পুণের দম্পতি প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহার করে বাড়ি বানালেন। ধ্রুবং হিংমিরে ও প্রিয়ঙ্কা গুঞ্জিকর প্রথমে নিজের বাড়ি বানিয়েছিলেন সিমেন্ট ছাড়াই। পরে আরও ৬টি বাড়ি তৈরির বরাত পান।
মুম্বইয়ের এক আর্কিটেকচার ইনস্টিটিউশনে আলাপ হয় হবু স্ত্রী প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে, জানান ধ্রুবং। সেখানকার অধ্যাপক মালাক সিংহ গিলের থেকে ‘ইকো ফ্রেন্ডলি কালচার সেনসিটিভ’ বাড়ি তৈরির ভাবনা আসে তাঁদের মাথায়।
মুম্বই ও পুণের মাঝে থোরান গ্রামে বেসরকারি প্রকল্পের আওতায় বাড়ি বানাচ্ছেন স্থপতি যুগল।
চুন, নুড়িপাথর। ইটের গুঁড়ো, মাটি, কাদা দিয়ে বাড়ির একতলার মেঝে তৈরি হয় প্রথমে। সাত ফুটের পর ব্যবহার করা হয়েছে ইট আর ‘মাড মর্টার’।
বাড়িটিতে ব্যবহার হয়েছে কাঠও। সেগুন গাছের বদলে স্থানীয় একটি কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে। রয়েছে ছোট একটি চিলেকোঠা। আইন, হাউদু, জাম্বুল, শিভা, এ জাতীয় স্থানীয় গাছের কাঠ ব্যবহার করা হয়েছে বাড়ি নির্মাণে।
ক্লে রুফিং টাইলও ব্যবহার হয়েছে বাড়িটিতে। সিমেন্ট প্লাস্টারের বদলে চুনের প্লাস্টার ব্যবহার করা হচ্ছে নয়া প্রকল্পের বাড়িতে। কারণ এতে বাড়ি বেশি দিন ভাল থাকে।
চুন তাপকে ধরে রাখে গরম কালে, শীতে তাপ নির্গত করে দেয় বাইরে। তাপমাত্রা দিনে ধরে রাখে, রাতে নির্গত করে দেয়। তাই কাদা, পাথর, ইট, চুন সব মিলিয়ে গোটা বাড়িটা শ্বাস নিতে পারে, বলেন ধ্রুবং।
বাইরে ৩৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা থাকলে চুনাপাথর ব্যবহারের ফলে এই ঘরের তাপমাত্রা হবে ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চার মাস ধরে মূল কাঠামো তৈরি হয় বাড়ির। পরে সবটা বানাতে সময় লাগে আরও পাঁচ মাসের মতো, জানান প্রিয়ঙ্কা।
স্বর্ণপদক প্রাপ্ত প্রিয়ঙ্কা, ধ্রুবং কলেজ জীবনে মহারাষ্ট্রের খরাপ্রবণ এলাকা সাতারায় গিয়েছিলেন। এলাকার বাড়ির কাঠামোও লক্ষ্য করেন। কাদা মাটি দিয়ে তৈরি এক বৃদ্ধার বাড়ি নজরে আসে। যিনি বাড়ির নকশায় হাতের ভাঙা চুড়ি ব্যবহার করেছিলেন।
মাড বিল্ডিং, সাসটেনেবল আর্কিটেকচার নিয়ে পড়াশোনা করেন তাঁরা। আবহাওয়া অনুযায়ী বাড়ির নকশা তৈরি করতে হয়, এটাও তাঁরা বুঝতে পারেন। তাই কাঠ আর লাল ল্যাটেরাইট মাটি ব্যবহার শুরু করেন। (প্রতীকী ছবি)
কোঙ্কণ উপকূলের পাশে বাড়িগুলিকে প্রচুর হাওয়া ও ভূমিকম্প থেকে বাঁচাতে আরও বেশি কাঠের ব্যবহার করছেন তাঁরা। কাঠে কখনওই পালিশ ব্যবহার করেন না তাঁরা। কারণ এতে কাঠের ক্ষয় হয়। কাঠের আকারেও পরিবর্তন হয়। স্থানীয় মানুষদের নিয়েই কাজ করতে করতে তাঁদের থেকেই জেনেছেন এই স্থপতি দম্পতি।
পুণের ভোর জেলার একটা ফার্ম হাউস তৈরি করেছিলেন। এক পঞ্চায়েত প্রধানের থেকে বাড়ি তৈরির সরঞ্জাম নিয়ে বাড়ি পুর্নর্নিমাণের কাজও করেছেন তাঁরা। বাড়িতে আলো-বাতাস চলাচলের উপযুক্ত করতে হবে। মাটির বাড়িতে আলো প্রবেশ করে না, এই ধারণাকেও খারিজ করেছেন তাঁরা।