অমিত শাহের ছেলে জয় শাহ, অজিত ডোভালের ছেলে শৌর্যের পরে মোদী সরকারের আরও দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দুর্নীতিতে মদত দেওয়ার অভিযোগকে এ বার অস্ত্র করল কংগ্রেস।
গুজরাতে ভোটের মুখে বিজেপিকে অস্বস্তিতে ফেলে কংগ্রেসের অভিযোগ, নিতিন গডকড়ীর ব্যক্তিগত সচিবের পদে নিয়োগ হওয়ার পরেও আরএসএস-ঘনিষ্ঠ বৈভব ডাঙ্গে একটি সংস্থার নির্দেশক পদে বহাল ছিলেন। আর গডকড়ী-সহ বিভিন্ন মন্ত্রকের অনুদান নিয়ে মাত্র চার বছরে ফুলেফেঁপে উঠেছে সেই সংস্থার বহর। বিতর্কের পর বৈভব নির্দেশকের পদ ছেড়ে দিয়েছেন বটে। কিন্তু সংস্থার অর্ধেক মালিকানা এখনও তাঁর হাতে। আর ওই সংস্থার পরিচালক সমিতিতে রয়েছেন খোদ গডকড়ী ও মোদী সরকারের আর এক মন্ত্রী সুরেশ প্রভু। এমনকী, আজও পুণেতে গডকড়ীরই মন্ত্রকের এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বৈভবের সংস্থাটি। বিজেপি অভিযোগ ওড়ালেও গডকড়ী বা প্রভু এখনও এ নিয়ে কোনও সাংবাদিক বৈঠক করেননি নিজেদের সমর্থনে।
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ আজ বলেন, ‘‘গডকড়ী গোটা বিষয়টি জানেন। এমনটা চলতে পারে না। এটি মন্ত্রী হিসেবে স্বার্থ-পরিপন্থী কাজ আর সরাসরি দুর্নীতির পর্যায়ে পরে। ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে বৈভবও নিয়মভঙ্গ করেছেন।’’ বৈভবের বক্তব্য, তিনি কোনও নিয়ম ভাঙেননি। তা ছাড়া তিনি ইস্তফাও দিয়েছেন। যদিও কংগ্রেসের পাল্টা বক্তব্য, বিতর্কের পরে ইস্তফা দিলেও অংশিদারি ছাড়েননি। আর এই সংস্থার ঠিকানা পূর্তি গোষ্ঠীর দফতরেই। যে পূর্তি-কেলেঙ্কারির জন্য বিজেপি সভাপতি পদ খোয়াতে হয়েছিল গডকড়ীকে। বৈভব যে আরএসএস-ঘনিষ্ঠ তা বোঝাতে তাঁর সঙ্গে মোহন ভাগবতের ছবিও আজ প্রকাশ করেছে কংগ্রেস।
বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের ছেলের বিরুদ্ধে ঠিক এমনই অভিযোগ উঠেছিল। এক, রাতারাতি সংস্থার আয়বৃদ্ধি। দুই, সহজেই সরকারি সাহায্য পেয়ে যাওয়া। পীযূষ গয়ালের মন্ত্রকের থেকে অনায়াসে বরাতও পেয়েছিলেন। জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের ছেলে শৌর্যর ‘ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন’ সংস্থা আয়োজিত সভাতেও এমন সংস্থা টাকা ঢালে, যাদের যোগাযোগ প্রতিরক্ষা, বিমান, বাণিজ্য, বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে। আর ঘটনাচক্রে সব ক’টি মন্ত্রকের মন্ত্রীই ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের নির্দেশক। মোদী সরকারের গায়ে দুর্নীতির কালি লাগাতে কংগ্রেসের উদ্যোগে এ বারে নতুন পালক জুড়ল।
স্বাভাবিক ভাবেই গুজরাত ভোটের মুখে এমন একটি অভিযোগ নিয়ে অস্বস্তিতে বিজেপি। দল সব অভিযোগ খণ্ডন করলেও ‘বড় মুখ’ করে তা নিয়ে কোনও সাংবাদিক বৈঠক করতে পারেনি এখনও। তবে কংগ্রেসের এক সূত্রের চাঞ্চল্যকর দাবি, সংস্থার অংশিদারির তথ্যগুলি প্রকাশ্যে থাকলেও তা চিহ্নিত করে তুলের ধরার কাজটি আসলে হচ্ছে বিজেপির অন্দর থেকেই। জয় শাহের খবর বাইরে আনার পিছনেও ছিল বিজেপির অন্তর্ঘাত। আবার আজ মন্ত্রকে ‘ভাল কাজ’ করা গডকড়ীর ব্যক্তিগত সচিবের দুর্নীতি ফাঁস করার পিছনেও রয়েছে বিজেপিরই হাত। মোদী জমানায় বিজেপির ভিতরেই কোন্দল চরমে। ভেতরের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য লড়াইয়ের চেহারা নেওয়াটা শধু বাকি।