ছবি: এএফপি।
করোনাভাইরাসের চরিত্র কার্যত সম্পূর্ণ অজানা। তাই আগামী দিনে সুস্থ ব্যক্তিরা তো বটেই, এমনকি যাঁরা এক বার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদেরও ফের ওই ভাইরাসের শিকার হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে না কেন্দ্র। বিশেষ করে চিন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশে কিছু ক্ষেত্রে একই ব্যক্তির দ্বিতীয় বার সংক্রমণের ঘটনা সামনে আসায় উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য মন্ত্রক। স্বাস্থ্যকর্তাদের কথায়, এক বার আক্রান্ত হলেই যে দ্বিতীয় বার কেউ আক্রান্ত হবেন না, এখনই তা জোর দিয়ে বলা যাচ্ছে না।
উপরন্তু আজ স্বাস্থ্যকর্তারা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন যে, বর্তমানে লকডাউনের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের সংক্রমণকে কেবল ঠেকিয়ে রাখা হচ্ছে। আজ না হোক কাল, আর পাঁচটি ভাইরাসের মতো করোনাভাইরাসেরও গোষ্ঠী পর্যায়ে (স্টেজ থ্রি) ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তার পরের ধাপে, অর্থাৎ চতুর্থ পর্যায়ে তা এনডেমিক বা স্থানীয় পর্যায়ের রোগে পরিণত হবে। তখন ওই ভাইরাসকে নিয়ে ততটা ভয় থাকবে না। তত দিনে ওই ভাইরাসকে রোখার প্রতিষেধক বা ওষুধ বাজারে চলে আসবে বলেই আশা স্বাস্থ্য মন্ত্রকের। যে ভাবে এক দশক আগের ঘাতক সোয়াইন ফ্লু –এর ওষুধ হিসেবে ট্যামিফ্লু বাজারে চলে এসেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক কর্তার ব্যাখ্যা, করোনাভাইরাসের উৎপত্তি বিদেশে। বিদেশ থেকেই তা ভারতে এসেছে। যার মাধ্যমে কিছু লোক প্রথমে সংক্রমিত হয়েছেন। তাঁরা স্থানীয় সংক্রমণ ঘটিয়েছেন। যাকে বলে স্টেজ টু। ভারত এখনও এই পর্বে রয়েছে। পরবর্তী ধাপে হবে গোষ্ঠী সংক্রমণ। তার পরের ধাপে স্থানীয় রোগে পরিণত হবে করোনা। তত দিনে ওষুধের পাশাপাশি মানুষের শরীরে ওই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়ার ক্ষমতাও তৈরি হয়ে যাবে। তাই সরকারের লক্ষ্যই হল, গোষ্ঠী সংক্রমণকে যত বেশি দিন সম্ভব পিছিয়ে দেওয়া। যাতে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর দিক থেকে তৈরি হওয়ার সময় পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: ‘সংক্রমণে রাশ’, রোগী বাড়লেও দাবি কেন্দ্রের
চিকেন পক্সের মতো রোগ এক বার হলে শরীরে ওই ভাইরাসের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে। সাধারণত তা দ্বিতীয় বার হয় না। কিন্তু করোনার ক্ষেত্রেও এমনটাই হবে, তা জোর দিয়ে বলতে পারছেন না ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের (আইসিএমআর) কমিউনিকেবল ডিজ়িজ় শাখার প্রধান রমন গঙ্গাখেদকর। তিনি বলেন, উদ্বেগের বিষয় হল, চিন, দক্ষিণ কোরিয়া ছাড়াও জাপান থেকে ওই রোগে একই ব্যক্তির দ্বিতীয় বার আক্রান্ত হওয়ার খবর এসেছে। বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রায় একশোর বেশি লোক দ্বিতীয় বার ওই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন।
আরও পড়ুন: ‘কী করে খাব এই রেশন ফুরোলে?’ উদ্বেগে অসীমরা
গঙ্গাখেদকরের বিশ্লেষণ, সম্ভবত ওই আক্রান্ত ব্যক্তিদের দেহে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে শক্তিশালী অ্যান্টিবডি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠেনি। তাই তাঁরা দ্বিতীয় বারেও সংক্রমিত হয়েছেন। তাঁর কথায়, এইচআইভি শরীরে গেলে তার বিরুদ্ধে শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয় বটে, কিন্তু তা চরিত্রগত ভাবে দুর্বল হওয়ায় ভাইরাসকে কাবু করতে পারে না। করোনার ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত ঠিক কী হচ্ছে, বিশেষ করে কত দিন ওই অ্যান্টিবডি কার্যকর থাকবে, তা আরও কিছু দিন গেলে তবেই স্পষ্ট হবে বলে মনে করছেন গঙ্গাখেদকর।
এই পরিস্থিতিতে সংক্রমণ রোখার একমাত্র ওষুধ ভ্যাকসিন বা টিকাকরণ। ইতিমধ্যেই বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভ্যাকসিন বানানোর কাজে হাত দিয়েছে ভারতও। কিন্তু বর্তমানে ভারতে সংক্রমিতদের মধ্যে তিন রকমের করোনাভাইরাসের নমুনা পাওয়া গিয়েছে। গঙ্গাখেদকর বলেন, মূলত চিন, ইটালি ও ইরান থেকে আগত ব্যক্তিরা ওই তিন ধরনের করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে এ দেশে এসেছেন।
এর মধ্যে চরিত্রগত দিক থেকে বেশির ভাগের দেহে চিন ও ইরানের করোনাভাইরাসের সাদৃশ্য রয়েছে। অন্য দিকে, ইটালি থেকে যে ভাইরাস এসেছে, তার সঙ্গে গোটা ইউরোপ ও আমেরিকার ভাইরাসের সাদৃশ্য রয়েছে। গঙ্গাখেদকর বলেন, ‘‘দেশে যে ধাঁচের ভাইরাসের বেশি সংক্রমণ পাওয়া যাবে, তার ভিত্তিতে ওষুধ তৈরির কাজ হবে।’’ করোনাভাইরাস পরিবেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দ্রুত মিউটেশন ঘটিয়ে নিজের চরিত্র বদল করে বলে যে দাবি অনেক বিজ্ঞানী করেছেন, তা মানতে চাননি গঙ্গাখেদকর। তিনি বলেন, ‘‘ওই ভাইরাস খুব বেশি এবং দ্রুত চরিত্র বদল করেছে, এমন নজির এখনও সে ভাবে পাওয়া যায়নি।’’
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)