এম বি রাজেশ এবং রাহুল গাঁধী।
কেমন আছো কমরেড! লোকসভার অলিন্দে হঠাৎ কুশল-প্রশ্ন শুনে চমকে গিয়েছিলেন তরুণ সাংসদ। সে দিনের আলাপচারিতা থেকে যা শুরু, ৬ বছর পরে সেটাই এখন এসে দাঁড়িয়েছে গভীর বন্ধুত্বে।
দু’জনে সমবয়সী। দু’জনেই লোকসভার সাংসদ। রাজনীতিতে যদিও বিপরীত মেরুতে। তবু সিপিএমের এম বি রাজেশ এখন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীর ঘনিষ্ঠতম বন্ধুদের এক জন। সেই ২০১১ সালে কেরলে বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজেশের সঙ্গে যেচে আলাপ করেছিলেন রাহুল। আর এখন রাজনীতির যে কোনও বড় বাঁকের মুখে দাঁড়াতে গেলেই দু’জনের আলোচনা অবশ্যম্ভাবী!
কংগ্রেস সভাপতি পদে বন্ধু রাহুলের আনুষ্ঠানিক অভিষেকে স্বভাবতই খুশি রাজেশ। যদিও কংগ্রেসের যা ভাঙা হাল, তাকে নিয়ে তরুণ সভাপতি কত দূর এগোতে পারবেন, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয়ী ডিওয়াইএফআইয়ের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি। রাজেশ বলছেন, ‘‘আমার আর রাহুলের রাজনৈতিক আদর্শ আলাদা। কিন্তু রাহুলকে যে ভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছে বিজেপি-সঙ্ঘ, সেটাকে একেবারেই সমর্থন করি না।’’
রাহুলের সভাপতিত্ব লাভে অভিনন্দন জানিয়েছেন সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। রাজেশের সঙ্গে রাহুলের সম্পর্ক নিয়েও দলের মধ্যে কেউ এখনও তির্যক প্রশ্ন তোলেনি। যা দেখেশুনে সিপিএমেরই একাংশ বলছে, সময় সত্যিই পরিবর্তন এনে দিয়েছে ভাবনাচিন্তায়। রাহুলের বাবা, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গাঁধী তাঁকে পছন্দ করতেন বলে এই সিপিএমেই তো বিপাকে পড়তে হয়ছিল সাংসদ সৈফুদ্দিন চৌধুরীকে!
কংগ্রেস এবং কমিউনিস্ট পার্টির দুই তরুণ নেতার সম্পর্কের সূচনা একটা রাজনৈতিক চর্চাকে ঘিরেই। সেই ২০১১-র আলাপে রাহুল জানতে চেয়েছিলেন, কেরলে বিধানসভা ভোটে কী হবে? রাজেশ বলেছিলেন, প্রতি পাঁচ বছরে সরকার পরিবর্তনের ধারায় এ বার পরিবর্তন হবে। ক্ষমতায় ফিরবে এলডিএফ-ই। দক্ষিণী রাজ্যের বাকি সাংসদেরা সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছিলেন। ভোটের ফল বেরোতে দেখা গিয়েছিল, কান ঘেঁষে ক্ষমতা পেয়েছে রাহুলের কংগ্রেস। ফল ৭২-৬৮! রাহুল ভোলেননি রাজেশের বিশ্লেষণ। গত লোকসভা ভোটে বিরোধীদের বিপর্যয়ের পরেও সংসদ থেকে ডেকে নিয়ে রাজেশের সঙ্গে আড়াই ঘণ্টা আলোচনা করেছেন।
আরও পড়ুন: দু’দশকের স্মৃতি বেয়ে বিদায় সনিয়া গাঁধীর
রাজেশের কথায়, ‘‘এখন সংসদে দু’জনেই বিরোধী আসনে থাকায় সুবিধা হয়ে গিয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিবাদ করতে পারি। রাহুলও রাজনীতিতে এখন আগের চেয়ে বেশি গা ঘামায়।’’ রাজেশের মতো না হলেও তামিলনা়ড়ুর কানিমোড়ির সঙ্গেও সনিয়া-তনয়ের ব্যক্তিগত সম্পর্ক বেশ ভাল। সুযোগ পেলেই ডিএমকে সাংসদের কাছ থেকে ওই রাজ্যের খবর নেন রাহুল। তাঁর অভিষেকে সোস্যাল মিডিয়ায় অভিনন্দন জানিয়েছেন কানিমোড়িও।
দিনকয়েক আগেই ঘূর্ণিঝড় ‘অক্ষি’তে বিপর্যস্ত মৎস্যজীবীদের পাশে দাঁড়াতে কেরলে গিয়েছিলেন রাহুল। প্রশ্ন তুলেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উদাসীনতা নিয়ে। সমর্থন করেছিলেন রাজেশেরা। চাপে পড়ে বা অন্য যে কারণেই হোক, নরেন্দ্র মোদী কাল, মঙ্গলবার কেরলে যেতে পারেন। রাজেশেরা ভাবছেন, রাহুলের চাপে একটু তো কাজ হল!