Coronavirus

মোদীর দীপ-দাওয়াই: বিরোধীদের কটাক্ষই সার

বিরোধী নেতাদের বিশ্লেষণ, প্রধানমন্ত্রীর কথায় দেশের বড় অংশের মানুষ যে ভাবে রবিবার প্রদীপ-মোমবাতি জ্বালাতে এগিয়ে এসেছেন, তাতে স্পষ্ট— তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে অন্ধ ভাবে মানছেন।

Advertisement

প্রেমাংশু চৌধুরী

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০২০ ০৫:৪১
Share:

ছবি: এএফপি।

মুখে সমালোচনা করছেন। করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর রাত ৯টায় ৯ মিনিটের জন্য প্রদীপ-মোমবাতি জ্বালানোর দাওয়াই
নিয়ে বিদ্রুপ-কটাক্ষ করছেন। অতিমারির মোকাবিলায় প্রস্তুতিতে ফাঁক নিয়ে প্রশ্নও তুলছেন। কিন্তু দিনের শেষে নরেন্দ্র মোদী বাজিমাত করে চলে যাচ্ছেন বলে বিরোধীরা প্রমাদ গুনছেন।

Advertisement

বিরোধী নেতাদের বিশ্লেষণ, প্রধানমন্ত্রীর কথায় দেশের বড় অংশের মানুষ যে ভাবে রবিবার প্রদীপ-মোমবাতি জ্বালাতে এগিয়ে এসেছেন, তাতে স্পষ্ট— তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে অন্ধ ভাবে মানছেন। তাঁরা বিশ্বাস করছেন, মোদী যখন বলেছেন, এতে নিশ্চয়ই লাভ হবে। কংগ্রেসের এক প্রবীণ নেতা বলেন, “জনগণের মহাশক্তিকে জাগ্রত করার কথা বলে আসলে নিজের রাজনৈতিক শক্তিকেই বারবার জাগিয়ে তুলছেন মোদী। নিজেকে গুরুর পর্যায়ে তুলতে চাইছেন তিনি।”

কোনও দলই সরাসরি রবিবার প্রদীপ-মোমবাতি বা মোবাইলের ফ্ল্যাশ জ্বালানোর বিরোধিতা করেনি। তাঁদের আশঙ্কা, এতে আমজনতার কাছে ভুল বার্তা যেত। প্রধানমন্ত্রী সরাসরি জনতার উদ্দেশে বক্তৃতায় তাঁদের আত্মত্যাগ করতে বলছেন। নোট বাতিলে কষ্ট সহ্য করা বা রান্নার গ্যাসের ভর্তুকি ছেড়ে দেওয়ার আহ্বানেও একই কৌশল ছিল। কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, “এক সময় ইন্দিরা গাঁধীর এই ক্ষমতা ছিল। এখন মোদী নিজে করোনা-মোকাবিলায় কী করবেন, সেটা না-বলে জনতার অংশগ্রহণ চাইছেন। থালা বাজানো বা মোমবাতি জ্বালাতে বলে বোঝাতে চাইছেন, জনতাও বাড়িতে বসে এ ভাবে করোনা-মোকাবিলা করছে। মানুষও সরকারের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলার কথা
ভুলে মোমবাতি জোগাড়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। এখন উল্টো বললে আমজনতা চটে যাবে।” সিপিএমের এক নেতা বলেন, “এই কারণেই আমরা শুধু সরকারের গাফিলতির দিকটা ধরিয়ে দিচ্ছি।”

Advertisement

আরও পড়ুন: দীপের সঙ্গে উড়ল ফানুস, ফাটল দেদার বাজিও, ধৃত ৯৮

একই কৌশল নিচ্ছে কংগ্রেসও। রাহুল গাঁধী এ দিনও টুইটে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে চিকিৎসাকর্মীদের ভূমিকার প্রশংসা করে মন্তব্য করেছেন, যখাযথ সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়া তাঁরা নিজেদের প্রাণ বিপন্ন করেও কাজ করে চলেছেন। এর পরে একটি ছবি দিয়েছেন। তাতে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বাকি বিশ্বের অস্ত্র হিসেবে মাস্ক, হাতশুদ্ধি, দস্তানা এবং সাবানের ছবি আঁকা রয়েছে, আর ভারতের অস্ত্র হিসেবে দেখানো হয়েছে বাসন, প্রদীপ ও টর্চলাইটকে। অর্থাৎ প্রদীপ না-জ্বালানোর সরাসরি ডাক না-দিয়েও রাহুল বিষয়টির অসারতার যুক্তিটি তুলে ধরলেন। কংগ্রেস নেত্রী সুস্মিতা দেব করোনা-মোকাবিলা ব্যবস্থার ফাঁকফোকর নিয়ে ন’টি প্রশ্ন তুলেছেন। আবার বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী যখন চাইছেন, প্রদীপ জ্বালানোটা কর্তব্য। দেশের মানুষ সে কাজ করবেও। কিন্তু কেন্দ্র নিজের কর্তব্য পালন না-করলে শুধু প্রদীপ জ্বালিয়ে করোনা ভাইরাস মোকাবিলা অসম্ভব।”

এরই মধ্যে আজ কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এইচ ডি কুমারস্বামী প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন ছুড়েছেন, ৫ এপ্রিল রাত ৯টায় ৯ মিনিট প্রদীপ জ্বালানোর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা কি? কোনও লুকোনো উদ্দেশ্য নেই তো? ১৯৮০-র ৫ এপ্রিল জনসঙ্ঘ-পন্থীরা বিজেপি প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন। ৬ এপ্রিল বিজেপি প্রতিষ্ঠা হয়। কুমারস্বামীর প্রশ্ন, প্রধানমন্ত্রী কি চুপিসাড়ে দেশের মানুষকে সেটাই পালন করাচ্ছেন?

বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারও ডাক্তার-নার্সদের পিপিই-র অভাব নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁর অভিযোগ, ভেন্টিলেটরও মেলেনি। ৫ লক্ষ পিপিই চেয়ে চার হাজার মিলেছে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালও এ নিয়ে কেন্দ্রকে চিঠি লিখেছেন। আজ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকও কার্যত পিপিই কিটের অভাবের কথা মেনে নিয়ে বলেছে, রাজ্যগুলিতে যেমন সংক্রমণ ধরা পড়েছে, সেই অনুসারে কিট পাঠানো হচ্ছে। সিপিএমের সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, “আগাম সময় পেয়েও কেন্দ্রের এমনই প্রস্তুতি যে সব রাজ্যে পিপিই কিটের অভাব। কেন্দ্র শুধু প্রচার ও অনুষ্ঠানেই ব্যস্ত।”

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন