Rahul Gandhi

রাজনীতির ময়দানিরাও মজে ফুটবলে

রাহুল-ঘনিষ্ঠ নেতারা জানাচ্ছেন, সোমবার রাজস্থানে অলওয়ারে বিরাট জনসভার আগে রবিবার রাতে বিশ্বকাপ ফাইনালে আর্জেন্টিনা বনাম ফ্রান্সের লড়াই দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে রয়েছেন রাহুল।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী ও অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:৫০
Share:

‘ভারত জোড়ো যাত্রায়’ ফুটবলে শট রাহুলের। ফাইল চিত্র।

এক সময় নিয়মিত ফুটবল খেলতেন। হাঁটুতে সমস্যা হওয়ায় খেলা ছেড়েছেন। ভোরে উঠতে হচ্ছে বলে গভীর রাত পর্যন্ত বিশ্বকাপের সব ম্যাচ দেখা সম্ভব হচ্ছে না। তবু ফুটবলের প্রতি প্রেম যাবে কোথায়? ভারত জোড়ো যাত্রায় বেরনো রাহুল গান্ধী হাঁটতে হাঁটতে কেউ ফুটবল এগিয়ে দিলেই পায়ে বল নিয়ে নাচাচ্ছেন, না-হলে বলে শট মারছেন।

Advertisement

রাহুল-ঘনিষ্ঠ নেতারা জানাচ্ছেন, সোমবার রাজস্থানে অলওয়ারে বিরাট জনসভার আগে রবিবার রাতে বিশ্বকাপ ফাইনালে আর্জেন্টিনা বনাম ফ্রান্সের লড়াই দেখার জন্য উন্মুখ হয়ে রয়েছেন রাহুল। এর আগে মরক্কো বনাম স্পেনের ম্যাচ দেখেছিলেন। সে দিন ভারত জোড়ো যাত্রার শিবিরেই সকলের জন্য বড় পর্দা টাঙিয়ে ম্যাচ দেখার ব্যবস্থা হয়েছিল। রবিবারও তেমনই আয়োজনের চেষ্টা চলছে।

পেলে, মারাদোনা এবং মেসি— তিন জনের সঙ্গেই কলকাতায় মাঠে বল নিয়ে নামার বিরল নজির রয়েছে তিন বারের তৃণমূল সাংসদ প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ফাইনালের রাতে দিল্লির বাড়ি থেকে নড়ছেন না তিনি। “নাদিমুল (তৃণমূল সাংসদ নাদিমুল হক) আসবে। রাতে সামান্য খাওয়া দাওয়া আর মেসিকে জেতানো — এই হল আপাতত আমার কাজ”, বলছেন অর্জুন পুরস্কারজয়ী প্রাক্তন মিডফিল্ডার।

Advertisement

২০১২ সালে লিয়োনেল মেসি যখন কলকাতায় এসেছিলেন, প্রসূনকেই মেসির সঙ্গে লিয়াঁজ-র দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। দু’দিন দু’রাত মেসির সঙ্গে ছায়ার মতো লেগেছিলেন ভারতীয় ফুটবল দলের প্রাক্তন ক্যাপ্টেন। “এত বড় ফুটবলার কিন্তু সামান্য অহংবোধ দেখিনি। একদিন ড্রেসিংরুম থেকে মাঠে নামার আগে ওঁর বাড়তি দুটো ফুটবল বুট আমি হাতে নিতে চেয়েছিলাম। যাকে বলে, হাঁ হাঁ করে উঠলেন। ইংরেজি বিশেষ জানতেন না। আমার সম্পর্কে দোভাষীর কাছ থেকে জেনে আমাকে ডাকতেন কাপিতান বলে! ওঁকে দেখানোর লোভ সামলাতে না পেরে একদিন বাঁ পায়ে বল জাগ্‌ল করছিলাম। এসে জড়িয়ে ধরেছিলেন মেসি।” জীবনের শেষ বিশ্বকাপে ট্রফির এত কাছে এসে যেন মেসিকে বিফল মনোরথ হতে না হয়, প্রার্থনা করছেন ‘কাপিতান’। “আমি তিন গ্রেটকেই কাছ থেকে দেখেছি। পেলের সঙ্গে তো ম্যাচ খেলেছি ১৯৭৭ সালে কসমস মোহনবাগান ম্যাচে। তাঁর হাবভাব রাজকীয়। খুব ঘনিষ্ঠ হওয়া যায় না। মারাদোনা যখন এসেছেন, মাঠে থেকেছি ওঁর সঙ্গে। খুবই খেয়ালি মানুষ। বলতে দ্বিধা নেই, মেসির মতো সহজ এবং মাটির মানুষ ওঁরা কেউ নন,” স্মৃতিচারণ প্রসূনের।

ফুটবলের সঙ্গে পুরনো প্রেম লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীরও। এ বার বিশ্বকাপের ফাইনাল দেখতে যাবেন বলে সব বন্দোবস্ত করে ফেলেছিলেন। বিমানের টিকিট, ফাইনাল ম্যাচের টিকিট সব তৈরি ছিল। কিন্তু সোমবার অলওয়ারে রাহুল গান্ধীর জনসভায় যোগ দিতে হবে। দল আগে না ফুটবল? দলকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন অধীর।

সাংসদদের মধ্যে আর এক ফুটবল পাগল ডেরেক ও’ব্রায়েন। তিনিও মাঝরাত অবধি সব ম্যাচ দেখেছেন। দিনে রক্তচক্ষু! ক্রোয়েশিয়া সেমিফাইনালে জিতবে এই ছিল তাঁর ধারণা। ফাইনালে তাঁর ফুটবল-হিসেব বলছে, জিতবে ফ্রান্স। এই নিয়ে তথ্য ও তত্ত্ব দিয়ে নিবন্ধও লিখেছেন। রবিবার তাঁর দিনভর কাটবে গুয়াহাটিতে, দলের প্রশিক্ষণ কর্মশালায়। সন্ধ্যার উড়ানে দিল্লি ফেরার কথা ছিল। কিন্তু সে ক্ষেত্রে ফাইনালের প্রথমার্ধ মিস হয়ে যাবে। তাই বাতিল করে দিয়েছেন উড়ান। রাতে খেলা দেখে সোমবার ভোরে দিল্লি ফিরে সোজা সংসদ। সূত্রের খবর, রাজ্যসভায় বাজেট-অতিরিক্ত খরচের প্রস্তাব সংক্রান্ত বক্তৃতা শুরু করবেন বিশ্বকাপের অনুষঙ্গ টেনেই!

বিজেপি নেতারাও ফুটবলের প্রেমে পিছিয়ে নেই। কমবয়সে ফুটবল খেলতেন দেশের ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ সিংহ ঠাকুর। কিছু দিন আগে ফিফার সিইও, ফ্রান্সের প্রাক্তন ফুটবলার ইউরি জকেফ-কে দিল্লিতে তাঁর বাড়ির লনে পেয়ে নিজের ‘ড্রিবলিং স্কিল’ দেখিয়েছেন। জোরকায়েফের পায়ের কেরামতিও চাক্ষুষ করেছেন। তবে ফাইনালে আর্জেন্টিনা না ফ্রান্স কাকে সমর্থন করছেন, বলতে নারাজ অনুরাগ। বিজেপির তরুণ তুর্কি তেজস্বী সূর্যও ফুটবলপ্রেমী। দক্ষিণ বেঙ্গালুরুর সাংসদ রবিবার নিজের সংসদীয় এলাকায় কৃষ্ণা রাও পার্কে ক্রীড়া উৎসবের আয়োজন করেছেন। থাকবেন ফুটবলার সুনীল ছেত্রী। তার পরে সেখানেই বিরাট পর্দায় বিশ্বকাপের ফাইনাল দেখানোর আয়োজন করেছেন তেজস্বী।

পশ্চিমবঙ্গের মতো কেরলও ফুটবলভক্ত। সংসদের অধিবেশনে দেখা যাচ্ছে, গভীর রাত পর্যন্ত ম্যাচ দেখে কেরলের সাংসদরা দলমত নির্বিশেষে ঢুলু ঢুলু, লাল চোখে সংসদে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

কিন্তু দেশের রাজনীতিবিদরা কবে দেশের ফুটবল টিমের জন্য গলা ফাটানোর সুযোগ পাবেন? লোকসভায় প্রশ্নটা তুলে দিয়েছেন মহারাষ্ট্রের এমআইএম সাংসদ সৈয়দ ইমতিয়াজ জালিল। হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন, মরক্কো ব্রাজিলকে হারিয়ে দিল। সৌদি আরব আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে দিল। কিন্তু ১৩৫ কোটির দেশ এখনও বিশ্বকাপে খেলার মতো ১১ জন ফুটবলার তৈরি করতে পারল না!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement