মন্ত্রীর যৌন কেলেঙ্কারির ভিডিও থাকার জন্যই কি গ্রেফতার এই সাংবাদিক? উঠছে প্রশ্ন

আগামিকাল বিজেপির সদর দফতরে অশোক রোডে ‘দীপাবলি মঙ্গলমিলন’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের একাংশের সঙ্গে দেখা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:২০
Share:

ধৃত সাংবাদিক বিনোদ বর্মা (ডান দিকে)। গাজিয়াবাদে। ছবি: পিটিআই।

বৃহস্পতিবার দুপুর দু’টোয় রায়পুরে পুলিশের কাছে অভিযোগ করলেন রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপির তথ্যপ্রযুক্তি শাখার এক সদস্য। রাতের শেষ বিমানে দিল্লি উড়ে গিয়ে শুক্রবার ভোর রাতে গাজিয়াবাদের ইন্দিরাপুরম থেকে সাংবাদিক বিনোদ বর্মাকে গ্রেফতার করল ছত্তীসগঢ় পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে ভয় দেখিয়ে টাকা চাওয়ার অভিযোগ আনা হলেও ধৃত সাংবাদিকের দাবি, রাজ্যের এক মন্ত্রীর যৌন কেলেঙ্কারির ভিডিও রয়েছে তাঁর কাছে। সেটা আটকাতেই এই হেনস্থা। বিবিসি এবং অমর উজালার প্রাক্তন সাংবাদিক বিনোদ বর্তমানে ছত্তীসগঢ়ে কংগ্রেসের সোশ্যাল মিডিয়ার দায়িত্বে রয়েছেন। এডিটর্স গিল্ড-এরও সদস্য তিনি।

Advertisement

আগামিকাল বিজেপির সদর দফতরে অশোক রোডে ‘দীপাবলি মঙ্গলমিলন’ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের একাংশের সঙ্গে দেখা করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার ঠিক আগে এই গ্রেফতারি তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে সব মহলে। প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়া-সহ সাংবাদিকদের একাধিক সংগঠন এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি তুলেছে। ক্ষুব্ধ প্রেস কাউন্সিল এ নিয়ে রাজ্য সরকারের রিপোর্ট তলব করেছে।

বিরোধীদের অভিযোগ, মোদী সরকারের আমলে দেশে যে অঘোষিত জরুরি অবস্থা চলছে, এটা তার প্রমাণ। কংগ্রেসের অভিযোগ, যাঁরাই বিজেপির বিরোধিতা করছেন বা তাদের দুর্নীতি ফাঁস করছেন, তাঁদেরই নানা ভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে। কংগ্রেসের মুখপাত্র অজয় মাকেনের প্রশ্ন, ‘‘ওই সাংবাদিকের কাছে এমন কী ছিল, যার জন্য ওই ভোর রাতে তাঁকে হেনস্থা করা হল? জাতীয় সুরক্ষার প্রশ্ন হলেও না হয় বোঝা যেত। আসলে যেনতেন প্রকারে ওই মন্ত্রীকে বাঁচাতেই সক্রিয় প্রশাসন।’’

Advertisement

ছত্তীসগঢ়ে সাংবাদিকদের উপরে হেনস্থার অভিযোগ নতুন নয়। মালিনী সুব্রহ্মণ্যমকে রাতারাতি রাজ্য ছাড়া করা হয়েছিল। সন্তোষ যাদবকে মাওবাদী যোগের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। ছত্তীসগঢ়ে এই ধরনের একাধিক অভিযোগের তদন্তে এডিটর্স গিল্ডের সদস্য হিসেবে গত বছর সে রাজ্যে যান বিনোদ। নিজের রিপোর্টে তিনি লিখেছিলেন, সরকারের হয়ে খবর করার জন্য স্থানীয় সাংবাদিকদের উপর প্রবল

চাপ রয়েছে। বিশেষ করে মাওবাদী দমনের ক্ষেত্রে সরকারের হয়ে লেখার জন্যই চাপ থাকে। বিনোদের সতীর্থদের দাবি, স্বভাবতই সেই রিপোর্টে ক্ষুব্ধ হয় রমন সিংহের সরকার। এবং এ ভাবেই তারা প্রতিশোধ নিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠছে।

বিনোদের বিরুদ্ধে অভিযোগ কী?

রায়পুর পুলিশের দাবি, ওই সাংবাদিক ছত্তীসগঢ় সরকারের এক মন্ত্রীকে ভয় দেখিয়ে টাকা তোলার চেষ্টা করছিলেন। বিনোদের পাল্টা দাবি, তাঁর কাছে ওই মন্ত্রী অর্থাৎ রাজেশ মুনাতের যৌন কেলেঙ্কারির ভিডিও টেপ রয়েছে। তা ফাঁস হওয়া ঠেকাতেই গ্রেফতারি। যদিও রাজেশ মুনাতের দাবি, ভিডিওটি নকল। সব মহলের সমালোচনার মুখে রাজ্য বিজেপির অভিযোগ, যৌন কেলেঙ্কারির জাল ভিডিও দেখিয়ে টাকা তুলতে গিয়েই প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ভূপেশ বাঘেলের ঘনিষ্ঠ বিনোদ জালে পড়েছেন।

কাল দুপুরে রায়পুরের পন্ডরি থানায় বিজেপি নেতা শ্রীপ্রকাশ বজাজ অভিযোগে জানান, তাঁকে দিল্লি থেকে ফোন করে টাকা চাওয়া হয়েছে। ফোনে বলা হয়, তাঁর ‘বস’ (রাজেশ মুনাত)-এর যৌন কেলেঙ্কারির প্রমাণ রয়েছে। টাকা না দিলে সেই সিডি ফাঁস করে দেওয়া হবে। পুলিশ রাতেই দিল্লি পৌঁছে যায়। যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে হুমকি ফোনের অভিযোগ উঠেছিল, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। রায়পুর পুলিশের দাবি, ওই ব্যক্তি জানান, তাঁকে মন্ত্রীর সিডি হাজারটি কপি বানানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বিনোদ বর্মা। এর পরেই ভোরে বিনোদের ইন্দিরাপুরমের বাড়িতে হানা দেয় পুলিশ। পুলিশের দাবি, বিনোদের থেকে ৫০০টি সিডি, একটি পেন ড্রাইভ ও ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়েছে। ট্রানজিট রিমান্ডে তাঁকে রায়পুর নিয়ে যাওয়া হয়।

ছত্তীসগঢ় প্রশাসনের এত চেষ্টা সত্ত্বেও অবশ্য আটকানো যায়নি মন্ত্রীর যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠা ভিডিও ক্লিপটি। সকাল থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে সেটি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন