লালকেল্লায় দাঁড়িয়ে নরেন্দ্র মোদী বলছেন, নোট বাতিলের জেরে নতুন ৫৬ লক্ষ লোক আয়কর রিটার্ন ফাইল করেছেন। আর্থিক সমীক্ষা বলছে, নোট বাতিলের পরে করদাতার সংখ্যা ৫.৪ লক্ষ বেড়েছে। মে মাসেই অরুণ জেটলি বলেছিলেন, ৯১ লক্ষ নতুন করদাতা জালে পড়েছেন। আবার চলতি মাসেই অর্থ মন্ত্রক সংসদে জানিয়েছে, বাড়তি করদাতার সংখ্যা ৩৩ লক্ষ।
নোট বাতিলের লাভ নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারেরই নানা রকম তথ্য নিয়ে ফেসবুক-টুইটারে কটাক্ষ, সমালোচনা আর রসিকতার ধাক্কায় আজ মাঠে নামতে হল অর্থ মন্ত্রক ও আয়কর দফতরকে।
দীর্ঘ ব্যাখ্যা দিয়ে অর্থ মন্ত্রকের দাবি, সবার উপরে প্রধানমন্ত্রীই সত্য। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতায় যা বলেছেন, সেটাই ঠিক। আয়কর দফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে ৫৬ লক্ষ অতিরিক্ত আয়কর রিটার্ন ফাইল হয়েছে। এ বছরের ১ এপ্রিল থেকে ৫ অগস্ট পর্যন্ত ২.৭৯ কোটি মানুষ রিটার্ন ফাইল করেছেন। যা গত বছর ছিল ২.২৩ কোটি। অর্থাৎ, বাড়তি ৫৬ লক্ষ মানুষ রিটার্ন ফাইল করেছেন। ফলে তথ্যে কোনও অসঙ্গতি নেই।
তা হলে আর্থিক সমীক্ষায় অন্য তথ্য কোথা থেকে তৈরি হল? অর্থ মন্ত্রকের যুক্তি, আর্থিক সমীক্ষায় যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পরে ৯ নভেম্বর থেকে এ বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত পরিসংখ্যানের সঙ্গে আগের বছরের তুলনা। তাতেও শুধুমাত্র এই প্রথম বার যারা রিটার্ন ফাইল করেছেন, তাদের সংখ্যাই দেওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন: বিধ্বংসী আরও ৬ যুদ্ধ-চপার পাচ্ছে স্থলসেনা
প্রশ্ন উঠেছে, অরুণ জেটলি কী ভাবে ৯১ লক্ষ বাড়তি করদাতার সংখ্যা দাবি করেছিলেন? অর্থ মন্ত্রকের ব্যাখ্যা, অর্থমন্ত্রী ২০১৬-’১৭-র গোটা অর্থবর্ষে নতুন আয়কর রিটার্ন ফাইলের সংখ্যা বলেছিলেন। সংসদে দেওয়া জবাবে ৯ নভেম্বর থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়তি আয়কর রিটার্ন ফাইলের সংখ্যা দেওয়া হয়েছিল। আয়কর দফতরের দাবি, প্রধানমন্ত্রী যে ৫৬ লক্ষ বাড়তি করদাতার কথা বলেছেন, তার থেকেও সংখ্যা আরও বাড়বে। কারণ অনেক করদাতা এখনও রিটার্ন ফাইল করেননি।
অর্থনীতিবিদদের যুক্তি, মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা অরবিন্দ সুব্রহ্মনিয়ন নিজেই মেনে নিয়েছেন, বাড়তি রিটার্ন ফাইল হয়েছে মানেই আয়করদাতার সংখ্যা বাড়ছে এমন নয়। কারণ এদের সিংহভাগই তাদের আয় আড়াই লক্ষ টাকার কম দেখিয়েছেন। নোট বাতিলের পরে অনেকেই নগদ আড়াই লক্ষ টাকা জমা করেছেন। তার জন্যও রিটার্ন ফাইল করতে হয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে সরকার কোনও কর পাবে না। পরের বছর এরা রিটার্ন ফাইলও করবে না।
কংগ্রেস নেতা অজয় মাকেনের কটাক্ষ, ‘‘নিজেদের মিথ্যে প্রচারের ফাঁদে পড়ে মোদী সরকার এখন সব কিছু গুলিয়ে দিতে চাইছে। বাস্তব হল, নোট বাতিলের ফলে লাভের বদলে ক্ষতিই হয়েছে।’’