ছত্তীসগঢ় হাই কোর্টে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
বাবা-মায়ের কথা শুনে চলার জন্য স্বামীকে পোষা ইঁদুর (পালতু চুহা) বলে ডাকা নিষ্ঠুরতার শামিল। এর জন্য স্বামী বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন জানাতে পারেন। সম্প্রতি এক মামলায় তা স্পষ্ট করে দিয়েছে ছত্তীসগঢ় হাই কোর্ট।
ছত্তীসগঢ়ের ওই দম্পতির মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরেই অশান্তি লেগে ছিল। স্বামী থাকেন এক একান্নবর্তী পরিবারে। বিয়ের পর স্ত্রীকে নিয়ে সেই যৌথ পরিবারেই বাস করতেন তিনি। অভিযোগ, বিয়ের পর থেকে শ্বশুর-শাশুড়ির বিরুদ্ধে সর্ব ক্ষণ স্বামীকে ওস্কাতেন স্ত্রী। শ্বশুর-শাশুড়িকে ছেড়ে আলাদা ভাবে সংসার পাতার জন্য স্বামীকে চাপ দিতে তিনি।
স্ত্রীর এমন আবদারে স্বামী রাজি না-হওয়ায় অশান্তি আরও বৃদ্ধি পায়। এমনকি, গর্ভবতী অবস্থায় স্ত্রী নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করেছিলেন বলেও দাবি স্বামীর। তাঁর অভিযোগ, বাবা-মায়ের কথা শুনে চলার জন্য স্ত্রী তাঁকে বাবা-মায়ের ‘পোষা ইঁদুর’ বলে খোঁচা দিতেন। এই সব অভিযোগ তুলে প্রথমে ছত্তীসগঢ়ের এক পারিবারিক আদালতে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন জানান স্বামী। যাবতীয় তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ২০১৯ সালে নিম্ন আদালত জানায়, স্বামীর উপর নিষ্ঠুরতার যে অভিযোগ উঠেছে, তার সপক্ষে পর্যাপ্ত প্রমাণ মিলেছে। সেই কারণে বিচ্ছেদের নির্দেশ দেয় আদালত।
পারিবারিক আদালতের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে ছত্তীসগঢ় হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন স্ত্রী। হাই কোর্টের বিচারপতি রজনী দুবে এবং বিচারপতি অমিতেন্দ্র কিশোর প্রসাদের বেঞ্চ সম্প্রতি তাঁর আর্জি খারিজ করে দিয়েছে। হাই কোর্টেরও পর্যবেক্ষণ, বিচ্ছেদের নির্দেশ দিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছে পারিবারিক আদালত। বাবা-মায়ের কথা শুনে চলার জন্য স্বামীকে ‘পোষা ইঁদুর’ বলে ডাকা নিষ্ঠুরতার শামিল বলেই জানিয়েছে ছত্তীসগঢ় হাই কোর্ট।
এই মামলায় শ্বশুরবাড়ির সদস্যদেরও বক্তব্য শোনা হয়। তাঁরা আদালতে জানান, ওই মহিলা প্রায়শই গুরুজনদের অসম্মান করতেন। একান্নবর্তী পরিবারেও থাকতে চাইতেন না তিনি। এমনকি মহিলা নিজেও স্বীকার করে নেন, শ্বশুর-শাশুড়িকে ছেড়ে আলাদা ভাবে থাকার জন্য স্বামীকে মেসেজ পাঠিয়েছিলেন তিনি। সব পক্ষের বক্তব্য শোনার পর হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ভারতীয় সমাজে বাবা-মাকে ছেড়ে আলাদা থাকার জন্য চাপ দেওয়া মানসিক নিষ্ঠুরতার শামিল। এ অবস্থায় দম্পতির বিচ্ছেদের নির্দেশই বহাল রেখেছে হাই কোর্ট। পাশাপাশি স্ত্রীর জন্য এককালীন ৫ লক্ষ টাকা খোরপোশেরও নির্দেশ দিয়েছে আদালত।