Arunachal Pradesh

Arunachal Pradesh: জঙ্গি ভেবে অরুণাচলে ফের গ্রামবাসীদের গুলি সেনার, আহত দুই

কিছু দিন আগেই সেনাবাহিনী এই তিরাপ জেলাতেই এনএসসিএন জঙ্গিদের মারতে অভিযান চালিয়েছিল। তখনও তাদের গুলিতে এক গ্রামবাসী জখম হন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২২ ০৭:০৮
Share:

ফাইল চিত্র।

ফের কাঠগড়ায় সেনার প্যারা কমান্ডো। আবারও জঙ্গি-ভ্রমে গ্রামবাসীদের গুলি।

Advertisement

নাগাল্যান্ডের মন জেলায় ২১ নম্বর প্যারা কম্যান্ডোর গুলিতে ১৩ জন গ্রামবাসীর মৃত্যুর ঘটনার চার মাসের মাথায় ফের একই ঘটনা ঘটল অরুণাচলে। সদ্য আফস্পা প্রত্যাহার করা হয়েছে অসম, নাগাল্যান্ড ও মণিপুরের অনেক এলাকা থেকে। কিন্তু আফস্পা থেকে গিয়েছে অরুণাচলের তিন জেলায়। তার মধ্যেই পড়ে তিরাপ। সেখানকার চাসা গ্রামে শুক্রবার রাতে দুই ছাত্রকে জঙ্গি সন্দেহে গুলি করলেন সেনার ১২ নম্বর প্যারাশুট রেজিমেন্টের কমান্ডোরা। নোকফুয়া ওয়াংপান ও রামওয়াং ওয়াংসু নামে ওই দুই নাগা তরুণের হাত ও পা ফুঁড়ে দিয়েছে কমান্ডোদের গুলি। দু’জনকেই কপ্টারে নিয়ে এসে অসমের ডিব্রুগড় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেছে সেনাবাহিনী।

কিছু দিন আগেই সেনাবাহিনী এই তিরাপ জেলাতেই এনএসসিএন জঙ্গিদের মারতে অভিযান চালিয়েছিল। তখনও তাদের গুলিতে এক গ্রামবাসী জখম হন। নিহত দুই জঙ্গির মধ্যে এক জন জঙ্গি নন, গ্রামের নেতা বলে দাবি করেছিলেন গ্রামের মানুষ। তা নিয়ে অশান্তি চলছে। ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্ত ঘোষণা করেছেন জেলাশাসক। তার মধ্যেই ফের এই ঘটনা।

Advertisement

গ্রামের মানুষের দাবি, নদী থেকে মাছ ধরে ফিরছিলেন দুই তরুণ। বিনা প্ররোচনায় তাঁদের লক্ষ্য করে গুলি চালান সেনা কমান্ডোরা।

ঘটনার পরে কমান্ডোদের ঘিরে ধরেন গ্রামের মানুষ। কমান্ডোদের নেতৃত্বে থাকা নাগা কমান্ডো মেজর জেমস গ্রামবাসীদের কাছে বারবার ক্ষমাপ্রার্থনা করে জানান, তাঁদের ভুল হয়ে গিয়েছে। সেনার তরফে জখমদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। চিকিৎসার ভারও বহন করবে সেনাবাহিনী। তাঁরা লিখিত ভাবে ভুল স্বীকার করতে তৈরি।

কিন্তু দুই যুবকের হাত ও পায়ের হাড় যে ভাবে গুঁড়িয়ে দিয়েছে সেনার গুলি- তাতে তাঁরা স্থায়ী ভাবে বিকলাঙ্গ হয়ে পড়বেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জেমস বলেন, “ডাক্তাররা জানিয়েছেন, দুই যুবকই বিপন্মুরক্ত। আমার নেতৃত্বে এই ঘটনা ঘটেছে। তাই ভুলের সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমি নিচ্ছি। আমি ও আমার বাহিনী এলাকা ছেড়ে যাচ্ছি না, যতক্ষণ না গ্রামের মানুষ সন্তুষ্ট হচ্ছেন। আমি এফআইআর কপিতেও নিজেই স্বাক্ষর করব।”

ডিব্রুগড় হাসপাতালে ভর্তি দুই ছাত্র সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা চার জন নিজেদের মধ্যে জোরে জোরেই গল্প ও গান করতে মূল সড়ক ধরে আসছিলাম। রাস্তায় কেউ কোনও প্রশ্ন করেনি, পথ আটকায়নি। কিন্তু জওয়ানদের পার করে এগিয়ে যাওয়ার পরে হঠাৎ করেই পিছন থেকে গুলি চালানো হয়। আমরা চেঁচিয়ে বলতে থাকি আমরা সাধারণ লোক। তার পরেও ওরা গুলি চালাতে থাকে। আমাদের মাত্র এক জনের কাছে দেশি বন্দুক ছিল। আর কারও কাছে কোনও অস্ত্র ছিল না। আমরা পড়ে যাওয়ার পরে ওরা এসে সকলের ব্যাগ তল্লাশি করে। মাছ ছাড়া কিছুই পায়নি। তখন সকলের কাছে ক্ষমা চায়। কিন্তু সেখানে কোনও জঙ্গল ছিল না। ফাঁকা সড়কে ভুল হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।”

সেনাবাহিনী সরকারি ভাবে ঘটনাটি নিয়ে কোনও মন্তব্য করেনি, তবে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মনের পরে তিরাপেও একই ঘটনা ঘটায় প্রশ্ন উঠছে, সেনার সবচেয়ে ‘এলিট’ হিসেবে পরিচিত কমান্ডো বাহিনীর কাছে যেখানে নাইট ভিশন দূরবীন ও হেলমেট মাউন্টেড গগলস রয়েছে, হাতে থাকা ট্যাভর টিএআর-২১ রাইফেল ও এম-৪ কার্বাইনেও লাগানো থাকে টেলিস্কোপ সাইট, রেঞ্জ ফাইন্ডার— তার পরেও বারবার কী করে সাধারণ মানুষ ও জঙ্গির মধ্যে ফারাক করতে ব্যর্থ হচ্ছে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন