মেঘভাঙা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত দেহরাদূন। ছবি: পিটিআই।
টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তরাখণ্ড। দেহরাদূন-সহ রাজ্যের কিছু এলাকায় হয়েছে মেঘভাঙা বৃষ্টি। কোথাও নদীর জলস্তর আচমকা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে হড়পা বান। প্রশাসনের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এই বিপর্যয়ের জেরে এখন পর্যন্ত উত্তরাখণ্ডে প্রাণ হারিয়েছেন ১৩ জন। নিখোঁজ ১৬ জন। দেহরাদূনে নদীর স্রোতে ভেসে গিয়েছে ট্র্যাক্টর। তাতে সওয়ার ১০ জনেরই মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ধস নেমে দেহরাদূন-সহ রাজ্যের বেশ কিছু এলাকায় ভেঙে গিয়েছে বহু মন্দির, বাড়ি, হোটেল। তাতে চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে কয়েক জনের। ধসে গিয়েছে রাস্তা, সেতু। উত্তরাখণ্ডের বেশ কিছু এলাকা যোগাযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় উদ্ধারকাজ ব্যহত হয়েছে। দেহরাদূনে স্কুল, অঙ্গনওয়াড়ি বন্ধ রাখা হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত উত্তরাখণ্ডের বেশ কিছু জেলায় ভারী বৃষ্টির জন্য লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। মেঘভাঙা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হিমাচলপ্রদেশের মন্ডী জেলাও।
বানভাসি তমসা
সোমবার রাত থেকে টানা বৃষ্টি হচ্ছে উত্তরাখণ্ডে। দেহরাদূনে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ফুলেফেঁপে উঠেছে টন্স তথা তমসা নদী। তার মাঝে আটকে পড়ে একটি ট্র্যাক্টর। কোনওমতে সেই ট্র্যাক্টর আঁকড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ১০ জন শ্রমিক। তাঁরা খননের কাজে নিযুক্ত ছিলেন। ঘটনার একটি ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে (আনন্দবাজার ডট কম তার সত্যতা যাচাই করেনি)। তাতে দেখা গিয়েছে, ওই শ্রমিকেরা ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করেন। তীরে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন তাঁদের বাঁচানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু জলের স্রোতে ভেসে যায় সেই ট্র্যাক্টর। প্রশাসনের একটি সূত্র বলছে, ১০ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। কেন ট্র্যাক্টরটি নদীর মাঝে গিয়ে পড়ে গিয়েছিল, তা এখনও জানা যায়নি। এই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। উত্তরপ্রদেশের কোনও বাসিন্দার মৃত্যু হলে তাঁর পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন তিনি।
ক্ষতিগ্রস্ত সহস্রধারা
ভারী বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেহরাদূনের সহস্রধারা। সেখানে ভেঙে পড়ে বেশ কিছু বাড়ি, অন্তত আটটি দোকান। তাতে চাপা পড়েন তিন জন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছোয় জাতীয় এবং রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। কিন্তু ভারী বৃষ্টির কারণে ওই তিন জনকে উদ্ধার করা যায়নি। জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সহকারী কমান্ডান্ট অজয় পন্থ জানিয়েছেন, পাহাড় থেকে লাগাতার জলকাদা, ভগ্নস্তূপ নেমে আসায় উদ্ধার কাজ চালানো যায়নি। ডিআইটি কলেজের কাছে দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক ছাত্রের। পরে তাঁর দেহ উদ্ধার করে রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। দেহরাদূনের পাউন্ডা এলাকায় দেবভূমি ইনস্টিটিউটে জল জমার কারণে আটকে পড়েছিলেন ২০০ জন পড়ুয়া। তাঁদেরও উদ্ধার করা হয়।
ভেঙেছে সেতু
টানা বৃষ্টির কারণে উত্তরাখণ্ডের বেশির ভাগ নদীতে জলস্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। দেহরাদূন-পাওন্টা জাতীয় সড়কে ‘নন্দ কি চৌকি’-র কাছে ধুয়েমুছে গিয়েছে একটি সেতু। মসূরী-দেহরাদূন জাতীয় সড়কের একাধিক জায়গা ভেঙে গিয়েছে। সে কারণে ওই রাস্তাটি বন্ধ রাখা হয়েছে। দেহরাদূনের প্রেমনগরে আইন কলেজের কাছে একটি সেতু ধসে গিয়েছে। ইতিমধ্যে ওই এলাকা থেকে ৪০০ জনকে সরিয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। মেঘভাঙা বৃষ্টিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে তমসা নদী। দেহরাদূনের প্রায় ১০০ মিটার দীর্ঘ একটি রাস্তা জলের স্রোতে ধুয়েমুছে গিয়েছে।
চন্দ্রভাগার জলস্তর বৃদ্ধি
চন্দ্রভাগা নদীর জলস্তর বৃদ্ধির কারণে বিপর্যস্ত হৃষীকেশ। বাসিন্দাদের নদীর তীর থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেছে প্রশাসন। ঝড়বৃষ্টির কারণে তেহরি গঢ়বাল জেলার বহু সড়কে গাছ ভেঙে পড়ে। এর ফলে আটকে পড়ে যানবাহন। ভেঙে পড়া গাছ সরাতে পথে নামে উদ্ধারকারী দল।
মোদী, শাহের সঙ্গে কথা
উত্তরাখণ্ডের পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিতে উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্করসিংহ ধামীকে ফোন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তাঁরা উত্তরাখণ্ড সরকারকে সব ধরনের সাহায্যের আশ্বাস দেন। ধামী জানিয়েছেন, তিনি প্রতিনিয়ত স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন।
মেঘভাঙা বৃষ্টি কী?
ভারতীয় মৌসম ভবন (আইএমডি) বলছে, কোনও এলাকায় এক ঘণ্টার মধ্যে ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলে তাকে বলে মেঘভাঙা বৃষ্টি। আইএমডি জানিয়েছে, দেহরাদূনে ঘণ্টায় প্রায় ৬৭ মিলিমিটার করে বৃষ্টি হচ্ছে। আবহবিদেরা বলছেন, আচমকা এই বৃষ্টি হয়নি উত্তরাখণ্ডে। প্রত্যাশিতই ছিল। বুধবার পর্যন্ত সেখানে ভারী বৃষ্টির জন্য কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। দেহরাদূন, নৈনিতাল, চম্পাবতে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। চমোলী, উধম সিংহ নগর, বাগেশ্বর, পিথোরাগড়ে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
বিপর্যস্ত মন্ডী
হিমাচলের মন্ডীতে অল্প সময়ের প্রবল বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছে ধরমপুর বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কয়েকটি বাস। সে রাজ্যে থাকা তিনটি জাতীয় সড়ক আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। ৪৯৩টি ছোট এবং মাঝারি রাস্তায় যান চলাচল বিপর্যস্ত হয়েছে। কাদাস্রোতে ডুবে গিয়েছে ১৫টি গাড়ি। চলতি মরসুমে বার বার মেঘভাঙা বৃষ্টি আর হড়পা বানে বিপর্যস্ত হয়েছে উত্তরাখণ্ড, হিমাচলের বিস্তীর্ণ অংশ। ২০ জুন থেকে ১২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিমাচলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যু হয়েছে ২১৮ জনের। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, চলতি বছরের বর্ষায় হিমাচলে স্বাভাবিকের তুলনায় ৪৩ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। ৪৪৬৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে হিমাচল সরকারের।