের ইস্তফার দাবিতেও আন্দোলন চলবে। একই ভাবে মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী পঙ্কজা মুণ্ডে ও মধ্যপ্রদেশে সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় দুর্নীতি ও ২৫ জন অভিযুক্তের রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের ইস্তফার দাবিতেও রাজ্যস্তরে আন্দোলন চলবে।
কংগ্রেসের এক নেতার কথায়, আসলে বিজেপির পথেই হাঁটছেন তাঁরা। কমনওয়েলথ গেমস, স্পেকট্রাম দুর্নীতি অস্ত্র করে এই কৌশলই এক সময় নিয়েছিল বিজেপি। এখন তাঁরাই দুর্নীতির অভিযোগের চক্রব্যুহে আটকে গিয়েছে। কংগ্রেসকে পুনরুজ্জীবিত করতে রাহুল এই সুযোগ কতটা ব্যবহার করতে পারেন সেটাই এখন দেখার।