(বাঁ দিক থেকে) পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ, চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং (পিছনে) এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
ভারত এবং পাকিস্তানের দ্বন্দ্বে মধ্যস্থতার দাবি এ বার করল চিনও। এত দিন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করে আসছিলেন যে, তিনিই এই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর সংঘর্ষ থামিয়েছেন। মঙ্গলবার চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই দাবি করলেন, তাঁরা ভারত-পাকিস্তান-সহ বিশ্বের অন্তত পাঁচটি দেশের দ্বন্দ্বে মধ্যস্থতা করেছেন। এখনও পর্যন্ত ভারতের তরফে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।
জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলাকে কেন্দ্র করে গত এপ্রিল থেকে ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। মে মাসে সশস্ত্র সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিল দুই দেশ। টানা চার দিন ধরে সেই সংঘাত চলে। ১০ মে দুই দেশ সংঘর্ষবিরতিতে রাজি হয়। এর পরেই ট্রাম্প দাবি করেন, তিনি সংঘর্ষ থামিয়েছেন। দুই দেশকে শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়ে সংঘর্ষবিরতিতে তিনিই রাজি করিয়েছেন। ভারত সরকার এই দাবি উড়িয়ে দেয় প্রথম থেকেই। নয়াদিল্লি জানিয়েছিল, সামরিক স্তরে ভারত এবং পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমেই সংঘর্ষবিরতি হয়েছে। তৃতীয় কোনও দেশের হস্তক্ষেপ এ ক্ষেত্রে স্বীকার করা হয়নি, হবেও না।
বেজিঙের একটি অনুষ্ঠান থেকে চিনের বিদেশমন্ত্রী মঙ্গলবার বলেন, ‘‘এ বছর আঞ্চলিক যুদ্ধ এবং সীমান্তবর্তী সংঘাত এত ঘন ঘন হয়েছে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে আর কখনও হয়নি। ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ছড়িয়ে চলেছে।’’ এই পরিস্থিতিতে চিন সঠিক অবস্থান গ্রহণ করেছে বলে দাবি ওয়াঙের। তিনি বলেন, ‘‘স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা ন্যায্য অবস্থান গ্রহণ করেছি। সংঘাতের কারণ এবং লক্ষণগুলিতে আমরা জোর দিয়েছি। উত্তর মায়ানমার, ইরানের পরমাণু শক্তি সংক্রান্ত জটিলতা, পাকিস্তান ও ভারতের দ্বন্দ্ব, ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন সংঘাত এবং তাইল্যান্ড-কম্বোডিয়ার সাম্প্রতিক সংঘাতে মধ্যস্থতা করেছি।’’
উল্লেখ্য, পহেলগাঁও হামলার প্রত্যাঘাত হিসাবে গত ৬ মে মধ্যরাতে পাকিস্তানে হামলা চালিয়েছিল ভারত। পর পর গোলাবর্ষণে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় একাধিক জঙ্গিঘাঁটি। এর পর পাকিস্তানও পাল্টা হামলা চালায় এবং সেনা সংঘাত তীব্র হয়। ১০ মে ভারত ও পাকিস্তানের তরফে ঘোষণার আগেই ট্রাম্প সমাজমাধ্যমে সংঘর্ষবিরতির কথা ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। দাবি করেছিলেন, তিনিই যুদ্ধ থামিয়েছেন। কিন্তু পরে ভারত বিবৃতি দিয়ে জানায়, দুই দেশের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে সংঘর্ষবিরতির সিদ্ধান্ত হয়েছে। অন্য কোনও দেশের হস্তক্ষেপে নয়। ট্রাম্প তার পরেও একাধিক বার এই দাবি করে গিয়েছেন। পাকিস্তানও ট্রাম্পের বক্তব্যেই সায় দিয়েছে এবং দাবি করেছে, মার্কিন বিদেশসচিব মার্কো রুবিয়ো ফোন করে সংঘর্ষবিরতির কথা তাদের জানিয়েছিলেন।
ভারত ও পাকিস্তানের সংঘর্ষ চলাকালীন একাধিক দেশ উত্তেজনা প্রশমন এবং আঞ্চলিক শান্তির পক্ষে সওয়াল করেছিল। সৌদি আরব, আমেরিকা, রাশিয়া, চিন দুই দেশের সঙ্গেই কথা বলে এবং সংঘর্ষবিরতির আর্জি জানায়। তবে নয়াদিল্লির বক্তব্য, চূড়ান্ত স্তরে সংঘর্ষবিরতি হয়েছে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই।