ওদের মাত্র চল্লিশ দিন বয়স। মাকে হারিয়ে অথৈ জলে পড়েছিল বেচারারা। হয়তো বাঁচানোই যেত না। তাই ‘খেলনা-মা’ এনে ওদের সামলানোর চেষ্টা করেছেন বান্ধবগড় ব্যাঘ্র প্রকল্প কর্তৃপক্ষ।
এখন তিন শাবকের কাছে খেলনা মা-ই সব। দুধ খাওয়া থেকে শুরু করে মায়ের আদর, সবই তারা পাচ্ছে খেলনা-মায়ের কাছে। খেলনা-মা যে তাদের আসল মা নয়, সেটা বুঝতেও পারেনি ছানারা।
কী ভাবে হলো এই অসাধ্য সাধন?
বান্ধবগড় ব্যাঘ্র প্রকল্পের অধিকর্তা মৃদুল পাঠক বলেছেন, ‘‘শাবকগুলো জন্মায় ৪০ দিন আগে। ওদের মাকে মেরে ফেলা হয়েছিল। শাবকদের খুঁজে পাওয়ার পরে জঙ্গলের মধ্যেই একটি খাঁচায় ওদের ভরে রাখা হয়েছে। তার মধ্যে বিশেষ ভাবে তৈরি নকল একটি বাঘিনীকেও রাখা হয়েছে। ছানাদের সঙ্গে মানুষের সংযোগ যত কম রাখা যায়, তার জন্যই এই ব্যবস্থা।’’ তুলো আর ফোম দিয়ে তৈরি বাঘিনীর দেহ থেকে বাচ্চারা যাতে দুধ টানতে পারে, রাখা হয়েছে সেই ব্যবস্থাও। বাঘিনীর শরীরের মধ্যে লুকনো রয়েছে দুধের বোতল। মৃদুল বলছেন, ‘‘প্রথম দিকে ইতস্তত করলেও এখন দিব্যি খেলনা মায়ের কাছ থেকে দুধ খাচ্ছে ছানারা। মা মনে করে আনন্দে খেলাও করছে তার সঙ্গে।’’
তা ছাড়া খেলনা-মাকে সত্যিই যাতে ছানাদের নিজের মায়ের মতো মনে হয় তার জন্য তার গায়ে ঘাস এবং বাঘের মলের গন্ধও দেওয়া হয়েছে। এতেই ম্যাজিকের মতো কাজ হয়েছে।
প্রথম দিকে হাতে বোতলভরা দুধ নিয়ে শাবকদের খাওয়াচ্ছিলেন বনকর্মীরাই। তবে এখন দুধের বোতল খালি হয়ে গেলে মাঝে মধ্যেই খেলনা মাকে ছানাদের কাছ থেকে সরিয়ে এনে দুধ ভরতে হচ্ছে বনকর্মীদের। মৃদুলরা এখন চাইছেন সেটাও বন্ধ করে দিতে। কোনও পাইপের মাধ্যমে সরাসরি ওই নকল বাঘিনীর শরীরে রাখা বোতলে দুধ পৌঁছে দেওয়ার কথা ভাবছেন তাঁরা। এতে ‘মা’কে কখনওই ছেড়ে থাকতে হবে না ছানাদের।
এই ছানাদের মায়ের দেহ গত ১৯ জানুয়ারি জঙ্গলের বাইরে খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। মধ্যপ্রদেশের শাদোল জেলা থেকে ১২৫ কিলোমিটার দূরে প়ড়েছিল সেই বাঘিনীর দেহ। তাকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করে মারার অভিযোগে এক সপ্তাহ পরে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়।