Congress

গহলৌত নেই, গান্ধীদের পছন্দ কি মল্লিকার্জুন

গহলৌত ছিটকে যাওয়ায় ফের কর্নাটকের মল্লিকার্জুন খড়্গে, মহারাষ্ট্রের মুকুল ওয়াসনিকের মতো নেতারা ‘ডার্ক হর্স’ হয়ে উঠেছেন। দু’জনেই দলিত নেতা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:১৮
Share:

সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে বৈঠকের পরে অশোক গহলৌত এবং কে সি বেণুগোপাল। বৃহস্পতিবার নয়াদিল্লিতে। পিটিআই

পরীক্ষার হলে ঢোকার আগে ঘাবড়ে থাকা পরীক্ষার্থী নোটসের খাতায় শেষ বার চোখ বুলিয়ে নেয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে ঠিক তেমনই দশ জনপথে ঢোকার মুহূর্তেও গাড়িতে বসে হাতে ধরা কাগজ, ডায়েরির ছেঁড়া নোটপ্যাডের পৃষ্ঠা, হলদে স্টিকিং প্যাডে হাতে লেখা বাক্যগুলোয় শেষ বার চোখ বুলিয়ে নিচ্ছিলেন অশোক গহলৌত। সাদা কাগজে হিন্দিতে লেখা প্রথম বাক্যটিই ছিল, ‘জো কুছ হুয়া দুখদ হ্যায়, ম্যায় ভি আহত হুঁ’।

Advertisement

সনিয়া গান্ধীর সঙ্গে আজ দেখা করে ‘ক্ষমা’ চাইলেন রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী। অনুগামীদের বিদ্রোহের ‘নৈতিক দায়িত্ব’ নিয়ে গহলৌত জানিয়ে দিলেন, ওই ঘটনার ফলে যে আবহ তৈরি হয়েছে, তার পরে তিনি আর কংগ্রেস সভাপতি পদের নির্বাচনে লড়বেন না।

গহলৌত ছিটকে যাওয়ায় ফের কর্নাটকের মল্লিকার্জুন খড়্গে, মহারাষ্ট্রের মুকুল ওয়াসনিকের মতো নেতারা ‘ডার্ক হর্স’ হয়ে উঠেছেন। দু’জনেই দলিত নেতা। তাঁদের মধ্যে আশি বছর বয়সি খড়্গে গান্ধী পরিবারের বাছাই করা প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিতে পারেন। তিনি এখন রাজ্যসভায় বিরোধী দলনেতা।

Advertisement

কাল মনোনয়ন জমার শেষ দিন। সূত্রের খবর, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে সনিয়া আজ রাতে রাহুল গান্ধীর সঙ্গে ভিডিয়ো কনফারেন্সে কথা বলেন। রাতে সুজন সিংহ পার্কে প্রিয়ঙ্কা গান্ধী বঢরার বাড়িতেও যান। এখনও পর্যন্ত শশী তারুর, দিগ্বিজয় সিংহ ও ঝাড়খণ্ডের কংগ্রেস নেতা কে এন ত্রিপাঠী মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছেন। কিন্তু কেউই জমা দেননি। কংগ্রেস নেতাদের ধারণা, গান্ধী পরিবারের পছন্দের প্রার্থী ঠিক হলে বাকিরা সরে দাঁড়াতে পারেন।

রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়েও হাইকমান্ড ফাঁপরে। সূত্র বলছে, সভাপতি নির্বাচনে না লড়লেও গহলৌত মুখ্যমন্ত্রী থেকে যাবেন, এমন কোনও নিশ্চয়তা নেই। এআইসিসি-তে সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত নেতা কে সি বেণুগোপাল বলেই দিয়েছেন, ‘‘রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রীর বিষয়ে দু’এক দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত হবে।’’ রাজস্থানে গহলৌতের বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা সচিন পাইলট আজ সনিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন। পাইলটের বক্তব্য, তিনি মনের কথা সনিয়াকে বলেছেন। হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত যা-ই হোক, তিনি কংগ্রেস ছাড়বেন না। বেণুগোপাল রাজস্থানের নেতাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মুখ না খোলার হুঁশিয়ারি দিয়ে কড়া নির্দেশ জারি করেছেন। লক্ষ্য গহলৌত শিবিরই।

কংগ্রেস সূত্রের খবর, সনিয়া গহলৌতের আচরণে দুঃখিত, আহত। রাহুল-প্রিয়ঙ্কা প্রচণ্ড বিরক্ত। কারণ সনিয়া নিজে গহলৌতকে তাঁর সভাপতির পদ ছেড়ে দিতে চাইছিলেন। গহলৌত উল্টে মুখ্যমন্ত্রীর পদে নিজের লোক বসানোর জন্য সনিয়ার কর্তৃত্বকেই চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। প্রিয়ঙ্কা চাইছেন, গহলৌতকে সরিয়ে পাইলটকেই মুখ্যমন্ত্রী করা হোক।

এ দিন গহলৌত নিজে জানিয়েছেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন কি না, সনিয়াই সেই সিদ্ধান্ত নেবেন। দশ জনপথ থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, ‘‘রাজস্থানে যা হয়েছে, আমি তার জন্য সনিয়া গান্ধীর কাছে মাফ চেয়েছি। নিজে জানি, আমি কতটা আহত। বিধায়ক দলের নেতা হয়েও সনিয়ার হাতে সিদ্ধান্ত তুলে দেওয়ার প্রস্তাব পাশ করাতে পারিনি।’’ অনেকেই অবশ্য মনে করছেন, তাঁকে মুখ্যমন্ত্রিত্ব থেকে সরানোর ঝুঁকি হাইকমান্ড নিতে পারবে না বুঝেই অঙ্ক কষে গহলৌত বিদ্রোহ করেছেন। এখন মাফ চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী থেকে যেতে চাইছেন। বিজেপি নেতা অমিত মালবীয়ের কটাক্ষ, ‘‘অশোক গহলৌত পোড়খাওয়া রাজনীতিক। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর গদি ধরে রাখবেন। রিমোট কন্ট্রোল চালিত সভাপতির দায়িত্ব নেননি। পাইলটকে টেক্কা দিয়েছেন। প্রয়োজনে ২০২৩-এ ভোটের আগে কংগ্রেস ভেঙে বেরিয়ে যাবেন।’’

এ দিকে তারুরের আগামিকাল মনোনয়ন জমা দেওয়ার কথা। দিগ্বিজয়ও আজ মনোনয়ন পত্র তুলে জানিয়েছেন, তিনিও সম্ভবত কাল তা জমা দেবেন। গান্ধী পরিবার কাউকে সমর্থন করলে তিনিও তাঁকে সমর্থন করবেন। তবে দিগ্বিজয়কে নিয়ে অনেকেরই আপত্তি। দিগ্বিজয় এ দিন খড়্গে, এ কে অ্যান্টনি, পি চিদম্বরমদের পাশাপাশি তারুরের সঙ্গেও দেখা করেছেন। তারুর জানিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে ‘বন্ধুত্বপূর্ণ’ লড়াই হবে। একাধিক প্রার্থী লড়লে ১৭ অক্টোবর ভোটগ্রহণ হবে। তবে কংগ্রেস সূত্র বলছে, ৮ অক্টোবর পর্যন্ত মনোনয়ন প্রত্যাহারের সময় রয়েছে। গান্ধী পরিবারের পছন্দের প্রার্থী ছাড়া বাকিরা সরে দাঁড়ালে তখনই ফয়সালা হয়ে যাবে।

আজ কংগ্রেসের বিক্ষুব্ধদের জি-২৩ গোষ্ঠীর নেতা মণীশ তিওয়ারি, ভূপিন্দর সিংহ হুডা, পৃথ্বীরাজ চহ্বাণরা আনন্দ শর্মার বাড়িতে বৈঠকে বসেন। আনন্দ এই বৈঠকের পরে দিল্লির জোধপুর হাউসে গহলৌতের সঙ্গে দেখা করতে যান। সূত্রের খবর, জি-২৩-র এক জন নেতা নির্বাচনে লড়তে পারেন। শুক্রবারই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন