প্রাক্তন অর্থ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের স্ত্রী নলিনীর বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করা নিয়েও সিবিআইয়ের সদ্য অপসারিত ডিরেক্টর অলোক বর্মার সঙ্গে অন্য কর্তা রাকেশ আস্থানার মতবিরোধ হয়েছিল। আস্থানা-ঘনিষ্ঠ অফিসারদের দাবি, বর্মা তখন চিদম্বরমের পত্নীর বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন না। বর্মা-ঘনিষ্ঠ সূত্রের পাল্টা দাবি, সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ। সিবিআইয়ের তদন্ত প্রক্রিয়ায় এককভাবে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় না। ঘটনাচক্রে, বর্মা অপসারিত হওয়ার পর নলিনীর বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়।
সিবিআই সূত্রের খবর, ২০১০ সালের জুলাইয়ে সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের সঙ্গে মনোরঞ্জনা সিংহের চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তি অনুযায়ী, সুদীপ্ত মনোরঞ্জনার একটি টিভি চ্যানেল হাতে নিয়েছিলেন। তাতেই বলা ছিল, মনোরঞ্জনার ব্যক্তিগত আইনজীবী নলিনীর যাবতীয় খরচখরচাও মেটাবেন তিনি। তদন্তকারীদের দাবি, চুক্তির পরেই নলিনীকে এক কোটি টাকা দিয়েছিলেন সুদীপ্ত। তখন কোনও মামলার জন্য তাঁকে দাঁড়াতে হয়নি। এক কোটি টাকা পাওয়ার এক বছর পর নলিনী মামলা লড়েন। পরে বেশ কয়েক বার মামলা লড়লেও সে সব ‘ফি’ আরও এক বছর পর দশবারে পেয়েছিলেন নলিনী। সিবিআইয়ের প্রশ্ন, দেশের এমন কোনও সংস্থা আছে কি যারা আইনজীবীকে কোটি টাকা ফি মামলা লড়ার এক বছর আগেই মিটিয়ে দেন, অথবা মামলা লড়ার এক বছর পর খেপে খেপে টাকা মেটান?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে সিবিআই জানতে পারে, মনোরঞ্জনার সূত্রেই নলিনীর সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল সুদীপ্তের। সিবিআই সূত্রের দাবি, সেবি এবং আরওসি’র সঙ্গে ‘যোগাযোগে’র বিষয়ে পারিপার্শ্বিক তথ্য-প্রমাণ দিয়ে সিবিআইয়ের কলকাতা অফিস ২০১৮-র ৩০ জুন নলিনীর বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ করতে প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু তৎকালীন ডিরেক্টর বর্মা মাস দুয়েক এ নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেননি বলেই সূত্রের দাবি। অগস্টের শেষে কলকাতার অফিসারদের বৈঠকে ডেকেছিলেন তিনি। সেখানে ছিলেন রাকেশ আস্থানাও।
সিবিআই সূত্রের দাবি, ওই বৈঠকে বর্মার তরফে প্রস্তাব আসে, নলিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করা শক্ত। তার চেয়ে বরং মনোরঞ্জনা সিংহকে রাজসাক্ষী করা হোক। কারণ, ডিরেক্টরকে চিঠি লিখে মনোরঞ্জনা সরাসরি সেই প্রস্তাব দিয়েছিলেন। বর্মা মনে করেছিলেন, মনোরঞ্জনা রাজসাক্ষী হলে হলে অন্য প্রভাবশালীদের সম্পর্কে জানা যাবে। কিন্তু আস্থানা গোষ্ঠীর অফিসাররা বেঁকে বসেন। তাঁদের যুক্তি ছিল, মনোরঞ্জনাকে রাজসাক্ষী করলে নলিনী চিদম্বরম বা মাতঙ্গ সিংহের মতো অভিযুক্তেরা সুবিধা পাবেন। নলিনীকে চার্জশিট দেওয়ার দাবিও তখন খারিজ হয়ে যায়।
বর্মা ঘনিষ্ঠদের দাবি, কোনও ডিরেক্টরের তরফে তদন্ত প্রভাবিত করার প্রশ্নই ওঠে না। তদন্তে উঠে আসা অভিযোগ বা তথ্য আদালতে গ্রহণযোগ্য হবে কি না, তা দেখা ডিরেক্টরের কাজ। কলকাতা অফিস যে প্রমাণ জোগাড় করেছিল, তা সিবিআইয়ের ডিজি (প্রসিকিউশন) খারিজ করেছিলেন। সেই কারণেই চার্জশিটের অনুমতি দেওয়া হয়নি।