COVID-19 Deaths

Covid: দেশ ও রাজ্যে ক্রমশ কমছে দৈনিক সংক্রমণ, অথচ বাড়ছে দৈনিক মৃত্যু, হাইলি সাসপিশাস!

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় অনেক বেশি মারাত্মক এবং প্রাণঘাতী। ফলে সংক্রমণ কমলেও বেশি সংখ্যায় আক্রান্তের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ মে ২০২১ ১২:২০
Share:

কোভিডে মৃতদের দেহ সৎকার করা হচ্ছে গণচিতায়। ফাইল ছবি।

গত কয়েকদিন ধরেই দেশে করোনা সংক্রমণ কমছে। অথচ বাড়ছে দৈনিক মৃত্যু। পরিসংখ্যান বলছে, প্রায় একই অবস্থা পশ্চিমবঙ্গেও। জীবিত থাকলে সত্যজিৎ রায় সম্ভবত জটাযুকে দিয়ে নতুন উপন্যাস লেখাতেন। যার নাম হতে পারত ‘করোনার কারিকুরি’। আর নির্ঘাত বলাতেন, ‘‘হাইলি সাসপিশাস!’’

Advertisement

রহস্যজনক তো বটেই। ভারতে গত ২৪ ঘন্টায় করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন ২ লক্ষ ৬৭,৩৩৪ জন। মৃত্যু একদিনে সর্বোচ্চ— ৪,৫২৯। গত ১৩ মে দেশে সংক্রমিত হয়েছিলেন ৩ লক্ষ ৬২,৭২৭ জন। মৃত ৪,১২০ জন। পরদিন, ১৪ তারিখে সংক্রমিত ৩ লক্ষ ৪৩,১৪৪ জন। মৃত্যু হয়েছিল ৪,০০০ জনের। ১৭ মে সংক্রমিত হয়েছিলেন ২ লক্ষ ৮১,৩৮৬ জন। মৃতের সংখ্যা ৪,১০৬। রহস্য নয়?

পুরোপুরি না হলেও অনেকটা একই পরিস্থিতি পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও। সংক্রমণ কমছে। মৃত্যুর সংখ্যা সারা দেশের মতো না বাড়লেও কমেনি। গত কয়েকদিন প্রায় একই সংখ্যা রয়েছে রাজ্যের করোনায় মৃতের। গত ২৪ ঘন্টায় রাজ্যে আক্রান্ত হয়েছেন ১৯,৪২৮ জন। মৃত্যু হয়েছে ১৪৫ জনের। গত ১৩ মে রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ২০,৮৩৯ এবং ১৪ মে ২০,৮৪৬ জন। আর গত ২৪ ঘন্টায় ১৯,৪২৮ জন। অর্থাৎ, পরিসংখ্যান বলছে, রাজ্যেও সংক্রমণের পরিমাণ কমছে। রাজ্যে কোভিডে এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ মৃত্যু হয়েছে ১৬ এবং ১৭ তারিখ। ১৪৭ জন করে। যা দেখা যাচ্ছে, বাংলায়ও সংক্রমণের পরিমাণ কমছে। কিন্তু সেই তুলনায় মৃত্যু কমছে না। গোটা দেশের ক্ষেত্রে সেই চিত্রটা আরও স্পষ্ট।

Advertisement

গ্রাফিক—শৌভিক দেবনাথ।

এই রহস্যের কারণ কী?

স্বাস্থ্যক্ষেত্রের সঙ্গে জড়িত অভিজ্ঞ এবং ওয়াকিবহালদের প্রাথমিক ব্যাখ্যা, সংক্রমণ কোথায় কত হচ্ছে, তা একমাত্র জানা যাবে কোভিড পরীক্ষা করালে। পরীক্ষা করালে কোভিড পজিটিভ হলে তার নথিও থাকবে। অনেক ক্ষেত্রেই পরীক্ষা করানো হচ্ছে না। আবার পরীক্ষা করানো হলেও তা ঠিকমতো নথিভুক্ত করানো হচ্ছে না। কিন্তু মৃত্যুর ক্ষেত্রে তা নথিভুক্ত না করানোর কোনও উপায় নেই। ফলে সেই পরিসংখ্যান ঠিকঠাকই এসে পৌঁছচ্ছে। তার তথ্যপ্রমাণও থাকছে। চিকিৎসক মহলের একাংশের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকার অনেক ক্ষেত্রেই সংক্রমণের পরিমাণ কমিয়ে দেখাতে সচেষ্ট। ফলে সেই নথি নিয়ে অনেক ক্ষেত্রেই ‘কারিকুরি’ করা হচ্ছে। কিন্তু মৃত্যু নিয়ে তা করার জো নেই। ফলে দৈনিক সংক্রমণ কমছে। মৃত্যু বাড়ছে।

দ্বিতীয় একটি ব্যাখ্যা হল— করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় অনেক বেশি মারাত্মক এবং প্রাণঘাতী। ফলে সমষ্টিগত ভাবে সংক্রমণ কমলেও তা বেশি সংখ্যায় সংক্রমিত মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। তবে চিকিৎসকদের একটি অংশ মনে করছে, এই ব্যাখ্যা খানিকটা কষ্টকল্পিত হলেও হতে পারে। সংক্রমণ কমলে, মৃত্যু কমে— অতীতে এমনটাই দেখা গিয়েছে। ফলে দৈনিক সংক্রমণ কমছে অথচ দৈনিক মৃত্যু বেড়ে চলেছে— বিষয়টি খানিকটা অভিনব। তবে পাশাপাশিই চিকিৎসকেরা বলছেন, করোনা এবং তার বিভিন্ন প্রজাতি বা ধারা নিয়ে সারা পৃথিবী জুড়েই এখনও গবেষণা চলছে। হতে পারে দ্বিতীয় ঢেউ আসার পর এটি একটি নতুন ধারা বা প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যাতে সংক্রমণ এবং মৃত্যু বিপরীত দিকে চলতে পারে। তাঁদের কথায়, ‘‘এই প্রবণতা আরও কিছুদিন থাকলে তা সত্যিই গবেষণা করার মতো বিষয় হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন