বিচারপতি ‘বিদ্রোহ’ ঘিরে রাজনৈতিক তরজাও

লোয়া-মৃত্যুরহস্যে নিশানা সেই অমিত শাহকেই

বিচারক লোয়ার মৃত্যুরহস্যে নিরপেক্ষ তদন্তের আর্জির মামলা ঘিরেই শুক্রবার প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের বিরুদ্ধে চার প্রবীণ বিচারপতির ক্ষোভের আগুনে ঘি পড়ে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৩৫
Share:

ব্রিজগোপাল হরকিষণ লোয়া

বিচারপতিদের বিবাদ নিয়ে কংগ্রেস কেন ‘রাজনীতি’ করছে, সেই প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। তা বলে বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক ব্রিজগোপাল হরকিষণ লোয়ার মৃত্যুরহস্য নিয়ে অমিত শাহকে নিশানা করার সুযোগ ছাড়তে চান না রাহুল গাঁধী।

Advertisement

বিজেপির চাপ সত্ত্বেও কংগ্রেস যে পিছু হটছে না, তা বুঝিয়ে রাহুলের দল আজ দাবি তুলেছে, বিজেপি সভাপতির বিরুদ্ধে নতুন করে ফৌজদারি মামলা শুরু হোক। গোয়ার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শান্তারাম নায়েক বলেন, ‘‘যে ফৌজদারি মামলায় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের নাম রয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের চার প্রবীণ বিচারপতির সাংবাদিক সম্মেলনের পরে সেই মামলাটি নতুন করে খোলা দরকার। নাগপুরে বিচারক লোয়ার রহস্যজনক মৃত্যুও ফের খতিয়ে দেখা উচিত।’’

বিচারক লোয়ার মৃত্যুরহস্যে নিরপেক্ষ তদন্তের আর্জির মামলা ঘিরেই শুক্রবার প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের বিরুদ্ধে চার প্রবীণ বিচারপতির ক্ষোভের আগুনে ঘি পড়ে। প্রধান বিচারপতি এই মামলাটি বিচারপতি অরুণ মিশ্রের বেঞ্চে পাঠিয়েছিলেন। তা নিয়েই প্রশ্ন তোলেন বাকিরা। আজ প্রবীণ আইনজীবী দুষ্মন্ত দাভে টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘কে না জানে, বিচারপতি অরুণ মিশ্র বিজেপি নেতাদের ঘনিষ্ঠ!’’

Advertisement

আরও পড়ুন: দাবিতে অনড় চার ‘বিদ্রোহী’

আর কংগ্রেস নেতা শান্তারামের চাঁছাছোলা প্রশ্ন, ‘‘কোন মামলা কোন বিচারপতি শুনবেন, তা ঠিক করার প্রক্রিয়া নিয়ে সংসদেও প্রশ্ন তোলা যায় না। তা হলে সরকার কী ভাবে নিজের ক্ষমতা কাজে লাগাচ্ছে?’’ সর্বোচ্চ আদালতের এক বিজ্ঞপ্তিতে আজ অবশ্য বলা হয়েছে, বিচারপতি অরুণ মিশ্রের বেঞ্চে আগামী সোমবার মামলাটির শুনানি হচ্ছে না। তা হবে মঙ্গলবার। কেন? একটি সূত্রের দাবি, ওই বেঞ্চে অন্য যে বিচারপতি রয়েছেন, তিনি অসুস্থ।

বিচারক লোয়ার মৃত্যু হয় ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর। মুম্বইয়ের বাসিন্দা, ৪৮ বছর বয়সি লোয়া সেই সময়ে একটি মাত্র মামলাই শুনছিলেন। তা হল, ২০০৫ সালে গুজরাত পুলিশের বিরুদ্ধে সাজানো সংঘর্ষে সোহরাবুদ্দিন শেখকে হত্যার অভিযোগের মামলা। অমিত শাহ তখন গুজরাতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সিবিআইয়ের চার্জশিটে প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে তাঁর নামই ছিল। এই সময়েই নাগপুরে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে বিচারক লোয়ার আকস্মিক মৃত্যু হয়। ময়না-তদন্তের রিপোর্ট অনুযায়ী, হৃদ্‌রোগে মৃত্যু হয় তাঁর। কিন্তু প্রয়াত বিচারকের পরিবার সম্প্রতি অভিযোগ তুলেছে, মৃত্যুর কয়েক দিন আগে লোয়াকে ১০০ কোটি টাকা ঘুষের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তিনি তা প্রত্যাখান করেন।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই ওই মামলাটি গুজরাত থেকে মহারাষ্ট্রে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। শুনানি শেষ হওয়ার আগে বিচারককে বদলি না-করার নির্দেশও দিয়েছিল সর্বোচ্চ আদালত। তা সত্ত্বেও লোয়ার পূর্বসূরি, বিচারক জে টি উটপত-কে বদলি করে দেওয়া হয়। এর পরে ২০১৪-র ডিসেম্বরের গোড়ায় বিচারক লোয়ার মৃত্যু হলে মামলার দায়িত্ব পান বিচারক এম বি গোসাভি। ওই মাসের শেষেই তিনি অমিতকে বেকসুর খালাস করে দেন। রায় হয়— অমিতের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ মেলেনি।

প্রবীণ আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিংহের প্রশ্ন, ‘‘অমিত শাহ বেকসুর খালাস হওয়ার পরেও সিবিআই সেই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা করেনি কেন? কেনই বা সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অমান্য করে ওই মামলার বিচারককে বদলি করা হয়েছিল?’’ বিচারক লোয়ার মৃত্যুরহস্য নিয়ে সোমবারই দিল্লিতে এক সভার আয়োজন করেছে বিশিষ্টদের একটি সংগঠন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন