National news

১৫ এপ্রিল থেকে সাত দিনের জন্য দূরপাল্লার ট্রেন চালানোর প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে রেল

১৪ এপ্রিলের পর থেকে সম্ভাব্য পরিষেবার জন্য রেলের প্রস্তুতি সারা। সব বিভাগের কর্মীদের তৈরি থাকতে বলা হয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ এপ্রিল ২০২০ ১৫:০৩
Share:

এই প্রস্তুতি শুধুই দূরপাল্লার ট্রেনের জন্য। ছবি: শাটারস্টক।

১৪ এপ্রিলের পর এক ধাক্কায় উঠছে না দেশজোড়া লকডাউন। বুধবার প্রধানমন্ত্রীর ডাকা সর্বদলীয় বৈঠক থেকে এমন ইঙ্গিত স্পষ্ট। তবে পরিস্থিতি বুঝে লকডাউন কোনও কোনও ক্ষেত্রে আংশিক প্রত্যাহার হবে কি না, তার ভাবনাচিন্তাও চলছে। সেই ভাবনা থেকেই, হঠাৎ-লকডাউনে দূরে আটকে পড়াদের জন্য ট্রেন চালানোর প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে ভারতীয় রেল। পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব রেলও রয়েছে এই তালিকায়। সম্ভাব্য পরিষেবার জন্য রেলের নানা বিভাগের কর্মীদের তৈরি থাকতে বলা হয়েছে।

Advertisement

তবে এই প্রস্তুতি শুধুই দূরপাল্লার ট্রেনের জন্য। পূর্ব রেল সূত্রে খবর, হাওড়া-শিয়ালদহ-সহ বিভিন্ন শাখায় সামান্য কয়েকটি লোকাল ট্রেন চালানোর প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হলেও, তা দরকার মতো শুধুমাত্র রেলকর্মী এবং বিশেষ অনুমতিপ্রাপ্তদের জন্য।

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় পূর্ব এবং দক্ষিণ-পূর্ব রেলের অনেক ট্রেনের কোচকেই আইসোলেশন কোচে পরিণত করা হয়েছে। সে জন্য সম্ভাব্য পরিষেবার ক্ষেত্রে প্রথম দিকে বেশ কিছু ট্রেন বাতিলের তালিকায় রাখা হয়েছে। যেমন ১৫ এপ্রিল বুধবার স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে হাওড়া থেকে পূর্ব রেলের ৩১টি মেল, এক্সপ্রেস, ইন্টারসিটি ট্রেন চলার কথা। বর্তমান পরিস্থিতিতে, ওই দিনের সম্ভাব্য তালিকায় ২১টি ট্রেন রেখে, বাকি ১০টি বাতিলের তালিকায় ঢুকিয়ে রাখা হয়েছে। ১৫ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত এমন তালিকা তৈরি করে রেখেছে পূর্ব রেল।

Advertisement

বিভিন্ন শাখায় চলছে দু’কামরার লোকাল ট্রেন। তবে শুধুমাত্র রেলকর্মী এবং বিশেষ অনুমতিপ্রাপ্তদের জন্য। —নিজস্ব চিত্র।

গত ২২ মার্চ থেকে আগামী ১৪ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে সমস্ত যাত্রিবাহী ট্রেন বন্ধ। ২১ মার্চ কেন্দ্র এই নির্দেশ দেওয়ার পরই, এই দিনগুলির জন্য টিকিট বুকিং বন্ধ হয়ে যায়। তবে ১৪ এপ্রিলের পরের মেল, এক্সপ্রেস, ইন্টারসিটি ট্রেনগুলির টিকিট এখন পাওয়া যাচ্ছে অন-লাইনে।

আরও পড়ুন: ‘এমন অবস্থায় মজবুত হয় বন্ধুত্ব’, ট্রাম্পকে বললেন মোদী

আদৌ কি ১৫ এপ্রিল ট্রেন চালানো সম্ভব হবে? এ ব্যাপারে রেলকর্তারা সংবাদ মাধ্যমে মুখ খুলতে নারাজ। কারণ গোটাটাই নির্ভর করছে সামনের ক’দিনের পরিস্থিতি এবং সরকারের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের উপর। এখানে শুধু কেন্দ্রীয় সরকারই নয়, আন্তঃরাজ্য ট্রেন চলাচল করতে গেলে রাজি করাতে হবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলিকেও।

আরও পড়ুন: ওড়িশা প্রথম, ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়াল লকডাউনের মেয়াদ

আগামী ১১ এপ্রিল, শনিবার, সকাল ১১টায় সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিয়ো বৈঠকে করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখান থেকেই ১৪ এপ্রিল পরবর্তী পদক্ষেপের রূপরেখা চূড়ান্ত হবে বলে ধরে নেওয়া যায়।

সমস্ত সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে রেল প্রস্তুত হয়ে থাকলেও, বাস্তব পরিস্থিতি তা কতটা অনুমোদন করবে তা নিয়ে ঘোর সন্দেহ রয়েছে রেলের শীর্ষকর্তাদের মধ্যেই। এক দিকে যেমন হঠাৎ-লকডাউনে দূরে আটকে পড়া মানুষদের সমস্যাটা রয়েছে, তার থেকে অনেক বড় আকারে রয়েছে করোনা সংক্রমণ ছড়াতে না দেওয়ার বিষয়টি। দেশে করোনা সংক্রমণ লাগামছাড়া না হলেও, এর বৃদ্ধির সংখ্যাটা নগন্য নয়। এ অবস্থায় আন্তঃরাজ্য যাতায়াত শুরু হয়ে গেলে নতুন করে বিপদ ঘটতে পারে।

প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন রেলকর্মীরা —নিজস্ব চিত্র।

বৃহস্পতিবার রেল মন্ত্রকের শীর্ষকর্তারা ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে কথা বলেছেন রেলের জেনারেল ম্যানেজারদের সঙ্গে। রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান ভিকে যাদব সেখানে জানিয়েছেন— কেন্দ্র গোটা দেশকে করোনা আক্রান্তের সংখ্যার বিচারে তিনটি জোনে ভাঙতে চাইছে। লাল (রেড), হলুদ (ইয়োলো) এবং সবুজ (গ্রিন)। রেড জোনে কোনও রকম যাত্রী-পরিবহণের প্রশ্ন নেই আপাতত। ইয়োলো জোনে নিয়ন্ত্রিত চলাচল হওয়া সম্ভব। এবং গ্রিন জোনে নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়া যেতে পারে।

তবে কোনও সিন্ধান্তই এখনও চূড়ান্ত নয়। নিয়ন্ত্রিত ট্রেন চলাচল শুরু হলেও কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব ভাবনাচিন্তায় রয়েছে:

১) ট্রেনের মধ্যেও যাত্রীদের মধ্যে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

২) থ্রি-টিয়ার স্লিপার বা এসি-তে কোনও মিডল বার্থ থাকবে না।

৩) সব স্টেশনে ঢোকার সময় থার্মাল স্ক্রিনিং।

৪) ৬০ বছরের বেশি বয়সি অর্থাৎ প্রবীণ নাগরিকদের এখনই ট্রেনযাত্রার অনুমোদন না দেওয়া।

৫) ট্রেনে মাস্ক পরে থাকা বাধ্যতামূলক। না পরলে জরিমানা বা অন্যান্য শাস্তি।

এত কিছু ভাবনাচিন্তার পরেও রেল বোর্ডের বড় অংশই মনে করছেন— যে হেতু কলকাতা ছাড়া দেশের প্রায় সব মেট্রো শহরই (দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, সেকন্দ্রাবাদ) সংক্রমণের নিরিখে বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে, তাই ৩০ এপ্রিলের আগে পরিষেবা চালু করা উচিত হবে না। এ ব্যাপারে রেলের সব পিএইচওডি (প্রিন্সিপাল হেড অব দ্য ডিপার্টমেন্ট) এবং ডিআরএম (ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার)-এর মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে।

রেল সূত্রে জানানো হচ্ছে, ১৫ এপ্রিল থেকে যাঁরা বিভিন্ন দূরপাল্লার ট্রেনের টিকিট কেটে রাখছেন, ট্রেন বাতিল হলে টিকিটের টাকা সরাসরি ফেরত চলে যাবে তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন