সাগরে বসে হুদহুদের হুঙ্কার, ত্রস্ত উপকূল

শেষ মুহূর্তে অভিমুখ বদল। তাতে আন্দামান বেঁচে গেল। অন্য দিকে ডাঙার ছোঁয়া এড়ানোয় শক্তি অটুট রইল ঘূর্ণিঝড় হুদহুদের। ফলে অন্ধ্র-ওড়িশার আশঙ্কা বাড়ল। সপ্তাহশেষে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টির সম্ভাবনাও জোরদার হয়েছে। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস মেনে আন্দামান সাগরের অতি গভীর নিম্নচাপ বুধবার দুপুরে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। ‘হুদহুদ’ নাম পাওয়া সেই ঘূর্ণিঝড়ের আশপাশের বায়ুপ্রবাহের রকম-সকম দেখে আবহবিদেরা মনে করছেন, সেটি ক্রমশ প্রবল ঘূর্ড়িঝড়ের চেহারা নিতে পারে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৪ ০২:২৪
Share:

শেষ মুহূর্তে অভিমুখ বদল। তাতে আন্দামান বেঁচে গেল। অন্য দিকে ডাঙার ছোঁয়া এড়ানোয় শক্তি অটুট রইল ঘূর্ণিঝড় হুদহুদের। ফলে অন্ধ্র-ওড়িশার আশঙ্কা বাড়ল। সপ্তাহশেষে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টির সম্ভাবনাও জোরদার হয়েছে।

Advertisement

হাওয়া অফিসের পূর্বাভাস মেনে আন্দামান সাগরের অতি গভীর নিম্নচাপ বুধবার দুপুরে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। ‘হুদহুদ’ নাম পাওয়া সেই ঘূর্ণিঝড়ের আশপাশের বায়ুপ্রবাহের রকম-সকম দেখে আবহবিদেরা মনে করছেন, সেটি ক্রমশ প্রবল ঘূর্ড়িঝড়ের চেহারা নিতে পারে। এ দিন রাতে হুদহুদের কেন্দ্রস্থলে বাতাসের যা গতিবেগ হাওয়া অফিসের নজরে এসেছে, তাতে রবিবার নাগাদ তার অন্ধ্র-ওড়িশা উপকূলে পৌঁছে যাওয়ার কথা। কিন্তু পথে আরও দেরি হলে হুদহুদ শেষমেশ অতি-প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে (গতিবেগ ঘণ্টায় ১১৮ কিলোমিটারের বেশি) পরিণত হতে পারে বলে আবহবিদদের অনুমান।

এবং সে ক্ষেত্রে স্থলভূমির যেখানে তা আছড়ে পড়বে, সেখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা। বস্তুত এখন পর্যন্ত হুদহুদের যা অভিমুখ, তাতে অন্ধ্র-ওড়িশা উপকূল তার নিশানা হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা। ঝড়ের প্রভাবে পশ্চিমবঙ্গের তটবর্তী অঞ্চলে প্রবল বৃষ্টি হতে পারে। প্রসঙ্গত, গত বছর ১২ অক্টোবর ওড়িশার গোপালপুর তটে আছড়ে পড়েছিল যে পিলিন, সে-ও ছিল অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়। তারও উৎপত্তি হয়েছিল আন্দামান সাগরে। উপরন্তু হাওয়া অফিস জানিয়ে রেখেছে, বছরের এই সময়টায় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অধিকাংশ ঘূর্ণিঝড়েরই অভিমুখ থাকে অন্ধ্র-ওড়িশার দিকে।

Advertisement

অতএব সিঁদুরে মেঘ দেখছে অন্ধ্র-ওড়িশা। হুদহুদের চালচলন এখন কী রকম?

মৌসম ভবনের খবর: এ দিন দুপুরে গভীর নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরের পরে সেটি আন্দামানের স্থলভূমির দিকে না-গিয়ে লং আইল্যান্ডের গা ঘেঁষে আন্দামান পেরিয়ে ফের চলে এসেছে বঙ্গোপসাগরের দিকে। আন্দামান অতিক্রমের সময় তার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০-৯৫ কিলোমিটার। এ দিন রাতে গতিবেগ বেড়ে ঘণ্টায় একশো কিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। মৌসম ভবনের ঘূর্ণিঝড়-বিজ্ঞানীদের পূর্বাভাস, আজ, বৃহস্পতিবার ভোরে হুদহুদ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের চেহারা নিয়ে উত্তর-পশ্চিমে, অর্থাৎ অন্ধ্র-ওড়িশা উপকূলের দিকে রওনা হতে পারে। আবহবিজ্ঞানীরা এ-ও জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগরের উপরে এখন জলীয় বাষ্পের আধিক্য। সাগর-যাত্রার গোটা পথটায় সেই জলীয় বাষ্প টেনে টেনে শক্তি বাড়াবে হুদহুদ। পরিণামে তা প্রবল থেকে অতি-প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার প্রভূত সম্ভাবনা।

এবং আবহবিজ্ঞানীদের প্রাথমিক অনুমান, বর্তমান গতি-প্রকৃতি বজায় রাখলে অতি-প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি অন্ধ্রের বিশাখাপত্তনম থেকে ওড়িশার গোপালপুর এই বিস্তীর্ণ তটভূমির কোথাও না কোথাও আছড়ে পড়বে। যার জেরে পশ্চিমবঙ্গে বিশেষ বিপর্যয়ের আশঙ্কা এখনই না-দেখলেও এ রাজ্যের উপকূলবর্তী জেলাগুলোয় রবি-সোমবার নাগাদ ভারী বর্ষণ হতে পারে বলে আবহবিদেরা মনে করছেন। অন্ধ্র-ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূল জুড়ে ইতিমধ্যে সতর্কতা জারি হয়েছে। মৎস্যজীবীদের গভীর সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। যাঁরা গিয়েছেন, তাঁদের বলা হয়েছে শুক্রবারের মধ্যে ফিরে আসতে। তৈরি রাখা হচ্ছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে।

অন্য একটা সম্ভাবনাও অবশ্য আছে। আবহবিদদের কেউ কেউ বলছেন, সমুদ্রে গতি কমিয়ে ফেললে হুদহুদ সাগরেই বিলীন হয়ে যেতে পারে। ঠিক যে ভাবে গত বছর অক্টোবর-নভেম্বরে বঙ্গোপসাগরের তিনটি ঘূর্ণিঝড় (হেলেন, লেহর, মাদি) সমুদ্রে নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তারা উপকূলে এসে আঘাত করেনি।

তবে যা-ই হোক না কেন, বঙ্গোপসাগরের এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা বিদায় কিছুটা পিছিয়ে যাবে। আলিপুর আবহাওয়া অফিসের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথের অন্তত তেমনই অভিমত। তাঁর বক্তব্য, সনাতনী ঋতু-ক্যালেন্ডার মানলে বুধবার, অর্থাৎ ৮ অক্টোবরেই বর্ষার দক্ষিণবঙ্গ ছাড়ার কথা। কিন্তু গত ক’বছর ধরে নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটছে। গত বার পিলিনের জেরে দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা দীর্ঘায়িত হয়েছিল। তার বিদায় নিতে নিতে গড়িয়ে গিয়েছিল অক্টোবরের প্রায় পুরোটা।

এ বারও তা-ই হতে পারে বলে জল্পনা শুরু হয়েছে আলিপুরের অন্দরে। সৌজন্য, হুদহুদ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন