খাটিয়া নিয়ে বাড়ির পথে।
সবে মাত্র শেষ হয়েছে রাহুল গাঁধীর সভা। সমবেত জনতা ঝাঁপিয়ে পড়ল প্রেস এনক্লোজারের পাশের তাঁবুটার উপর। বড়জোড় মিনিট কুড়ি। তার মধ্যেই উড়ে গেল ৫০ কিলোগ্রাম লাড্ডু, কয়েক হাজার মিনারেল ওয়াটারের বোতল এবং আরও অনেক খাবার-দাবার!
সভার আয়োজকরা অবস্থা দেখে থ! কিন্তু চিত্রনাট্যের শেষ সেখানেই নয়। খাওয়ার পর ঘুমও তো জরুরি। তার জন্য বিছানাও চাই। অতএব কংগ্রেস সহ-সভাপতির সভাস্থলে বিছিয়ে রাখা খাটিয়া তুলে নিতে শুরু কর জনতা। কেউ হাতে নিয়ে, কেউ বগলদাবা করে, কেউ মাথায় চড়িয়ে ছুটলেন নিজের নিজের বাড়ির দিকে। লুঠ হয়ে গেল দু’হাজার খাটিয়া!
উত্তরপ্রদেশের দেওরিয়ায় রাহুল গাঁধীর ‘খাটসভা’ এ ভাবেই খাটিয়া লুঠের উৎসবে পরিণত হল মঙ্গলবার।
উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারাভিযানে মঙ্গলবার থেকেই পুরোদমে নেমে পড়লেন রাহুল। আড়াই হাজার কিলোমিটারের বিশাল ‘যাত্রা’ কর্মসূচি নিয়েছেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি। ৪০৩টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ২২৩টিকে ছুঁয়ে যাবে রাহুলের এই যাত্রা। দেওরিয়ায় ‘খাটসভা’র মধ্য দিয়েই মঙ্গলবার সেই কর্মসূচির সূচনা হল। উত্তপ্রদেশের গ্রামঞ্চলে খাট সভা বেশ পরিচিত দৃশ্য। গ্রামীণ বিষয়ে বা বিভিন্ন সামাজিক ইস্যুতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য খাটিয়া পেতে বৈঠকে বসেন গ্রামের প্রবীণরা। তাকেই খাটসভা বলা হয়।
এ ভাবেই সাজানো হয়েছিল সভাস্থল।
ঠিক সেই ধাঁচেই এ বার রাজনৈতিক সভা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস। গ্রামে গ্রামে গিয়ে কৃষকদের নিয়ে খাটসভায় বসবেন রাহুল, তেমনই পরিকল্পনা হয়েছে। দেওরিয়াতে খাট সভা উপলক্ষে কাঠ আর দড়ি দিয়ে তৈরি হাজার দু’য়েক খাটিয়া পাতা হয়েছিল। আরও কিছু খাটিয়া ছিল লোহার। সভা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ভিড় হামলে পড়ে খাবারের তাঁবুতে। মিষ্টি, লাড্ডু, মিনারেল ওয়াটারের বোতল নিমেষে শেষ হতেই কয়েক জন খাটিয়া তুলে নিয়ে বাড়ির পথে হাঁটতে শুরু করেন। তাঁদের দেখাদেখি বাকিরাও ঝাঁপিয়ে পড়েন খাটিয়ার উপর। খাটিয়ার সংখ্যার চেয়ে সভা আসা মানুষের সংখ্যা স্বাভাবিক ভাবেই বেশি ছিল। তাই কাড়াকাড়িও চলতে থাকে। সব মিলিয়ে সভা শেষ হওয়া আধ ঘণ্টার মধ্যে রাহুলের যাত্রার জন্য মজুত খাবার, জল এবং সভাস্থলে রাখা ২০০০ খাটিয়া উধাও হয়ে যায় মাঠ থেকে। যে খাটিয়াগুলি লোহার তৈরি ছিল ছিল, ওজন বেশি হওয়ায় সেগুলি লুঠ হয়নি। তা ছাড়া সবই লুঠ হয়ে গিয়েছে অবাধে।
আরও পড়ুন: ওবামাকে ‘মা’ তুলে গালি দিয়ে ক্ষমা চাইলেন ফিলিপিন্সের প্রেসিডেন্ট
‘খাটসভা’র অভিনব পরিকল্পনা করেছেন উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে কংগ্রেসের স্ট্র্যাটেজিস্ট প্রশান্ত কিশোর। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে নরেন্দ্র মোদীর ‘চায়ে পে চর্চা’র পরিকল্পনাও এই প্রশান্তেরই ছিল। সে কৌশল সাফল্য পেয়েছিল। পরে বিহার বিধানসভা নির্বাচনে নীতীশ কুমারের স্ট্র্যাটেজিস্ট হিসেবে কাজ করেও অভূতপূর্ব সাফল্য পেয়েছেন প্রশান্ত। ২৭ বছর ধরে উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতার বাইরে থাকা কংগ্রেস এ বারের নির্বাচনে ভাল ফল করতে মরিয়া। প্রশান্ত কিশোরকে সঙ্গে নিয়ে ময়দানে নেমেছে রাহুল ব্রিগেড। অভিনব কর্মসূচিতে ভিড় হয়েছিল ভালই। রাহুল গাঁধী তীব্র আক্রমণ করেন নরেন্দ্র মোদীকে। তিনি বলেন, ‘‘ক্ষমতায় আসার আগে কৃষকদের অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর খুব দ্রুত ভুলে গিয়েছেন কৃষকদের।’’ সভার চেহারা জমজমাটই ছিল। কিন্তু সভা শেষ হতেই যে কাণ্ড ঘটল, তা পরবর্তী খাটসভাগুলি নিয়ে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে কংগ্রেসকে।