কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের প্রশ্নে সীতারাম ইয়েচুরিরই পাশে দাঁড়াল সিপিআই নেতৃত্ব। বিজেপিই এখন প্রধান শত্রু। তার বিরুদ্ধে অন্য সব ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক দলগুলির সঙ্গে হাত মেলাতে হবে। যার মধ্যে অবশ্যই থাকবে কংগ্রেসও। এমনটাই সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে সিপিআইয়ের জাতীয় পরিষদ। দিল্লিতে শুক্রবার থেকে বাম শরিক দলের এই সর্বোচ্চ কমিটির বৈঠক শুরু হয়েছে। শেষ হবে রবিবার। পশ্চিমবঙ্গে হারের প্রেক্ষিতে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের রণকৌশল ঠিক কি না তা বিশ্লেষণ করার জন্যই ডাকা হয়েছে বৈঠক। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির রিপোর্টে জোটের সমালোচনা করেই রিপোর্ট দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, এই জোটের ফলে কংগ্রেস লাভবান হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে সিপিএম ও অন্য দলগুলির। বামেরা কংগ্রেসের ভোট পেয়েছে। কিন্তু কংগ্রেসের ভোট বামেদের ঝুলিতে আসেনি। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করতে গিয়ে বাম শরিক দলগুলিকে নিজেদের আসন ছাড়তে হয়েছে। তার ফলে তাদেরও শক্তি কমেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সিপিআই কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছে, জাতীয় রাজনীতির কথা ভেবে কংগ্রেসের সঙ্গেই হাত মেলাতে হবে।
যদিও পশ্চিমবঙ্গের স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নেতারা যুক্তি দিয়েছিলেন, কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে আসলে রাজ্যে কংগ্রেসকেই বাঁচিয়ে তোলা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সম্পাদক প্রবোধ পাণ্ডাও এই যুক্তি মেনে নিয়ে বলেন, সব রাজ্যের পরিস্থিতি এক নয়। সব রাজ্যে বামেদের শক্তিও এক রকম নয়। পশ্চিমবঙ্গে মোদী সরকারের আর্থিক নীতি বা বিদেশি লগ্নির প্রশ্নে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলানো চলবে না। কিন্তু তৃণমূলের হামলার বিরুদ্ধে কংগ্রেস বা অন্য দলগুলিকে পাশে রাখা দরকার। কিন্তু জাতীয় রাজনীতিতে মোদী সরকার তথা বিজেপির বিরুদ্ধে একা লড়াইয়ের শক্তি যে বামেদের নেই, তা সকলেই মেনে নেন।
সিপিআই নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত হল, জাতীয় রাজনীতিতে মোদী সরকার আর পাঁচটা সরকারের মতো নয়। এই সরকার আরএসএস-এর কথায় চলছে। সমস্ত সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে নিজেদের কর্তৃত্ব ও মতাদর্শ কায়েম করার চেষ্টা করছে। তার বিরুদ্ধে লড়তে হলে কংগ্রেস-সহ সব গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ দলকে পাশে নেওয়া দরকার। প্রকাশ কারাটের বিরোধিতা সত্ত্বেও সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও দলকে এই পথেই নিয়ে যেতে চাইছেন। একই যুক্তি দিয়েছেন ইতিহাসবিদ ইরফান হাবিবও। ঘটনাচক্রে ইয়েচুরি আজ সন্ধেয় একটি অনুষ্ঠানে সিপিআইয়ের সদর দফতর অজয় ভবনে গিয়েছিলেন। তত ক্ষণে তাঁর পথেই সিলমোহর বসিয়ে দিয়েছে সিপিআই।