(বাঁ দিকে) ভূপেশ বঘেলের পুত্রের গ্রেফতারি নিয়ে মুখ খুললেন প্রিয়ঙ্কা গান্ধী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
ছত্তীসগঢ়ের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, কংগ্রেস নেতা ভূপেশ বঘেলের পুত্র চৈতন্য বঘেলের গ্রেফতারি নিয়ে দেরিতে হলেও মুখ খুলল কংগ্রেস। চৈতন্যের গ্রেফতারি আসলে ‘সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বরকে রুদ্ধ করে দেওয়ার কৌশল’— শনিবার এমন অভিযোগই তুললেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী।
আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগে শুক্রবার এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-এর হাতে গ্রেফতার হন চৈতন্য। ঘটনাচক্রে গত বৃহস্পতিবারই জমি সংক্রান্ত এক আর্থিক দুর্নীতির মামলায় প্রিয়ঙ্কার স্বামী রবার্ট বঢ়রার বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দিয়েছে ইডি। রবার্টের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়ে শুরু থেকেই বিজেপিকে নিশানা করে যাচ্ছে কংগ্রেস শিবির। কিন্তু চৈতন্যের ক্ষেত্রে কেন ‘নীরবতা’? তা নিয়ে দলের অন্দরেই একাংশ প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছিলেন। এই পরিস্থিতিতে কিছুটা দেরিতে হলেও চৈতন্যের গ্রেফতারি নিয়ে মুখ খুলল কংগ্রেস। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে প্রতিক্রিয়া এল প্রিয়ঙ্কার মুখ থেকে। যিনি এক দিকে গান্ধী পরিবারের সদস্য, অন্য দিকে রবার্টের স্ত্রী।
প্রিয়ঙ্কার অভিযোগ, ছত্তীসগঢ় সরকার বনাঞ্চলের জমি আদানি গোষ্ঠীর হাতে তুলে দিয়েছে। তা নিয়ে ছত্তীসগঢ়ের বিধানসভায় প্রশ্ন তোলার কথা ছিল ভূপেশের। সেই কারণেই তাঁর ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কংগ্রেস নেত্রী, কেরলের ওয়েনাড়ের সাংসদ প্রিয়ঙ্কা সমাজমাধ্যমে লেখেন, ‘বিজেপি সরকার ছত্তীসগঢ়ের সব বনাঞ্চল আদানির নামে উৎসর্গ করে দিয়েছে। পিইএসএ (পঞ্চায়েত সংক্রান্ত) আইন এবং এনজিটি (জাতীয় পরিবেশ আদালত)-র নির্দেশ অমান্য করে বনাঞ্চল ধ্বংস করা হচ্ছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বঘেল বিধানসভায় এই বিষয়টি উত্থাপন করতেন। তাই তাঁকে আটকাতে, ভোরবেলা তাঁর বাড়িতে হানা দিয়ে ইডি তাঁর ছেলেকে গ্রেফতার করেছে।’ কংগ্রেস সাংসদ আরও লেখেন, ‘গত ১১ বছরে দেশবাসী ভাল ভাবেই বুঝে গিয়েছেন যে, এগুলি আসলে জনগণের কণ্ঠস্বর রুদ্ধ করার এবং বিরোধীদের দমন করার কৌশল। কিন্তু এই কৌশলের মাধ্যমে সত্যকে চাপা রাখা যাবে না। বিরোধীদের ভয় দেখানোও যাবে না।’ কংগ্রেসের প্রত্যেক কর্মী বঘেলের সঙ্গে রয়েছেন বলেও আশ্বস্ত করেছেন প্রিয়ঙ্কা।
ঘটনাচক্রে শনিবারও রবার্টের বিরুদ্ধে চার্জশিট নিয়ে মন্তব্য করেছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। রবার্ট এবং গান্ধী পরিবারের বদনাম করার জন্যই চার্জশিটে প্রিয়ঙ্কার স্বামীর নাম যোগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ খড়্গের। তবে চৈতন্যের গ্রেফতারি নিয়ে কেন কংগ্রেস শিবির থেকে কড়া প্রতিবাদ করা হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন দলের একাংশই। এই অবস্থায় শনিবার মুখ খুললেন প্রিয়ঙ্কা।
ওয়েনাড়ের সাংসদ সমাজমাধ্যমে পোস্ট করার পরে সংবাদ সংস্থা এএনআইতে জয়রাম রমেশের একটি প্রতিক্রিয়া প্রকাশ্যে আসে। বঢরার বিরুদ্ধে চার্জশিট এবং ভূপেশ-পুত্রের গ্রেফতারির ঘটনাকে ‘বদলা এবং হেনস্থার রাজনীতি’ বলে কটাক্ষ করেছেন জয়রাম। বস্তুত, শুক্রবার যখন বঘেলদের বাড়িতে ইডির হানা চলছিল, তখন সমাজমাধ্যমে একটি পোস্ট করেছিল কংগ্রেস। সেখানে লেখা হয়েছিল, ‘মোদী তাঁর পোষ্য ইডি, সিবিআই, আয়কর দফতরকে ব্যবহার করছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বললে যে কোনও বিরোধী নেতার বিরুদ্ধে তল্লাশি চালানো হয়।’ বঘেল যে বিধানসভায় বনাঞ্চলের প্রসঙ্গ উত্থাপনের আগেই ইডির হানা চলেছে, তা-ও উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে বঘেলের পুত্র গ্রেফতার হওয়ার পরে কংগ্রেসের প্রথম সারির কোনও নেতার প্রতিক্রিয়া শুক্রবার প্রকাশ্যে আসেনি।