National News

৯-৯ এ মধুর খেলা! তোলপাড় সামাজিক মাধ্যম

প্রধানমন্ত্রী কী বলেন, তা নিয়ে জল্পনা ছিলই। তবে, সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে কার্যত মিলেছে অকাল-দীপাবলির নিদান।

Advertisement

সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০২০ ০৫:১৮
Share:

প্রধানমন্ত্রীর বার্তার পরে রঙ্গব্যঙ্গের স্রোত ফেসবুক-টুইটারে।

‘পুট আউট দ্য লাইট— শেক্সপিয়রের ‘ওথেলো’র কথা মনে পড়তেই পারে প্রধানমন্ত্রীর আলো নেভানোর পরামর্শ প্রসঙ্গে। একশো তিরিশ কোটি মনকে একই সূত্রে বাঁধার জন্য ৫ এপ্রিল রাত ৯টার সময় ৯ মিনিটের এই কৃৎকর্মের অনুরোধ। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী জ্বালাতে বলেছেন মোমবাতি, প্রদীপ বা মোবাইলের ফ্ল্যাশলাইট। উদ্দেশ্য— করোনাভাইরাসের প্রতিরোধে দেশ যে ঐক্যবদ্ধ, তা অনুভব করা। এর জেরে লকডাউনের মধ্যে নতুন করে জেগে উঠেছে দেশ।

Advertisement

প্রধানমন্ত্রী কী বলেন, তা নিয়ে জল্পনা ছিলই। তবে, সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে কার্যত মিলেছে অকাল-দীপাবলির নিদান। প্রধানমন্ত্রীর বার্তার পরে রঙ্গব্যঙ্গের স্রোত ফেসবুক-টুইটারে। এর আগে কাঁসর-ঘণ্টা-শাঁখ বা বাসন বাজানোর আহ্বানে ব্যান্ড-যোগে মিছিল বেরিয়েছিল। এ বার ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপে অন্য প্রশ্ন— রবিবার কি চন্দননগরের আলো নিয়ে শোভাযাত্রা? আগুনের পরশমণি হাতে মোমবাতি মিছিল?

এমনিতে প্রতীকী পদক্ষেপ ভালই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই ব্যবস্থাপত্র কি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সাহায্য করবে? ভাইরাস কি প্রতীকী ইঙ্গিত বুঝবে? ঘুরছে প্রশ্ন। নানা ছবির দৃশ্য দিয়ে তৈরি হয়েছে অজস্র মিম। দেখা যাচ্ছে, স্বাস্থ্যকর্মীরা ভাইরাস-নিরোধক পোশাকে দাঁড়িয়ে, তাতে লেখা ‘যে ভাবে সারা বিশ্ব ভাইরাস ঠেকাচ্ছে’। সঙ্গে প্রদীপ হাতে ঐশ্বর্য রাইয়ের ছবি, সঙ্গে লেখা ‘যে ভাবে আমরা ভাইরাস ঠেকাচ্ছি’। রয়েছে ‘নাগিন’ ছবির পোস্টার, যেখানে চরিত্রেরা টর্চ হাতে দাঁড়িয়ে। চুইংগামের বিজ্ঞাপনও উঠে এসেছে, যেখানে ঝকঝকে দাঁতের চন্দ্রপ্রভায় জ্বলে উঠছে অগণন দন্তরাজি, আলোয় ভরে উঠছে চারদিক! আবার এ মন্তব্যও ভাসছে— ‘দেশের হাতে হ্যারিকেন!’ শুক্রবার দিনভর টুইটারের ট্রেন্ডিং ছিল #মোদীভিডিয়োমেসেজ আর #৯বাজে৯মিনিট।

Advertisement

আরও পড়ুন: করোনা-সঙ্কটে আঁধার কাটাতে ৯ মিনিটের দীপাবলি!

পিছিয়ে নেই উল্টো শিবিরও। রয়েছে গেরুয়া শিবিরের আইটি সেলের পোস্টও। লেখা হয়েছে, ৫ এপ্রিল বামনদ্বাদশীতে পৃথিবী নাকি সব চেয়ে বেশি সূর্যালোক পায়, তাতে ভাইরাস সক্রিয় হয়, আলো ছুড়ে মারলে ভাইরাস খতম হয় এবং তাই প্রধানমন্ত্রী বড় আলো নিভিয়ে ‘ফোকাসড’ আলোর কথা বলেছেন। সেই আলোয় নাকি করোনাভাইরাসের ‘হৃৎপিণ্ড’ ভেঙে পড়বে। আর একটি পোস্টে ৫ এপ্রিল হয়ে গিয়েছে ৫ জানুয়ারি। সেখানে দাবি, করোনাভাইরাস হঠাৎ-অন্ধকার আর হঠাৎ-আলোর ঝলকানির সঙ্গে এঁটে উঠতে অপারগ। তাই ৫ তারিখ হঠাৎ-আঁধারে প্রথম ধাক্কাটা খাবে করোনাভাইরাস, পরক্ষণেই আচমকা আলোকের ঝরনাধারায় তাদের ‘রেটিনা-নার্ভ’ বিপন্ন হবে এবং ভাইরাস নিশ্চিহ্ন হবে। আর একটি পোস্টে ‘নাসা’র নাম করে দাবি করা হয়েছে, করোনাভাইরাস বেশি তাপমাত্রায় বাঁচতে পারে না এবং ১৩০টি (একশো তিরিশ কোটি?) মোমবাতি একসঙ্গে জ্বালালে তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি বেড়ে যাওয়ায় রবিবার রাত ৯টা ৯ মিনিটে করোনাভাইরাসের ইন্তেকাল ঘটবে।

নাসার প্রাক্তন বিজ্ঞানী তথা চলচ্চিত্রকার বেদব্রত পাইনের বক্তব্য, ‘‘যখন দেশবাসী অভিভাবকত্ব চাইছেন, তখন এই পরিহাস বিস্মিত করে! বেশি তাপমাত্রায় ভাইরাসের সমস্যা হয়। কিন্তু মোমবাতি জ্বালালেই ৯ ডিগ্রি বেড়ে যায় না। দীপাবলিতেও ৯ ডিগ্রি তাপমান বাড়ে না! রাষ্ট্রের কাজ সুখ-সুরক্ষা দেওয়া। তার বদলে এই সব হাস্যকর!’ মোম-ব্যবস্থা প্রসঙ্গে নাট্যব্যক্তিত্ব রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্তের মন্তব্য, ‘‘আমাদের একটু সাবালক মনে করলে খুব ভাল হত!’’

শেক্সপিয়রের চরিত্র বলেছিল— ‘পুট আউট দ্য লাইট, অ্যান্ড দেন পুট আউট দ্য লাইট: ইফ আই কোয়েঞ্চ দি, দাউ ফ্লেমিং মিনিস্টার...’! সেখানে দু’বার আলো নেভানোর কথা বলা হলেও দ্বিতীয় আলোটি জীবনপ্রদীপ। রয়েছে ‘মিনিস্টার’ শব্দটিও, যদিও তার সঙ্গে কোনও মন্ত্রীর সম্পর্ক নেই। আলোকপ্রভকে জীবন্ত করে তুলতে বা ‘পার্সোনিফাই’ করার কবিবয়ান। মহাকবির আর্ষ পুরনো হয় না। তাই ৫ এপ্রিল রাত ৯টায় হয়তো আবারও মনে পড়বে শেক্সপিয়রকে। অর্থগুলোও হয়তো নতুন অর্থ নেবে!

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন