নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
নোটবন্দির সময় বলেছিলেন, সিদ্ধান্ত ভুল প্রমাণিত হলে চৌরাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে মানুষের দেওয়া শাস্তি মাথা পেতে নেবেন। তার পরের দু’মাস আমজনতার দিন কেটেছে ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে। পরের কয়েক বছরে কাজ খুইয়ে, ব্যবসা হারিয়ে পথে বসেছেন বহু মানুষ। উদ্ধার হয়নি ‘কালা ধন’। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য চৌরাস্তার কথা আর তোলেননি। সেই তিনি করোনাভাইরাসের বিপদ নিয়ে প্রায় দু’মাস ধরে বিরোধীদের হাজারো সতর্কবার্তা উপেক্ষা করার পর চার ঘণ্টার নোটিসে গোটা দেশকে ঘরবন্দি করে দিয়েছেন। এ বারে তিনি নিশ্চিত, ‘বাধ্য হয়ে দেওয়া’ তাঁর এই নিদান আমজনতা নিশ্চয় ‘ক্ষমা’ করবেন।
যে আমজনতার কথা তিনি বলেছেন, তার বড় অংশ এখন উদভ্রান্তের মতো রাস্তায়। খাবার জলও জুটছে না অনেকের। রাজধানীর আনন্দ বিহার বাস ডিপোতে লাখো মানুষের ভিড়। হেঁটে ঘরে ফিরতে গিয়ে প্রাণান্ত। ২১ দিনের লকডাউন কার্যকর করার প্রস্তুতি কি আদৌ নিয়েছিল সরকার? প্রশ্ন বিভিন্ন মহলেই।
বিরোধীরা বলেন, এমনিতে মোদী কোনও সমালোচনাতেই কান দেন না। ক্ষমা চাওয়া তো দূর! লকডাউন শুরুর পাঁচ দিনের মাথায়, রেডিয়োর প্রথম ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে সেই ‘ক্ষমা’ই চাইলেন মোদী। বললেন, “সমস্ত দেশবাসীর কাছে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমার আত্মা বলছে, আপনারা নিশ্চয় ক্ষমা করবেন। এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে, যার জেরে আপনাদের হাজারো অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে।… বিশেষত অনেক গরিব ভাই-বোন নিশ্চয় ভাবছেন, এ কেমন প্রধানমন্ত্রী, যিনি আমাদের এত কঠিন পরিস্থিতির মুখে ঠেলে দিলেন!” একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ১৩০ কোটির দেশকে করোনার মতো অতিমারির হাত থেকে বাঁচাতে আর কোনও রাস্তা ছিল না।
বিরোধীদের প্রশ্ন, এমন ক্ষমার অর্থ কী? ঠিক কিসের জন্য ক্ষমা চাইলেন মোদী? আমজনতার সুরাহায় কোন দিশা দেখালেন? কংগ্রেস বলছে, ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে রাহুল গাঁধী দফায় দফায় সতর্ক করেছেন। অথচ বিজেপি তাঁকে বিদ্রুপ করতে আর মধ্যপ্রদেশে সরকার ভাঙতে ব্যস্ত ছিল। সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির দাবি, “পরিকল্পনা না-থাকায়, প্রস্তুতি শূন্য হওয়ায়, দরিদ্রদের দুর্দশার কথা ভেবে আগাম ব্যবস্থা না-নেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর সত্যিই ক্ষমা চাওয়া উচিত।” তা না করে প্রধানমন্ত্রী আজ ক্ষমার মোড়কে নিজেকে জনদরদি প্রমাণ করতে ব্যস্ত রইলেন বলেই বিরোধীদের দাবি।
এ দিন মোদী বলেন, যাঁরা বাড়ি থেকে না-বেরনোর নিয়ম এখনও মানছেন না, ভুল করছেন। “আগামী বেশ কিছু দিন নিয়ম মানতেই হবে। লক্ষ্মণরেখা পার হওয়া যাবে না।” করোনাযুদ্ধে উৎসাহ দিতে ওই রোগ থেকে সেরে ওঠা কয়েক জনের সঙ্গে ফোনে বলা কথা শুনিয়েছেন। বন্দিদশায় সুস্থ থাকার টোটকা হিসেবে নিজের শারীরিক কসরতের ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাগ করে নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।
কিন্তু বলেননি, লকডাউন ২১ দিনেই শেষ কি না। বলেননি, পণ্য পৌঁছনোর পথ কী ভাবে মসৃণ থাকবে? বলেননি থমকে যাওয়া দেশে কী ভাবে খাবার জুটবে দরিদ্রের পাতে? কী করে বজায় থাকবে রোজগার?
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)