(বাঁ দিক থেকে) নরেন্দ্র মোদী, ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং শি জিনপিং। —ফাইল চিত্র
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘দাদাগিরি’র বিরুদ্ধে সরব হল চিন। শুল্কযুদ্ধের আবহে পড়শি ভারতের সঙ্গে বোঝাপড়া বৃদ্ধিরও ডাক দিল তারা। সোমবার দু’দিনের সফরে ভারতে এসেছেন চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই। ওই দিনই তিনি দেখা করেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে। জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকেই চিনের বিদেশমন্ত্রী বিভিন্ন দেশের উপর ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপর শুল্ক আরোপের প্রসঙ্গ উত্থাপন করে দাবি করেন, দাদাগিরি করছে আমেরিকা। এর ফলে গোটা বিশ্বে অবাধ বাণিজ্য বাধার মুখে পড়ছে বলেও জানান তিনি। চিনের বিদেশ মন্ত্রকের একটি বিবৃতিতে উদ্ধৃত করে এমনটাই জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ‘ব্লুমবার্গ’।
তাদের প্রতিবেদন অনুসারে, চিনের বিদেশ মন্ত্রকের ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ভারত এবং চিনের বোঝাপড়া বৃদ্ধি করা উচিত। রাশিয়া থেকে তেল আমদানির জন্য ইতিমধ্যেই ভারতীয় পণ্যের উপর অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছে আমেরিকা। তেল কেনা অব্যাহত রাখলে জরিমানা বাবদ আরও শুল্ক চাপানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ট্রাম্প। চিনও রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি আমদানি করে থাকে। সে ক্ষেত্রে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রেখে দিলে চিনের উপরও ট্রাম্প শুল্ক চাপাতে পারেন বলে মনে করছেন অনেকে। সবটাই অবশ্য নির্ভর করছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ট্রাম্প প্রস্তাবিত ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের গতিপ্রকৃতির উপর। তবে এই বিষয়ে আগে থেকেই সজাগ থাকতে চাইছে চিন। সে কারণেই তারা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের টানাপড়েন মুছে ফেলে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করার চেষ্টা করছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এশিয়ার দুই বৃহৎ অর্থনীতির দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক যে মজবুত করা উচিত, সে কথা জানিয়েছেন জয়শঙ্করও। সোমবার নয়াদিল্লিতে ভারতের বিদেশমন্ত্রী চিন প্রসঙ্গে বলেন, “আমাদের (ভারত এবং চিন) সম্পর্ক অনেক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেই সব পিছনে ফেলে আমরা সামনে এগোতে চাই।” নয়াদিল্লিতে চিনের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে জয়শঙ্করের সংযোজন, আমাদের বৈঠকের পর ভারত এবং চিনের মধ্যে একটি স্থায়ী, সমঝোতামূলক সম্পর্ক তৈরি হওয়ার বিষয়ে আমরা আশাবাদী।”
একাধিক সূত্রে জানা গিয়েছে, জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকে তিন জিনিস, অর্থাৎ কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত সার, দুষ্প্রাপ্য খনিজ এবং সুড়ঙ্গ খনন করার যন্ত্র টানেল বোরিং মেশিন (টিবিএম) ফের ভারতে রফতানি করার কথা জানিয়েছেন চিনের বিদেশমন্ত্রী। এই পণ্যগুলি ভারতে রফতানি করার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল চিন। কিন্তু মনে করা হচ্ছে, এ বার সেই নিষেধাজ্ঞাই প্রত্যাহার করে নিতে চলেছে তারা। এই বিষয়ে ওয়াকিবহাল একটি সূত্রকে উদ্ধৃত করে ‘দ্য ইকনমিক টাইম্স’ জানিয়েছে, ইতিমধ্যেই এই তিন পণ্য রফতানি করার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছে শি জিনপিঙের প্রশাসন। অন্য দিকে, সীমান্ত নিয়ে যেটুকু মতপার্থক্য রয়েছে, ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে বৈঠকে বসে সেটুকুও মিটিয়ে ফেলতে চাইছে চিন। মঙ্গলবার দুপুরে এই বৈঠকের পর বিকেলে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করার কথা চিনের বিদেশমন্ত্রীর।