Coronavirus

সতর্ক থাকাই এখন বড় ধর্ম

কাশীর বিশ্বনাথ মন্দিরে চার এবং পাঁচ নম্বর গেটে সারিবদ্ধ ভক্তদের রীতিমতো সাবান-জলে হাত ধোয়ানো চলছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০২০ ০৭:০৭
Share:

করোনা-সতর্কতা: পর্যটকদের সৈকত ফাঁকা করে দেওয়ার কথা বলছে পুলিশ। সোমবার পুরীতে। পিটিআই

মন্দিরে বিশেষ যজ্ঞের ধুম। গির্জায় ‘স্পর্শের’ প্রচলিত রীতিতে রদবদল। মসজিদে পরিচ্ছন্নতাবিধি বজায় রাখার ঘন ঘন নির্দেশ। কিংবা গুরুদ্বারে ভিড় নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা। করোনা-তাড়িত সময়ে চুম্বকে এটাই ছবি, দেশের বিভিন্ন ধর্মস্থানে।

Advertisement

কাশীর বিশ্বনাথ মন্দিরে চার এবং পাঁচ নম্বর গেটে সারিবদ্ধ ভক্তদের রীতিমতো সাবান-জলে হাত ধোয়ানো চলছে। পাশে গম্ভীরমুখো মাস্কধারী রক্ষী। কাশীর পহলাদেশ্বর মন্দিরের শিবকেই ‘মাস্ক’ পরানো হয়েছে। কেন? সেবায়েতদের দাবি, তাতে ভক্তদের মধ্যে সচেতনতা ছড়াবে। ভিড় নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ ছাড়াও বিপদ তাড়াতে তিরুপতির মন্দিরে শুরু হয়েছে তিন দিনের ধন্বন্তরী মহাযজ্ঞম। মুম্বইয়ে সিদ্ধি বিনায়ক মন্দির বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। পুরীতেও ভক্তদের সামলাতে সেবায়েতকুল। এমন চললে, জগন্নাথদেবের সব সেবা অটুট রেখে রথের আগের পর্বের মতো মন্দিরে দর্শন বন্ধ রাখার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না ম্যানেজিং কমিটি।

মাস্কধারী পান্ডামহারাজ পুজো দিতে ডাকছেন দেখে এ দিন পুরীতে চমৎকৃত হয়েছিলেন ডায়মন্ড হারবারের বাসিন্দা অতীন রায়চৌধুরী। জগন্নাথের বাল্যভোগের পরে দর্শন শুরু হলে সোমবার নাটমন্দিরে চেনা গাদাগাদির ছবিটাই দেখেছেন তিনি। সুশৃঙ্খল ভাবে ভক্তদের পরস্পরের মধ্যে দুরত্ব বজায় রাখতে বলা হলেও কে শোনে কার কথা! প্রবীণ দয়িতাপতি তথা ওড়িশা সরকার ও সেবায়েতদের যুগ্ম ম্যানেজিং কমিটির সদস্য রামচন্দ্র দয়িতাপতি ক্ষুব্ধ, কেউ কথাই শোনে না! তাঁর বক্তব্য, ‘‘সারা বিশ্ব জুড়ে এমন মহামারী রোগ যাতে না-ছড়ায় তা তো দেখতেই হবে।’’ বাংলা ও উত্তরপ্রদেশের ভক্তদের একটা ঝাঁক তাঁর সামনেই মন্দিরের গরুড় স্তম্ভ ছুঁতে গেলে বোঝাতে গেলেন তিনি। ভক্তদের জবাব: জগন্নাথ আছেন, কিছু হবে না! রামচন্দ্র দয়িতাপতির কথায়, ‘‘জগন্নাথের তো সবই মানবলীলা। তাঁরও জ্বর হয়। ভক্তদেরও অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।’’ তবে পুরীতে এখন ভিড় কিছুটা কম। বিকেলের সমুদ্রতটও বেশ ফাঁকা। এ দিন রাতে মন্দিরের সেবায়েতদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। রামচন্দ্র বললেন, ‘‘ভক্তদের সামলানো না-গেলে রথের আগে প্রভুর অনশর-পর্বের মতো দর্শন বন্ধ রাখাও হতে পারে।’’

Advertisement

গত রবিবারই দিল্লি ক্যাথিড্রালে ‘মাস’ বন্ধ রাখা হয়েছিল। কলকাতায় ক্যাথলিকদের আর্চ বিশপ আসন্ন ইস্টারে পবিত্র ক্রশ স্পর্শ না-করে দুরত্ব রেখে উদ্‌যাপনের প্রস্তাব দিয়েছেন। এ দিন চার্চ অব নর্থ ইন্ডিয়ার কলকাতা ও ব্যারাকপুর ডায়োসিসের বিশপ পরিতোষ ক্যানিংও গির্জায়, গির্জায় কিছু সতর্কতা-বিধি মেনে চলার নির্দেশিকা প্রকাশ করেছেন। সাধারণত গুড ফ্রাইডের আগের
বৃহস্পতিবার, ধর্মযাজকেরা ভক্তদের পা ধুইয়ে দেন। বিশপের নির্দেশ, এ বছর পারলে এই আচার এড়িয়ে চলুন। নইলে সবার পা আলাদা টিস্যুতে মোছাতে হবে। তাঁর আরও নির্দেশ, ‘‘প্রার্থনাসভায় করমর্দন এড়িয়ে নমস্কার করুন। ধর্মযাজকদের আংটি, গির্জার বেদী, কোনও মূর্তি, ক্রশে চুম্বন নিষিদ্ধ।’’ নাখোদা
মসজিদের ইমাম শাফিক কাশমিও দেশের বিভিন্ন প্রথম সারির মসজিদের মতো নমাজিদের হাত ধোয়ার পরিচ্ছন্নতা-বিধির উপরে জোর দিচ্ছেন। তিনি বলছেন, ‘‘ভারতে করোনায় মৃত বা আক্রান্তদের জন্য আমরা মর্মাহত। সবাইকেই প্রশাসনের নির্দেশ মতো যথোচিত সতর্কতা-বিধি মেনে চলতে বলছি। নমাজের আগে-পরে নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখাই দস্তুর। এই রীতি সবাইকে অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলতে বলছি।’’

ইতিমধ্যে অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরেও করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় ভূগর্ভস্থলে জমায়েত বন্ধ করা হয়েছে। বিদেশি পর্যটকদের প্রবেশ নিয়ে জারি হয়েছে সতর্কতা। কলকাতাতও গুরুদ্বারের লঙ্গরে সতর্কতা-বিধি মেনে চলায় জোর দিচ্ছে স্থানীয় শিখ-সমাজ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন