Monsoon Session of Parliament

সংসদে ‘ইন্ডিয়া’র বিক্ষোভে অভিষেকদের পাশে অধীর, কংগ্রেসের নেতার সঙ্গী সিপিএম সাংসদ বিকাশও

বাংলার রাজনীতিতে অধীর চৌধুরী এবং বিকাশ ভট্টাচার্য, দুই নেতাই তীব্র তৃণমূল-বিরোধী হিসাবে পরিচিত। কিন্তু জাতীয় রাজনীতির ‘বাধ্যবাধকতা’র কারণে দু’জনকেই দেখা গেল তৃণমূলের পাশে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৩ ১৪:৩০
Share:

ছবি: পিটিআই।

প্রকাশ্যে তাঁকে সম্বোধন করেন ‘খোকাবাবু’ বলে। কিন্তু সোমবার সংসদ চত্বরে সেই ‘খোকা’র সঙ্গেই ধর্না দিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী। যেমন দিলেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যও।

Advertisement

মণিপুর নিয়ে সোমবার সকাল থেকেই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির বিক্ষোভে উত্তাল সংসদ চত্বর। বেঙ্গালুরুতে জন্ম নেওয়া বিরোধী দলের জোট ‘ইন্ডিয়া’র ব্যানারেই অ-বিজেপি দলগুলি এককাট্টা হয়ে মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সংসদের উভয় কক্ষে বিবৃতির দাবিতে সরব হয়েছে। সেই বিক্ষোভেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়দের সঙ্গে দেখা গেল বাংলার দুই সাংসদ অধীর এবং বিকাশকে। রাজ্যে তৃণমূলের তীব্র সমালোচক হিসাবে পরিচিত কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর এবং সিপিএমের রাজ্যসভার সাংসদ বিকাশ অভিষেক, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, কাকলি ঘোষ দস্তিদারদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে স্লোগানও দিলেন। তবে যৌথ ধর্নায় অধীর তৃণমূল সাংসদদের থেকে কিছুটা দূরেই ছিলেন। তাঁর পাশে দেখা গিয়েছে দক্ষিণ ভারতের কংগ্রেস সাংসদদের। যেমন বিকাশের পাশে ছিলেন কেরলের তরুণ সিপিএম সাংসদ ভি শিবদাসন।

আবার ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে কংগ্রেসকে একবারও আক্রমণ করেননি মমতা। সিপিএম সম্পর্কে দু’চার কথা বললেও তুলনামূলক ভাবে মমতার সুর ছিল ‘নরম’। ফলে মমতাকেও তাঁর অবস্থান ‘নমনীয়’ করতে হয়েছে। বেঙ্গালুরুতে মূল বৈঠকের আগের দিন সনিয়া গান্ধীর ডাকা নৈশভোজে প্রথমে মমতার যাওয়ার কথা ছিল না। তৃণমূল জানিয়েছিল, নৈশভোজে যাবেন অভিষেক এবং ডেরেক ও’ব্রায়েন। যদিও শেষ পর্যন্ত মমতা ওই নৈশভোজে গিয়েছিলেন। ফলে সিপিএম এবং কংগ্রেস শিবিরের অনেকেই মনে করছেন, অধীর-বিকাশ যেমন তৃণমূলের সঙ্গে বিরোধীদের ধর্নায় যোগ দিয়েছেন, তেমনই মমতাও কংগ্রেস এবং সিপিএম সম্পর্কে তাঁর অবস্থানে আগের চেয়ে ‘নমনীয়’ হয়েছেন। ফলে বিষয়টা ‘একতরফা’ নয়।

Advertisement

প্রসঙ্গত, রবিবারেও পঞ্চায়েত ভোটে ‘সন্ত্রাস’-এর অভিযোগ তুলে বাংলার শাসক তৃণমূলের সমালোচনা করেছেন অধীর। কিন্তু সর্বভারতীয় রাজনীতির ‘বাধ্যবাধকতা’র কারণে সোমবার তাঁকে ‘ইন্ডিয়া’র বিক্ষোভে থাকতে হয়েছে। অধীর লোকসভায় কংগ্রেস দলনেতা। ত়ৃণমূলের বিরোধিতার কারণে তিনি ধর্নায় যোগ না দিলে বিড়ম্বনায় পড়তে হত সনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী, মল্লিকার্জুন খড়্গেদের। মুম্বইয়ে অনুষ্ঠিতব্য ‘ইন্ডিয়া’র পরবর্তী বৈঠকের আগে সেই পরিস্থিতি যেমন কাম্য ছিল না, তেমনই সংসদের বাদল অধিবেশ শুরুর দিনটিতে ‘ইন্ডিয়া’র ঐক্য তুলে ধরার বিষয়টিও জরুরি ছিল। অধীর শিবিরের অনেকের বক্তব্য, ইচ্ছে না থাকলেও না গিয়ে উপায় ছিল না। বস্তুত, সিপিএমের নিচুতলাতেও ‘ইন্ডিয়া’ নিয়ে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। কর্মী-সমর্থকেরা সমাজমাধ্যমেও ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট তাঁদের বোঝাতে বিশেষ কর্মসূচিও নিচ্ছে বলে খবর। কিন্তু অধীরের মতোই জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বিকাশকেও তৃণমূলের পাশে ধর্না কর্মসূচিতে শামিল হতে হয়েছে।

বাংলার সিপিএম এবং কংগ্রেস নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় মেনে নিচ্ছেন, এই ফ্রেম কর্মী-সমর্থকদের কাছে অস্বস্তির। কিন্তু উপায়হীনতার কথাও বলছেন তাঁরা। যে কারণে অধীর বা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম লাগাতার বলে চলেছেন, সর্বভারতীয় স্তরে যা হচ্ছে হোক। বাংলায় তৃণমূলের সঙ্গে তাঁদের জোটের কোনও সম্ভাবনাই নেই। কিন্তু জাতীয় স্তরে দলীয় সিদ্ধান্ত মেনেই তাঁদের একসঙ্গে গলা মেলাতে হচ্ছে। যার আবার ‘ফায়দা’ তোলার চেষ্টা করছে বিজেপি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন