বিদায়ী: সাংবাদিকদের মুখোমুখি মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রমনিয়ন। বুধবার। ছবি: পিটিআই।
চাকরি ছেড়ে কেউ এত খুশি হয়!
অরবিন্দ সুব্রমনিয়ন হয়েছেন। নরেন্দ্র মোদী সরকারের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টার পদে ইস্তফা দিয়ে। তাই নর্থ ব্লকে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েই হাসতে হাসতে তাঁর মন্তব্য, ‘‘শ্যাম্পেন কোথায়!’’
রঘুরাম রাজন, অরবিন্দ পানাগাড়িয়া, অরবিন্দ সুব্রমনিয়ন। বিশ্বের প্রথম সারির আরও এক অর্থনীতিবিদ বিদায় নিচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী সরকারের রাজত্ব থেকে। মেয়াদ ফুরোনোর অনেক আগেই।
যা নিয়ে রাহুল গাঁধীর টুইট, ‘অর্থমন্ত্রী ঘরবন্দি। ব্রেকিং নিউজ ফেসবুকে। বিজেপির কোষাধ্যক্ষের হাতে ভারতীয় অর্থনীতির ভার। উজ্জ্বল মেধারা ডুবন্ত জাহাজ ছেড়ে পালাচ্ছেন। কারণ আরএসএস-এর অদৃশ্য হাত ওই জাহাজকে পাথরে আছড়ে ফেলেছে। আর ক্যাপ্টেন ডিমো (DeMo) ঘুমোচ্ছেন!’ স্পষ্টতই, নোট বাতিলের ইংরেজির আদলে শেষ খোঁচাটা ‘নমো’-কেই।
সুব্রহ্মণ্যম স্বামী এবং আরএসএস-এর স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের নেতারা সুব্রমনিয়নের সমালোচনায় মুখর ছিলেন দীর্ঘদিন। যেমন তাঁদের অপছন্দ ছিলেন রঘুরাম, পানাগড়িয়াও। অভিযোগ ছিল, আমেরিকা থেকে আসা এই অর্থনীতিবিদেরা ভারতের স্বার্থ দেখেন না। বিরোধীদের অভিযোগ, আরএসএস-এর অপছন্দ বলেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নরের পদে দ্বিতীয় দফায় রঘুরামকে থাকতে বলা হয়নি। পানাগড়িয়ার বিদায়ও আরএসএস-এর সমালোচনার মুখে।
২০১৯-এর মে পর্যন্ত চুক্তি ছিল সুব্রমনিয়নের। অর্থাৎ মোদী সরকারের মেয়াদ পর্যন্ত। তার আগেই ফিরে যাওয়ার পিছনে ‘যথেষ্ট জোরদার পারিবারিক কারণ’-ই প্রধান বলে দাবি সুব্রমনিয়নের। সেপ্টেম্বর মাসে তিনি প্রথম বার ঠাকুর্দা হতে চলেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘এত ভাল চাকরি কোনও দিন পাইনি। হয়তো পাবও না। ব্যক্তিগত কারণে হলেও আবার গবেষণা, শিক্ষকতা, লেখালেখি এবং চিন্তা-ভাবনার জীবনে ফিরব।’’
ওয়াশিংটনে পিটারসন ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল ইকনমিক্সের সিনিয়র ফেলো-র পদ থেকে ছুটি নিয়ে ২০১৪-য় তিন বছরের জন্য মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টার পদে আসেন সুব্রমনিয়ন। গত বছরেই ফিরে যেতে চেয়েছিলেন। আটকান অরুণ জেটলি। যাঁকে আজ ‘দারুণ বস’ বলেছেন সুব্রমনিয়ন। জেটলিও বলেছেন, ‘মিস’ করবেন সুব্রমনিয়নকে। কিডনি প্রতিস্থাপনের পরে বাড়িতে বন্দি জেটলিই ফেসবুকে সুব্রমনিয়নের বিদায়ের খবর জানান। লেখেন, ‘কিছু দিন আগে উনি ভিডিয়ো কনফারেন্সে কথা বলেছিলেন। ব্যক্তিগত হলেও কারণটা ওঁর কাছে গুরুত্বপূর্ণ। রাজি না হয়ে আমার উপায় ছিল না।’ জেটলির পরেই সুব্রমনিয়ন নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছিলেন মোদীকে।
রঘুরামের মতো গো-রাজনীতি বা অসহিষ্ণুতা নিয়ে মুখ খোলেননি সুব্রমনিয়ন। তবে বলেছিলেন, মুখ খুললে চাকরি যেতে পারে। গোরক্ষকের দাপটে কৃষি অর্থনীতির ক্ষতি হবে বলেও জানিয়েছিলেন আর্থিক সমীক্ষায়। তাতে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছিলেন নোট বাতিলের কার্যকারিতা নিয়ে। যে নোট বাতিলে তাঁর মতামতই নেওয়া হয়নি বলে মনে করা হয়। আজও এ সব নিয়ে মুখ খোলেননি সুব্রমনিয়ন। তবে মোদী বলেছিলেন, আর্থিক বৃদ্ধির হারকে দু’অঙ্কে নিয়ে যাওয়াটাই চ্যালেঞ্জ। সুব্রমনিয়ন তুড়ি বাজিয়ে বলেছেন, ‘‘সেটা কিন্তু এই ভাবে হবে না!’’
আরএসএস অবশ্য উল্লসিত। স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের যুগ্ম-আহ্বায়ক অশ্বিনী মহাজনের দাবি, ‘‘এমন লোককে নিয়োগ করা হোক, ভারতের চাষি, শ্রমিক, উদ্যোগপতিদের উপরে যাঁর ভরসা থাকবে। যিনি ছুটি কাটাতে আসবেন না।’’ স্বামীর কটাক্ষ, ‘‘গুডবাই। ভারতে ওঁর কাছে কিছুই আমেরিকার ডাকের থেকে বেশি জরুরি নয়। তবে অর্থ মন্ত্রক এখন পীযূষ গয়ালের হাতে। ঠিক হাতে ইস্তফার চিঠি দিয়ে যাবেন। না-হলে দায়িত্ব ছেড়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠতে পারে।’’ সুব্রমনিয়ন ঘুরিয়ে অশ্বিনীকে জবাব দিয়েছেন, ‘‘এই পদের মাপকাঠি একটাই— যোগ্যতা। আনুগত্য বা কে কোথা থেকে এল, এ সবের কোনওটাই বিবেচ্য নয়।
ফাঁকা পদের অন্যতম দাবিদার এখন প্রধান (প্রিন্সিপাল) অর্থনৈতিক উপদেষ্টা সঞ্জীব স্যান্যাল। জেটলির মত, সরকারি ব্যাঙ্কের অনাদায়ী ঋণ এবং কর্পোরেটে বিপুল ক্ষতির সমস্যা চিহ্নিত করা, জন ধন অ্যাকাউন্ট, আধার-মোবাইল যোগ, জিএসটি-র হার, ন্যূনতম আয়, সার ও ডালের সমস্যার নীতি নির্ধারণে সুব্রমনিয়ন গুরুত্বপূর্ণ ছাপ রেখে যাচ্ছেন। সুব্রমনিয়নও বলছেন, ‘‘সুপারিশ কার্যকর হোক বা না হোক, সন্তুষ্টি এসেছে এগুলো করতে পেরে।’’