Nirmala Sitharaman

বাজারে মন্দা, করোনা ধাক্কা দিল রাজকোষেও

শিল্পোৎপাদনের সূচক আজ সেই আশঙ্কা বাড়িয়ে জানিয়েছে, জানুয়ারি মাসে শিল্পোৎপাদন মাত্র ২% বেড়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২০ ০৪:০৬
Share:

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন

এক সপ্তাহ আগে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছিলেন, অর্থনীতিতে করোনাভাইরাসের ধাক্কা সামলাতে সরকার তৈরি। দরকার পড়লেই মাঠে নেমে পড়বে।

Advertisement

এক সপ্তাহ পরে করোনাভাইরাস শুধু শেয়ার বাজার নয়, মোদী সরকারের রাজকোষেই ধাক্কা মেরেছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড কমে যাওয়ায় রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছোঁয়া যাবে কি না, তা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। শেয়ার বাজারে ধসের ফলে বিলগ্নিকরণের লক্ষ্যমাত্রাও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। সীতারামনের অর্থ মন্ত্রক এখনও কোনও পদক্ষেপ করে উঠতে পারেনি। উল্টে মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, অর্থনীতির ঝিমুনি কেটে যাওয়ার আশা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বিশ্ব জুড়ে করোনাভাইরাসের ধাক্কায় ক্রমশ যে ভাবে অচলাবস্থা তৈরি হচ্ছে, তাতে মন্দার মেঘ জমছে।

শিল্পোৎপাদনের সূচক আজ সেই আশঙ্কা বাড়িয়ে জানিয়েছে, জানুয়ারি মাসে শিল্পোৎপাদন মাত্র ২% বেড়েছে। এর মধ্যে কারখানার উৎপাদন বেড়েছে মাত্র ১.৫% হারে। গত বছরের অক্টোবর থেকে শিল্পোৎপাদন টানা তিন মাস কমেছিল। তার পরে নভেম্বরে তা ১.৮% বাড়ে। ডিসেম্বরে বৃদ্ধির হার ছিল মাত্র ০.১%। চিন্তার কথা হল, জানুয়ারিতে কারখানার উৎপাদন বেড়েছে মাত্র ১.৫%। যার অর্থ, বাজারে চাহিদা নেই। মূলত বিদ্যুৎ উৎপাদন ৩.১% ও খনিতে উৎপাদন ৪.৪% বেড়েছে বলেই শিল্পোৎপাদন ২% বেড়েছে।

Advertisement

অর্থ মন্ত্রকের প্রথম চিন্তা, করোনার ধাক্কায় রাজস্ব আয় কমা। ফলে চলতি বছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ছোঁয়া মুশকিল হবে। এমনিতেই আর্থিক বৃদ্ধির হার তলানিতে। বাজারে চাহিদা নেই বলে কারখানার উৎপাদন বাড়ছে না। আজ সরকারি পরিসংখ্যান জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে খুচরো বাজারে মূল্যবৃদ্ধির হার ৬.৫৮% ছিল। জানুয়ারির ৭.৫৯%-র তুলনায় কম হলেও এখনও তা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ৪%-র মধ্যে মূল্যবৃদ্ধিকে বেঁধে রাখার লক্ষ্যমাত্রার অনেক বাইরে।

আজ কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী বলেন, ‘‘শেয়ার বাজারে যা হচ্ছে, তাতে লক্ষ লোকের লোকসান হচ্ছে। কিছু দিন ধরেই বলছি, করোনাভাইরাসের সমস্যা গুরুতর। অথচ সরকারের যা পদক্ষেপ করার ছিল, করেনি। নরেন্দ্র মোদীর নীতি ও আদর্শ, ভারতের শক্তি অর্থনীতিকে নষ্ট করে দিচ্ছে। অর্থনীতি নিয়ে একটিও শব্দ বলতে পারছেন না মোদী। সীতারামন বিশেষ বোঝেন না, বলতেও পারেন না।’’ রাহুলের যুক্তি, ২০০৮ সালেও বিশ্ব জুড়ে মন্দার সময় একই ‘শকওয়েভ’ এসেছিল। ইউপিএ-সরকার মোকাবিলা করে। অসংগঠিত ক্ষেত্র, বাড়িতে নগদ জমানো টাকা মন্দার সময় বাঁধ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এখন নোট বাতিলের জেরে অসংগঠিত ক্ষেত্রই ধরাশায়ী। উল্টে ইয়েস ব্যাঙ্ককে টাকা দেওয়া হচ্ছে। ১৫-২০ জন শিল্পপতির ফায়দা হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, চলতি বছরে প্রত্যক্ষ কর থেকে ১১.৭০ লক্ষ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্য ছোঁয়া কঠিন। ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ৭.৫২ লক্ষ কোটি টাকা আয় হয়েছে। আগামী বছরের লক্ষ্যমাত্রাও ছোঁয়া যাবে কি না, সে প্রশ্ন উঠছে। বিলগ্নিকরণ থেকে প্রথমে ১.০৫ লক্ষ কোটি টাকা আয় হলেও পরে তা কমিয়ে ৬৫ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। সেখানেও ১০-১৫ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি থাকতে পারে। কারণ শেয়ার বাজারে ধসের ফলে কোল ইন্ডিয়া, সেল-এর মতো সংস্থার শেয়ার ছাড়ার পরিকল্পনাও পিছিয়ে দিতে হয়েছে। বিপিসিএল-এর মতো সংস্থার জন্য লগ্নি খুঁজতে বিদেশে রোড-শো করার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের জেরে তা বাতিল । তার উপরে বিশ্ব বাজারে তেলের দাম পড়তে থাকায় এখন কোনও সংস্থা ভারত পেট্রোলিয়াম কিনতে কতটা আগ্রহ দেখাবে, তা নিয়েই প্রশ্ন। তবে আর্থিক বৃদ্ধির হার চলতি বছরের আনুমানিক ৫% থেকে আগামী বছরে ৬% ছাপিয়ে যাবে বলে আশা এখনই ছাড়তে রাজি নয় মোদী সরকার। অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, গাড়ি, বুকিং, বিমানে যাত্রী, খুচরো বিক্রি কমছে। ট্যুর অপারেটরদের মতে, জানুয়ারি-মার্চে আয় ৬০% কমতে পারে। বিদেশে যাতায়াতে কড়াকড়িতে এবং করোনার ভয়ে বহু লোকে বেড়ানোর পরিকল্পনা বাতিল করছেন। অ্যানারক প্রপার্টি কনসালট্যান্টের চেয়ারম্যান অনুজ পুরীর মতে, ‘‘দামি হোটেলের ব্যবসা বেশি মার খাবে। বিদেশি পর্যটন, ব্যবসার কাজে আসা বিদেশিদের সংখ্যা কমবে। দেশে সস্তার হোটেল বা বিমান যাত্রায় বিপুল ছাড় দেওয়ার ফলে ব্যবসা ধরে রাখা যেতে পারে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন